বিশ্বের ১০০ দেশ ড.ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে সমর্থন দেওয়ার ভুয়া দাবি ইন্টারনেটে 

সম্প্রতি, “বাংলাদেশের তত্ত্ববোধক সরকার পাশ হয়ে গেছে। ১০০ কয়েকটি দেশ মিলে ড.ইউনুস সাহেবকে তত্ত্ববোধক সরকারী হিসেবে সমার্থন দিয়েছেন’’ শীর্ষক দাবিতে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটক এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন ভিডিও (আর্কাইভ), ভিডিও (আর্কাইভ), ভিডিও (আর্কাইভ) এবং ভিডিও (আর্কাইভ)। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন ভিডিও (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্বের ১০০ টি দেশের ড.ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে সমর্থন দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। বরং ২০১৮ সালে ভারতের অশোকা ইউনিভার্সিটি ও ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস ইন্ডিয়া সেন্টারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্দেশ্যে ড.ইউনূসের ভারত সফরকালীন একটি ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত ভিডিওটিতে থাকা অশোকা ইউনিভার্সিটির লোগো ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অশোকা ইউনিভার্সিটির ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের পহেলা মে “Nobel Laureate Prof.Muhammad Yunus at Ashoka University” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে দাবিকৃত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Photo comparison by Rumor Scanner

ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল অশোকা ইউনিভার্সিটি ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস ইন্ডিয়া সেন্টারের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। ড. ইউনূস এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে অশোকা ইউনিভার্সিটিতে যান। পাশাপাশি তিনি উদ্যোক্তা বিষয়ক বিভিন্ন দিক সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন এবং ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন।

পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটিতে থাকা তথ্য অনুযায়ী অনুসন্ধানে অশোকা ইউনিভার্সিটির ফেসবুক পেজে ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টেও একই বিষয় তুলে ধরা হয়। 

পাশাপাশি অশোকা ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে একই দিনে “Ashoka University has signs MoU with Yunus Social Business” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একই বিষয়ে একটি প্রতিবেদনও খুঁজে পাওয়া যায়।

এছাড়া ইউনূস সেন্টারের ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল “Fiftieth Yunus Centre Launched in Ashoka University, Delhi” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি থেকে জানা যায়, ভারতের অশোকা ইউনিভার্সিটিতে একটি ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইউনূস সেন্টারের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে ইউনিভার্সিটিটি। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ভারত সফরের সময়ে ৬ এপ্রিল ২০১৮ ইউনূস সেন্টারের পক্ষে এই সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

অর্থাৎ ২০১৮ সালে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূসের ভারতের অশোকা ইউনিভার্সিটি সফরকালীন ভিডিওকেই বর্তমানে ১০০ টি দেশ ড.ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে সমর্থন দেওয়ার দাবিতে  প্রচার করা হচ্ছে।

এছাড়া অনুসন্ধানে মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে ড.ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে ১০০ দেশের সমর্থন বিষয়ক কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, সম্প্রতি বিশ্বের ১০০ টি দেশ ড. ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে সমর্থন দিয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটি ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল ভারতের অশোকা ইউনিভার্সিটি ও ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস ইন্ডিয়া সেন্টারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের। যেখানে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইউনূস সেন্টারের পক্ষে এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিলেন। এছাড়া নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যম সূত্রেও ড.ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে ১০০ দেশের সমর্থন বিষয়ক কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে ড.ইউনূস ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে জড়িয়ে প্রচারিত একাধিক গুজব নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন  

সুতরাং, বিশ্বের ১০০ টি দেশ ড. ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমর্থন দিয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img