দাখিল পরীক্ষা থেকে আরবি ১ম ও ২য় পত্র বাদ দেওয়ার দাবিটি বিভ্রান্তিকর

সম্প্রতি “ইন্না লিল্লাহ। দাখিল পরীক্ষা থেকে আরবী ১ম ও ২য় পত্র বাদ দেয়া হয়েছে, আলেম হওয়ার রাস্তা  সুকৌশলে বন্ধ করে দিচ্ছে।” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দাখিল পরীক্ষা থেকে আরবি ১ম ও ২য় পত্র বাদ একেবারে বাদ দেয়া হয়নি বরং কোভিড-১৯ এর কারণে কেবল ২০২২ দাখিল পরীক্ষায় কিছু বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না এবং এই বিষয়গুলো সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে।

দাখিল পরীক্ষা থেকে আরবী ১ম ও ২য় পত্র বাদ দেওয়ার দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে বোর্ডটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো: কামাল উদ্দীন স্বাক্ষরিত “দাখিল পরীক্ষা-২০২২ সংক্রান্ত জরুরি বিজ্ঞপ্তি” শীর্ষক একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়।

Source: বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড

বিজ্ঞপ্তিটি থেকে জানা যায়, এ বছর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সাধারণ, বিজ্ঞান, মুজাব্বিদ এ হিফজুল কুরআন বিভাগে যথাক্রমে আরবি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, আকাইদ ও ফিকহ, কিরআতে তারতিল ও হাদর (মৌখিক), হিফজুল কুরআন দাওর ( মৌখিক) এর নম্বর সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। অর্থাৎ এই বিষয়গুলোর পরীক্ষা সরাসরি অনুষ্ঠিত হবে না।

এছাড়া বিজ্ঞপ্তিটির সংযুক্তি “খ” অংশে কোভিড ১৯ প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের দাখিল পরীক্ষার পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচিতেও আরবী প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের ১০০ নাম্বার করে মোট ২০০ নাম্বারের সিলেবাস খুঁজে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ দাখিল পরীক্ষা-২০২২ এর পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচিতেও আরবি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র বিষয় দুইটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

পরবর্তীতে সাবজেক্ট ম্যাপিং সম্পর্কে অনুসন্ধান করে জাতীয় দৈনিক সমকালে ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি  “ফল বিশ্নেষণ সাবজেক্ট ম্যাপিং, কার লাভ, কার ক্ষতি” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, মহামারিকালে পরীক্ষা ছাড়াই আগের পরীক্ষার ভিত্তিতে এবারের (অর্থাৎ ২০২০ সালের) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল তৈরিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।

এই সাবজেক্ট ম্যাপিং নিয়ে প্রতিবেদনটিতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ৭৫ শতাংশ বিষয়ভিত্তিক নম্বর বিবেচনা করে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ পাবলিক পরীক্ষায় সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতিটি নতুন নয়। এর আগেও এটি ব্যবহার করে ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত কেবল মাদ্রাসা বোর্ডের দাখিল পরীক্ষাই নয়, সাধারণ শিক্ষা বোর্ডেও বিষয় কমিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় আইসিটি, ধর্মীয় শিক্ষা, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং এইচএসসিতে আইসিটি এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়।

Source: rtvonline

মূলত, কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষিতে পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে পরীক্ষার নম্বর ও কিছু বিষয়ে পরীক্ষা না নিয়ে তার পরিবর্তে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করে বিষয় সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের দাখিল পরীক্ষায় আরবি ১ম ও ২য় পত্র, আইসিটি ইত্যাদি বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না। শুধু দাখিল নয়, ২০২২ এর SSC পরীক্ষা থেকেও ৩টি এবং HSC পরীক্ষা থেকে ১টি বিষয় এ বছরে কমানো হয়েছে। গত বছর পরীক্ষার বিষয় সংখ্যা আরো কম ছিলো।

সুতরাং, দাখিল পরীক্ষা থেকে আরবি ১ম ও ২য় পত্র বাদ দেওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

Bangladesh Madrasah Education Board: দাখিল পরীক্ষা-২০২২ সংক্রান্ত জরুরি বিজ্ঞপ্তি

Daily Samokal: ফল বিশ্নেষণ,সাবজেক্ট ম্যাপিং কার লাভ, কার ক্ষতি
Rtv Online: যেভাবে হবে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা

আরও পড়ুন

spot_img