ব্রাজিলের পুরুষশূন্য অবিবাহিত নারীদের গ্রাম দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা

সম্প্রতি “যে গ্রামের মেয়েদের বিয়ে করতে চায় না ছেলেরা” “যে গ্রামের সুন্দরী নারীদের কেউ বিয়ে করে না!” “পাত্র খুঁজে পাচ্ছেন না যে গ্রামের সুন্দরী নারীরা” “সুন্দরী হয়েও পাত্র খুঁজে পান না যে গ্রামের তরুণীরা” “সুন্দরী হয়েও পাত্র খুঁজে পান না যে গ্রামের তরুণীরা!” “সুন্দরী হলেও পাত্র জোটে না যে গ্রামের মেয়েদের” “যে গ্রামের সব নারীই সুন্দর, কিন্তু পাত্রের অভাবে হচ্ছে না বিয়ে” শীর্ষক শিরোনামের সংবাদ মূলধারার গণমাধ্যম এবং অনলাইন পোর্টালে প্রচারিত হচ্ছে।

মূলধারার গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে প্রচারিত এরকম কিছু প্রতিবেদন দেখুন; সময় টিভি (আর্কাইভ), একাত্তর টিভি (আর্কাইভ), দৈনিক ইনকিলাব (আর্কাইভ), ডিবিসি নিউজ (আর্কাইভ), একুশে টিভি, আমাদের সময় (আর্কাইভ), বাংলাভিশন (আর্কাইভ), যুগান্তর (আর্কাইভ), নয়াদিগন্ত (আর্কাইভ), মানবকন্ঠ (আর্কাইভ), ইত্তেফাক (আর্কাইভ), ভোরের কাগজ (আর্কাইভ), জাগোনিউজ (আর্কাইভ), ডেইলি ক্যাম্পাস (আর্কাইভ), বাংলাদেশ জার্নাল (আর্কাইভ), বিডিমর্নিং (আর্কাইভ), অধিকার নিউজ (আর্কাইভ), প্রতিদিনের সংবাদ (আর্কাইভ), বাংলা ইনসাইডার (আর্কাইভ), দুরবীন (আর্কাইভ)।

অনলাইন পোর্টালে প্রচারিত এরকম কিছু প্রতিবেদন দেখুন জাগোনিউজ (আর্কাইভ), ডেইলি ক্যাম্পাস (আর্কাইভ), বাংলাদেশ জার্নাল (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্রাজিলের নইভা ডো করডেইরো গ্রামের মেয়েদের অবিবাহিত থাকার দাবিটি সত্য নয় বরং একই নামে একটি সামাজিক উন্নয়নমূলক সংস্থার ফেসবুক পেজ থেকে নারীদের ছবি সংগ্রহ করে উক্ত দাবিতে প্রচারিত হচ্ছে এবং সেই গ্রামে সকল বয়সের নারী-পুরুষ বসবাস করে।

ছবি যাচাই

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, Noiva do Cordeiro নামক ইন্সটাগ্রাম একাউন্ট পাওয়া যায়। উক্ত পেজের সূত্র ধরে ফেসবুকে সার্চের মাধ্যমে একই নামে ফেসবুক পেজ পাওয়া যায়। গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিগুলো উক্ত পেজে পাওয়া যায়। পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ব্রাজিলের অবিবাহিত নারীদের গ্রাম দাবিতে প্রচারিত সংবাদের ছবিগুলোর সাথে উক্ত পেজে প্রাপ্ত ছবিগুলোর ছবিগুলোর হুবহু মিল রয়েছে।

যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য ছবিগুলো উক্ত পেজ থেকেই সংগ্রহ করা হয়।

তথ্য যাচাই

Niova do Cordeiro পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ব্রাজিলের রুয়া মারিয়া, বেলো ভেল নামক স্থানের একটি গ্রাম। এই গ্রামের নামেই পেজটি পরিচালিত হচ্ছে একটি অলাভজনক সামাজিক উন্নয়নমূলক সংস্থা হিসেবে। উক্ত পেজের কোথাও এটি অবিবাহিত নারীদের গ্রাম কিংবা পুরুষ বিহীন গ্রামের দাবির কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় নি।

এছাড়াও, পেজটিতে আপলোড হওয়া অন্যান্য ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ছবিগুলোতে নারী, পুরুষ, শিশুসহ সব বয়সের মানুষ রয়েছে।

এছাড়াও কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম AFP Fact Check এর ওয়েবসাইটে গত ২১ নভেম্বর “False posts about ‘women-only’ village in Brazil circulate online” শীর্ষক শিরোনামের একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে ব্রাজিলের পুরুষশূন্য গ্রাম এবং উক্ত গ্রামের মেয়েদের বিয়ে না হওয়ার দাবিটিকে মিথ্যা বলা হয়।

এছাড়াও, Niova do Cordeiro সংস্থার প্রতিনিধি মার্সিয়া ফার্নান্দেজের সাথে কথা বলে এ এফ পি ফ্যাক্টচেক। উক্ত প্রতিবেদনে মার্সিয়া ফার্নান্দেজ জানান

“Marcia Fernandes, a representative for the organisation, told AFP the photos had been shared with false context.

She said: “The Noiva do Cordeiro community is not just for women. We are the majority because most men work in Belo Horizonte (the capital of Minas Gerais) and only come to the community on Fridays and stay until Sundays.”

যার ভাবার্থ করলে দাঁড়ায়,

ছবিগুলো ভুল তথ্যের সাথে ছড়িয়েছে। আমাদের গ্রামটি শুধুমাত্র নারীদের জন্য নয়। আমরা এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ কেননা বেশিরভাগ পুরুষ বেলো হরিজোন্টে শহরে কাজ করে। তারা সবাই শুক্রবার গ্রামে আসে এবং রবিবার আবার শহরে চলে যায়।

অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, অবিবাহিত নারীদের গ্রাম দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় এবং গ্রামে সকল বয়সের মানুষ বসবাস করেন। এছাড়াও গ্রামের পুরুষরা শহরে কাজের জন্য অবস্থান করলেও সাপ্তাহিক ছুটিতে তারা গ্রামে আসেন।

এছাড়াও, উক্ত বিষয়ে বিবিসি নিউজ ব্রাজিল ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

মূলত, নইভা ডো করডেইরো ব্রাজিলের একটি গ্রাম। একই নামে গ্রামে বসবাসরত মানুষজন একটি সামাজিক উন্নয়নমূলক সংস্থা পরিচালনা করে। গ্রামের বেশিরভাগ পুরুষ পাশ্ববর্তী বেলো হরিজোন্টে শহরে কাজের জন্য যায় এবং প্রতি সাপ্তাহিক ছুটিতে আবার নিজ গ্রামে ফিরে আসে। যে কারণে গ্রামে বসবাসরত মানুষদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। কিন্তু গ্রামের উন্নয়নমূলক সংস্থার ফেসবুক পেজ থেকে নারীদের ছবি সংগ্রহ করে গ্রামটি অবিবাহিত নারীদের গ্রাম দাবিতে প্রচার হয়ে আসছে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালেও বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে একই সংবাদ প্রচারিত হয়। সেসময় ব্রাজিলের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান E-Farsas.com ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

সুতরাং, ব্রাজিলের নইভা ডো করডেইরো গ্রামের মেয়েদের কেউ বিয়ে করতে চায় না বা গ্রামটি অবিবাহিত নারীদের গ্রাম দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img