সম্প্রতি, ‘ইয়েমেনের রাজধানী সানার প্রশাসনিক এলাকা জাবল হারজের পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত ‘আল হুতাইব’ নামক স্থানে কোনদিন বৃষ্টি হয়নি’ দাবিতে একটি পোস্টে(আর্কাইভ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। উক্ত পোস্টে আরো দাবি করা হয়েছে, আকাশে মেঘ জমে সমতল থেকে ২০০০ মিটার উপরে কিন্তু ‘আল হুতাইব’ নামক স্থানটি মাটি থেকে ৩২০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত হওয়ায় সেখানে কোনো বৃষ্টি হয়না।
একই দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে প্রচার হয়ে আসছে। পূর্বে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
উক্ত পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
বিভিন্ন সময় একই দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন জাগো নিউজ (আর্কাইভ), সময় টিভি (আর্কাইভ),একুশে টিভি (আর্কাইভ), রাইজিং বিডি (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইয়েমনের ‘আল হুতাইব’ নামক স্থানটিতে কোনোদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং বিভিন্ন আবহাওয়া বিষয়ক ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী উক্ত স্থানটিতে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। তাছাড়া “ভূপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ ২০০০ মিটারের মধ্যেই মেঘ জমা হয়” শীর্ষক দাবিটিও সত্য নয়।
পৃথিবীর যেসব স্থানে বৃষ্টিপাত খুবই কম হয় এমন জায়গার অনুসন্ধানে Sciencelive and Forbes এর ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত ফলাফল পাওয়া যায়। তবে সেই তালিকায় আল-হুতাইবের নাম পাওয়া যায়নি।
পাকিস্তান ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম Dawn এর ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালে ফোটোসাংবাদিক Mehlum S Sadriwala কর্তৃক প্রকাশিত একটি ভ্রমণকাহিনী পাওয়া যায়। যেখানে তিনি ইয়েমেনে তার ভ্রমণ এবং আল-হুতাইবের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। ভ্রমণকাহিনীতে তিনি আল-হুতাইবের সৌন্দর্য বর্ণনা করে লিখেছেন সেখানে প্রতিদিন বৃষ্টি হয়েছিলো।
পরবর্তীতে Weather Atlas নামক একটি ওয়েবসাইটের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আল হুতাইবে বছরের দুইটি সময়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। উক্ত স্থানে এপ্রিল মাসের গড় বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হচ্ছে ১০৩ মিলিমিটার। অন্যদিকে আগস্ট মাসে উক্ত স্থানটিতে ১১১ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে আল হুতাইবে বছরের সর্বনিম্ন (৫ মিলিমিটার) বৃষ্টিপাত ঘটে ডিসেম্বর মাসে।
তাছাড়া Accu Weather নামক ওয়েবসাইট থেকে আল হুতাইবের আবহাওয়ার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায় চলতি এপ্রিল মাসের বিভিন্ন তারিখেও উক্ত স্থানে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অর্থাৎ, ইয়েমেনের আল-হুতাইব নামক স্থানে কখনো বৃষ্টি না হওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
মেঘের উপরে অবস্থিত স্থানে কি বৃষ্টি হয় না?
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন ধরণের মেঘ রয়েছে। আর এই মেঘগুলোকে মূলত এদের আকার এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে তাদের উচ্চতার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়।
“UCAR Center for Science Education” এর তথ্যমতে, যেসকল মেঘ ভূপৃষ্ঠ থেকে ২ কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থান করে তাদের বলা হয় Low Clouds. অন্যদিকে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ২-৭ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থানকারী মেঘকে বলা হয় Middle Clouds. আবার, পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৫-১৩ কিলোমিটার উচ্চতার মেঘকে বলা হয় High Clouds. অন্যদিকে, Cumulonimbus নামক এক ধরণের মেঘ রয়েছে যারা পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ১৩ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত যেকোনো স্থানেই অবস্থান করতে পারে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের তথ্যমতে, Cumulonimbus নামের এই মেঘ বজ্রপাত এবং ভারী বৃষ্টিপাত ঘটাতে সক্ষম।
অর্থাৎ, ‘আল হুতাইব’ নামক স্থানটি মাটি থেকে ৩২০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত হওয়ায় সেখানে কোনো বৃষ্টি না হওয়ার দাবিটি ভিত্তিহীন।
মূলত, ইয়েমেনের ‘আল হুতাইব’ নামক স্থানে কখনো বৃষ্টি হয় না এমন দাবিটি বিগত কয়েক বছর ধরে সামাজিক মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে অনির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে প্রচার হয়ে আসছে। তবে, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আল হুতাইব নামক স্থানটি মোটেও বৃষ্টিপাতহীন শুষ্ক এলাকা নয় বরং এপ্রিল এবং আগস্ট মাসে সেখানে গড়ে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
পূর্বে একই বিষয়টি ভারতে ভুলভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে India Today এবং Factly.
সুতরাং, ইয়েমনের আল হুতাইব নামক স্থানে কোনোদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Live Science: The 10 Driest Places on Earth.
- Sciencing: The Driest Places on Earth With the Least Rain.
- Dawn: On the brutally beautiful streets of Yemen
- UCAR Center for Science Education: Types of Cloud
- National Geographic: Cumulus clouds
- Accu Weather: Hutayb, Sana.
- Weather Atlas: Climate and monthly weather forecast; Hutayb, Yemen.