তিন মাসে বাংলাদেশে ৩৪২ জন হিন্দু ও সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণ হওয়ার দাবিটি ভুয়া

বাংলাদেশে তিন মাসে ৩৪২ জন হিন্দু ও সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন—এমন একটি দাবি ভারতীয় সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে।

ফেসবুক এবং এক্সে প্রকাশিত এমন দাবির কিছু পোস্ট এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশে তিন মাসে ৩৪২ হিন্দু ও সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার কিংবা এমন অভিযোগে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ৩৪২ সংখ্যাটি আইন ও সালিশ কেন্দ্র(আসক) কর্তৃক গত মে মাসে প্রকাশিত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের দেশের মোট ধর্ষণের ঘটনার পরিসংখ্যান। এটি কোনো নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের সংখ্যা নয়। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, তিন মাসে ৩৪২ জন হিন্দু ও সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণের শিকার-এমন দাবি করা পোস্টগুলোতে ২২ আগস্ট প্রকাশিত ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮ হিন্দি-র একটি বিভ্রান্তিকর শিরোনামের প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট উল্লেখ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনটি হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ (HRCBM)-এর একটি প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছিল।

হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ-এর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সেখানে তিন মাসে ৩৪২ হিন্দু কিংবা সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণের ঘটনার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, সেখানে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের বরাতে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে তিন মাসেরও কম সময়ে ৩৪২টি ধর্ষণের ঘটনা আনুষ্ঠানিকভাবে রেকর্ড করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও, তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টে মাত্র দুই মাসের মধ্যে ৩৪২ ধর্ষণের ঘটনার কথা বলা হয়েছে। তবে এই সংখ্যা হিন্দু সংখ্যালঘু নারীর, এমন কিছু সেখানে উল্লেখ করা হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ-এর সঙ্গে ইমেলের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে HRCBM স্পষ্ট করে জানায়: “৩৪২ সংখ্যাটি ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে নথিভুক্ত মোট ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা, যা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি একটি জাতীয় সামগ্রিক পরিসংখ্যান, যেখানে ভুক্তভোগীদের ধর্ম বা জাতিগত পরিচয় আলাদা করে উল্লেখ করা হয়নি। এই ৩৪২ জন ভুক্তভোগী সবাই হিন্দু বা সংখ্যালঘু নারী-এমন দাবি HRCBM কখনোই করেনি।”

হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ-এর প্রতিবেদনটি অনেকটা সংখ্যালঘু কেন্দ্রিক হলেও, তাদের প্রতিবেদনে সংখ্যালঘু নারীদের নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দেখা যায়নি। উপরন্তু, সেখানে ৩৪২ ধর্ষণের সামগ্রিক পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে অনেকেই এই সংখ্যাটিকে শুধুমাত্র সংখ্যালঘু নারীদের সংখ্যা হিসেবে ধরে নিয়ে নেটিজেনরা বিভ্রান্ত হয়েছেন বলে বলে প্রতীয়মান হয়। এর ফলশ্রুতিতে, তাদের প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে ভারতীয় গণমাধ্যমের ত্রুটিপূর্ণ সংবাদের মাধ্যমে ভারতের সামাজিক মাধ্যমে “তিন মাসে ৩৪২ জন হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার”-এমন দাবি ছড়িয়ে পড়েছে।

পরবর্তীতে, ৩৪২ ধর্ষণের পরিসংখ্যান সংক্রান্ত আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ২০২৫ সালের মে মাসের পরিসংখ্যান প্রতিবেদন আমরা খুঁজে পাই। ১৮ মে প্রকাশিত আসকের প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৩৪২ সংখ্যাটি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা নির্দেশ করে। এটি একটি সামগ্রিক পরিসংখ্যান এবং কোনোভাবেই হিন্দু বা সংখ্যালঘু নারীদের নিয়ে নির্দিষ্টভাবে তৈরি করা হয়নি। উল্লেখ্য, হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ ৩৪২ সংখ্যাটিকে দুই মাস বা তিন মাসের কম সময়ের পরিসংখ্যান হিসেবে উল্লেখ করলেও, এটি প্রকৃতপক্ষে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মোট চার মাসের পরিসংখ্যান। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসা ধর্ষনের ঘটনা গণনা করে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয় বলে প্রতীয়মান হয়।

সুতরাং, গত তিন মাসে বাংলাদেশে ৩৪২ জন হিন্দু ও সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন-এই দাবিটি মিথ্যা।

Sources

  • Rumor Scanner Investigation 
  • Statement of HRCBM 
  • ASK May 2025 rape statistics 

আরও পড়ুন

spot_img