বাংলাদেশের নয়, চীনের ২৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

সম্প্রতি, ২৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

নিষেধাজ্ঞা

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)  এবং পোস্ট (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি বাংলাদেশের ২৫ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়নি বরং গত ০৩ অক্টোবর চীনের ২৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

গুজবের সূত্রপাত

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে কোন দেশের ঘটনা তা উল্লেখ না করে ২৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া সংক্রান্ত সমজাতীয় শিরোনামে দেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত আলোচিত সংবাদটি খুঁজে পাওয়া যায়।

এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন কালবেলা, সমকাল, যুগান্তর, বাংলানিউজ ২৪, বাংলাভিশন, দেশ রুপান্তর, ঢাকা পোস্ট, পূর্বপশ্চিম, সাম্প্রতিক দেশকাল, বাংলা ইনসাইডার, সোনালি নিউজ

প্রতিবেদনগুলোর বিস্তারিত অংশে বলা হয়, চীনের ২৫ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত ০৩ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বেদনানাশক বা চেতনানাশক ওষুধ ফেনটানাইল উৎপাদনে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। চীনের ১২ প্রতিষ্ঠান, ১৩ ব্যক্তি ছাড়াও কানাডার দুটি প্রতিষ্ঠান ও এক ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের ওয়েবসাইটে গত ০৩ অক্টোবর প্রকাশিত এ সংক্রান্ত আলোচিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি খুঁজে পাওয়া যায়, যার সাথে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলোর মিল রয়েছে।

Screenshot: U.S. Department of The Treasury

একই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দেখুন BBC NEWS, AP, REUTERS, FINANCIAL TIMES। 

কিন্তু দেশীয় কতিপয় গণমাধ্যমের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের শিরোনামে স্থান বা দেশ উল্লেখ না থাকায় সেই সংবাদটির লিংক গণমাধ্যমগুলোর ফেসবুক পেজে প্রকাশের পর শুধু শিরোনাম দেখে পাঠকরা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে ধরে নিয়েছেন, বাংলাদেশ কেন্দ্রিক মন্তব্যও করেছেন, যা স্পষ্ট বিভ্রান্তির শামিল। এমন কয়েকটি কমেন্ট দেখুন-

Facebook Comment Collage by Rumor Scanner

অর্থাৎ, চীনের ২৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বাংলাদেশের কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেশের নাম উল্লেখ না করায় বিষয়টি বাংলাদেশের ২৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

এছাড়া, ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যের বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে গত ০৩ অক্টোবর ‘তলেতলে সবার সঙ্গে আপস হয়েছে, যথাসময়ে নির্বাচন: ওবায়দুল কাদের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ০৩ অক্টোবর তলেতলে সবার সঙ্গে আপস হয়ে গেছে জানিয়ে নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘তলেতলে আপস হয়ে গেছে। আমেরিকার দিল্লিকে দরকার। দিল্লি আছে, আমরাও আছি। শেখ হাসিনা সবার সঙ্গে ভারসাম্য করে ফেলেছেন। আর কোনো চিন্তা নেই। যথাসময়ে নির্বাচন হবে।’

পরবর্তীতে ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের পর চীনের ২৫ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সংবাদে দেশটির নাম উল্লেখ না করে প্রচার করায় বিষয়টি নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

পাশাপাশি, গণমাধ্যম বা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে বাংলাদেশের ২৫ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, বেদনানাশক বা চেতনানাশক ওষুধ ফেনটানাইল উৎপাদনে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ০৩ অক্টোবর চীনের ২৫ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। পরবর্তীতে বাংলাদেশের কতিপয় গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদের  শিরোনামে দেশটির নাম উল্লেখ না করায় বিষয়টি নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এরপরই বিষয়টি বাংলাদেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তিতে ভিসা নীতির আওতায় নিষেধাজ্ঞায় পড়া ব্যক্তিদের নাম বা তালিকা প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, চীনের ২৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞার একটি খবরকে বাংলাদেশে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img