গণ-আন্দোলনের মুখে গত ০৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। সরকার পতনের পর মন্ত্রী, এমপিসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতা আত্মগোপনে চলে যান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেও অনেকে দেশ ছেড়ে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন।
সম্প্রতি, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডাউকি থানার পুলিশ কলকাতা থেকে সিলেটের আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের চার নেতাকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান (মুক্তি), সহসভাপতি আবদুল লতিফ (রিপন) এবং সদস্য ইলিয়াস হোসেন (জুয়েল)।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে যে, ধর্ষণের অভিযোগে ওই নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
![আওয়ামী লীগ](https://rsbs3.sgp1.digitaloceanspaces.com/wp-content/uploads/2024/12/unnamed-675995d1b400c-1024x896.webp)
এই দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন: জি ২৪ ঘন্টা।
একই দাবিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন: সময় টিভি, নয়া দিগন্ত, কালের কণ্ঠ, ডিবিসি নিউজ, চ্যানেল২৪, যুগান্তর, মানবজমিন, এটিএন নিউজ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি, একুশে টিভি (ইউটিউব), দেশ টিভি, একাত্তর টিভি, দিনকাল, কালবেলা, বাংলাভিশন, বাংলা আউটলুক, বাংলা টিভি, নিউজ২৪, ঠিকানা নিউজ, সমকাল, ভোরের কাগজ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (ইউটিউব), দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ডেইলি সান, ঢাকা ট্রিবিউন, দৈনিক সংগ্রাম, ইনকিলাব, যায়যায়দিন, বাংলাদেশ টাইমস, বায়ান্ন টিভি, ডেইলি বাংলাদেশ, ডেইলি ক্যাম্পাস, নিউজজি২৪, ফেস দ্যা পিপল (ফেসবুক), অর্থসংবাদ, কর্পোরেট সংবাদ, সাম্প্রতিক দেশকাল, সোনালী নিউজ, দৈনিক এশিয়া বাণী, নিউজজি২৪ (ইউটিউব), জুম বাংলা, আমার বার্তা, আমার সংবাদ, ডেল্টা টাইমস এবং ঢাকা টুডে।
![](https://rsbs3.sgp1.digitaloceanspaces.com/wp-content/uploads/2024/12/unnamed-1-6759965492fc2-1016x1024.webp)
জনকণ্ঠ ও যমুনা টিভি একই দাবিতে সংবাদ প্রচার করে পরবর্তীতে তা সরিয়ে নিয়েছে।
এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ফেসবুক আইডিতে একই দাবিতে একটি পোস্ট প্রচারিত হয়। গতকাল ১০ ডিসেম্বর কাফরুল দক্ষিণ থানা জামায়াত আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকালে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানও একই দাবি করেন।
এ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ধর্ষণের অভিযোগ নয়, বরং অবৈধ অনুপ্রবেশ, মারধর এবং ডাকাতিসহ আরও কয়েকটি অভিযোগে সিলেটের আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের চার নেতাকে গ্রেফতার করেছে ভারতীয় পুলিশ।
অনুসন্ধানের মাধ্যমে গত ৯ ডিসেম্বর ভারতের মেঘালয় ভিত্তিক পত্রিকা দ্য শিলং টাইমসে এই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়, মেঘালয়ের পশ্চিম জয়ন্তিয়া হিলসের দাউকি এলাকায় গত মাসে ট্রাক চালকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আওয়ামী লীগের চার নেতা-কর্মীকে কলকাতা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে পুলিশের বরাতে আরও জানানো হয়, গ্রেফতারকৃতদের রোববার (০৮ ডিসেম্বর) রাতেই জোয়াইয়ে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে তারা পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন এবং দাউকি থানায় এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
অর্থাৎ, মেঘালয়ের স্থানীয় পত্রিকা দ্য শিলং টাইমস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে কোনো উল্লেখ বা তথ্য পাওয়া যায়নি।
গত ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশি অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্ট-এ একই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে মেঘালয়ের শিলং টাইমস-এর এক সাংবাদিকের বরাতে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার নম্বর এবং সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মামলায় বিপজ্জনক অস্ত্র ব্যবহার করে ক্ষতি করা, ডাকাতি এবং স্বেচ্ছায় ক্ষতি করার মতো ধারাগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকলেও, ধর্ষণের কোনো ধারা উল্লেখ করা হয়নি।
রিউমর স্ক্যানার টিম সংশ্লিষ্ট সূত্রের সহায়তায় আলোচিত মামলার একটি নথি সংগ্রহ করেছে। নথিতে উল্লেখিত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এর সঙ্গে ঢাকা পোস্ট-এর প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যের মিল রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ যুবলীগ চেয়ারম্যান পরশের স্ত্রী দাবিতে সম্পাদিত ও ভিন্ন ব্যক্তির ছবি প্রচার
মেঘালয় পুলিশের মহাপরিচালক মিজ নংরাং এ বিষয়ে বিবিসি বাংলাকে জানান, “ওই চারজনের বিরুদ্ধে ডাউকি থানার একটা মামলা ছিল। কোনও ধর্ষণের অভিযোগ নেই এদের বিরুদ্ধে। ডাউকি থানায় এদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার চারটি ধারা এবং বিদেশি আইনের ১৪ নম্বর ধারায় অভিযোগ ছিল। সেই মামলাতেই কলকাতা থেকে এদের গ্রেফতার করে আনা হয়েছে।”
এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে মেঘালয়ের পশ্চিম জৈন্তিয়া পাহাড় জেলার জোওয়াইয়ের পুলিশ সুপার চেমফাং সিরটির সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, ‘বিশ্বস্ত সূত্রের ভিত্তিতে ভারতের বিদেশি আইন এবং মারধরের মামলায় ওই বাংলাদেশি নাগরিকদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাদের অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে মারধরের ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি তদন্তাধীন। আদালতের নির্দেশে তাদের বিচারিক হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির কোনো অভিযোগ নেই।‘
সুতরাং, অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ, মারধর ও ডাকাতির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সিলেটের আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের চার নেতাকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ইন্টারনেটে প্রচারিত দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Statement from Chemphang Syrti, Superintendent of Police, West Jaintia Hills, Meghalaya.
- The Shillong Times: Dawki assault cases: Awami League leaders held in WB
- Dhaka Post: ধর্ষণ নয়, অনুঅনুপ্রবেশের দায়ে ভারতে গ্রেফতার হন আ.লীগের ৪ নেতা
- BBC Bangla: কলকাতা থেকে গ্রেফতার আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ‘ধর্ষণের অভিযোগ নেই’