২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টুসহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত সব আসামিকে খালাস দেন হাইকোর্ট। পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। তবে গেল ৪ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের ওই আপিল খারিজ করে দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে, আপিল বিভাগের এই রায়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে।
একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা নিয়ে আপিল বিভাগের সাম্প্রতিক রায়ের পর আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা কোনো বিক্ষোভ সমাবেশ বা মিছিল করেননি। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান সংক্রান্ত বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিডিও ফুটেজ একত্রিত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই- ১
ভিডিওর শুরুতে একজন সংবাদ পাঠিকাকে বলতে শোনা যায়, “সমাবেশ করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা।” বিষয়টি অনুসন্ধান করে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৯ মে প্রকাশিত “সুপ্রিম কোর্টে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আ. লীগ আইনজীবীদের সমাবেশ” শিরোনামের একটি ভিডিও পাওয়া যায়। এর ০০:০৩ থেকে ০০:০৫ সেকেন্ডের অংশ প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহৃত হয়েছে।

একই ঘটনায় সময় টিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই দিন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মুখোমুখি অবস্থানে হাইকোর্ট এলাকা উত্তপ্ত হয়। আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বিচার বিভাগকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। এর প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এর আগে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের বিচার বিভাগ নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের সামনে মিছিল ও সমাবেশ করেছিলেন।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি ২০২৩ সালের এবং এটি একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আপিল বিভাগের সাম্প্রতিক রায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
ভিডিও যাচাই- ২
ভিডিওটির দ্বিতীয় অংশে একটি ভবনের প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর ‘মুখোমুখি অবস্থানে ছিলেন বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা’ শিরোনামের একটি ভিডিও পাওয়া যায়, যার সঙ্গে আলোচিত অংশের মিল দেখা যায়। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রথম আলোর এই ভিডিওর ০০:০১ থেকে ০০:০৪ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশ প্রচারিত ভিডিওটিতে ব্যবহার করা হয়েছে।

ডেইলি স্টারের একই দিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা পাশাপাশি অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেন। দুপুর ২টায় বিএনপিপন্থীরা মিছিল শুরু করেন, ২০ মিনিট পর আওয়ামীপন্থীরা যোগ দেন। এর আগে, নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪৭৩ জনের মধ্যে ৪৫০ জনকে আদালতে তোলা হয়, এবং পুলিশ ৭ জনের রিমান্ডের আবেদন করে।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি ২০২২ সালের পুরোনো ফুটেজ।
ভিডিও যাচাই- ৩
প্রচারিত ভিডিওর শেষ অংশে একজন আইনজীবীকে বক্তব্য দিতে এবং আইনজীবীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৯ মে প্রকাশিত “আ. লীগ-বিএনপির আইনজীবীদের বিক্ষোভের মাঝখানে দাঁড়ালো পুলিশ” শিরোনামের একটি ভিডিও পাওয়া যায়। এর ০০:২১ থেকে ০০:২৮ সেকেন্ডের অংশ প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহৃত হয়েছে।

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও ফুটেজটি ২০২৩ সালের পুরোনো ঘটনার
এছাড়া, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভের কোনো তথ্য বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের খালাসের রায় বহাল রেখে দেওয়া আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা বিক্ষোভ সমাবেশের এই দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Somoy National: সুপ্রিম কোর্টে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আ. লীগ আইনজীবীদের সমাবেশ
- Somoy Tv: আবারও উত্তপ্ত হাইকোর্ট, মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি
- Prothom Alo: মুখোমুখি অবস্থানে ছিলেন বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা
- Daily Star: আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপি-আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি স্লোগান
- Somoy Tv: আ. লীগ-বিএনপির আইনজীবীদের বিক্ষোভের মাঝখানে দাঁড়ালো পুলিশ