শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সেনাপ্রধানের যুদ্ধ ঘোষণার গুজব

সম্প্রতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য, টকশোতে এসে হাসিনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো সেনাপ্রধান- শীর্ষক শিরোনাম ও প্রায় সমজাতীয় তথ্যে থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটিতে সঞ্চালক প্রশ্ন করেন ‘সেনাবাহিনী বিদেশের শান্তি রক্ষা করছেন আমাদের নির্বাচনে সেনাবাহিনী শান্তি রক্ষা করতে পারবে কি না? 

এই প্রশ্নের উত্তরে সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে বলতে শোনা যায়, অবশ্যই পারবে। 

পরবর্তীতে একজন বক্তাকে বলতে শোনা যায়, জ্বি এটা পাবলিক প্রসিকিউটর। তার কতবড় দুঃসাহস হয় সেনাবাহিনীকে কুত্তার বাচ্চা,  শুয়োরের বাচ্চা বলে গালি দিতে। ধন্যবাদ সেনাপ্রধান, সেনাবাহিনীটাকে আজকে এতো নিচু পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য। 

এরপর আবারও এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, উনি অত্যন্ত ক্লিয়ার টার্মসে এটি বলেছে এবং কিন্তু সারা জাতি এটি শুনেছে। আমাদের যদি নিয়োগ করা হয় আমরা সবসময়ের মত এবারও অত্যন্ত সৎভাবে, নিরপেক্ষভাবে এবং আমাদের পেশাগত যে দক্ষতা আছে সেটাকে এক্সিভিট করে আমরা অবশ্যই, আমরা এটা বারেবারে করেছি বলেই তো মানুষের প্রত্যাশাটা এসেছে।। সবাই চাচ্ছে। আমরা পারবো বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমাদের সেই পেশাগত দক্ষতা আছে… নির্বাচন সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া… নির্বাচন কন্ডাক্টর করা… 

তারপর সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদিনকে বলতে শোনা যায়, আপনার যদি যুদ্ধ করতে চান আসুন যুদ্ধ করি। আপনার এক হাজার দুই হাজার তিন হাজার লোক নিয়ে এ-কটা অস্ত্র নিয়ে আমাদের সাথে যদি যুদ্ধ করতে চান আধাঘন্টাও টিকতে পারবেন না। আমরা সেনাবাহিনী, পুলিশ আনসার, বিজিবি মিলে আমরা যারা আছি তাদের সাথে আপনারা ত্রিশ মিনিট যুদ্ধ করেন। আসেন আমরা জায়গা ঠিক করি এবং নিজেদেরকে আমাদের হাতে সপোর্দকরেন। আর না হলে যেকোনো মূল্যে আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে আামাদের আপনাদের বিরুদ্ধে যেকোনো রকম সেক্রিফাইজ করা প্রয়োজন, যেকোনো প্রকার আত্মদান করা প্রয়োজন তা করতে প্রস্তুত আছি। আমরা আত্মদান করেছি, আমরা এখানে রক্ত দিয়েছি, আমরা আরও রক্ত দেব। আপনাদেরকে আপনাদের এই হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে কখনোই সফল হতে দেব না।… 

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রধান  

এই প্রশ্নের উত্তরে সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদেরযুদ্ধ ঘোষণা করার দাবিটি মিথ্যা বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ৪ নভেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২ মিনিট ১১ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি প্রচার করা হয়। 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ ও ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও, যেখানে সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদিনকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

তবে বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর “সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি টকশো খুঁজে পাওয়া যায়।

টকশোতে সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে(তৎকালীন মেজর জেনারেল) উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।

৩৭ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের টকশোর ৩৫ মিনিট ১০ সেকেন্ড থেকে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা সেনা প্রধানের বক্তব্যের সাথে হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner 

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওতে সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদিনের দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে অনুসন্ধানে InFormative Bangla নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গতবছরের ২৭ মে “আসুন যুদ্ধ করি, ৩০ মিনিটও টিকতে পারবেন না, সেনাবাহিনীর কড়া হুশিয়ারি” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

১০ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদিনের বক্তব্যের হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

রাঙামাটিতে সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির সন্ত্রাসী কার্যকলাপের হুশিয়ারী দিয়ে এমন বক্তব্য দেন সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদিন। 

অর্থাৎ, আলোচিত দাবির সাথে আলোচিত ভিডিওতে থাকা সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদিনের বক্তব্যের কোনো মিল নেই।

পাশাপাশি মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রধানের যুদ্ধ ঘোষণা দেওয়ার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে আন্দোলন করছে। এরই প্রেক্ষাপটে গত ৪ নভেম্বর অক্টোবর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য, টকশোতে এসে হাসিনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো সেনাপ্রধান’ শীর্ষক শিরোনাম ও প্রায় একই তথ্যে থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।  এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে আলোচিত দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও সেনাবাহিনীর নামে ইন্টারনেটে ভুল তথ্য  ছড়ানো হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সেনাবাহিনীর প্রধান’ শীর্ষক দাবিটিতে সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img