Home Blog Page 31

বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীদের ভারত থেকে দেশে ফেরত পাঠানোর দৃশ্য দাবিতে বাংলাদেশে ভারতীয় জেলে আটকের ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দড়ি বাঁধা অবস্থায় কয়েকজন ব্যক্তিকে পুলিশের গাড়িতে তোলা অবস্থার একটি ভিডিও প্রচার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “সারা‌বি‌শ্ব থে‌কে বাঙালী‌ মুস‌লিমদের ফেরত পাঠা‌চ্ছে! ভিসা দেয়াও প্রায় বন্ধ! অন্ধকা‌রে ডুবতে চ‌লে‌ছে একটা জা‌তি.. বিস্তারিত কমেন্টে”। মন্তব্য সেকশনে বাংলাদেশি এক শিক্ষার্থীর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হওয়ার ও লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিষেধাজ্ঞার সংবাদের ছবি প্রচার করা হয়েছে। অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে, প্রচারিত ভিডিওটিতে বাংলাদেশি মুসলিম নাগরিকদের দেশে ফেরত পাঠানোর দৃশ্য প্রদর্শিত হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এছাড়াও, প্রচারিত ভিডিওটি ভারতের বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে অবৈধ বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠানোর দৃশ্য দাবিতেও প্রচার করা হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উল্লেখ্য, উপরোল্লিখিত পোস্টগুলো মূলত ভারত থেকে পরিচালিত অ্যাকাউন্ট থেকে করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীদের ভারত থেকে দেশে ফেরত পাঠানোর দৃশ্যের নয় বরং, গত ১৪ জুলাইয়ে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের সময় ভারতীয় দুটি ট্রলারসহ ভারতীয় ৩৪ জেলে আটকের ঘটনার দৃশ্য আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে মূলধারার গণমাধ্যম ‘মাছরাঙা টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ‘ট্রলারসহ ৩৪ ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে নৌবাহিনী’ শিরোনামে গত ১৫ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটির ৫০ সেকেন্ড পরবর্তী দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের তুলনা করলে আটক ব্যক্তি, পোশাক, পারস্পরিক অবস্থান ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার মিল পাওয়া যায়। 

Comparison : Rumor Scanner

এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে মাছরাঙা টিভিতে উক্ত ঘটনারই খানিকটা ভিন্ন কোণ থেকে ধারণকৃত ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। এ বিষয়ে ভিডিওতে মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, এদের প্রত্যেকের বাড়ি ভারতের ২৪ পরগণা এলাকায় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে ‘বঙ্গোপসাগরে দুটি ট্রলারসহ ভারতের ৩৪ জেলে আটক’ শিরোনামে গত ১৫ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের সময় ভারতীয় দুটি ট্রলারসহ সে দেশের ৩৪ জেলেকে আটক করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। গতকাল সোমবার (১৪ জুলাই) রাতে মোংলা বন্দরের ফেয়ারওয়ে বয়ার অদূরে গভীর সাগর থেকে ‘এফবি ঝড়’ ও ‘এফবি মঙ্গল চন্ডি-৩৮’ নামের ভারতীয় ট্রলার দুটি আটক করা হয়।… ওসি আনিসুর রহমান বলেন, ভারতীয় ট্রলার দুটিতে দেশটির ৩৪ জেলে রয়েছেন। গতকাল (১৪ জুলাই) গভীর রাতে তাঁদের মোংলায় আনা হয়েছে। নৌবাহিনী তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা করে মোংলা থানায় হস্তান্তর করবে।”

উল্লিখিত তথ্যপ্রমাণ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত আটক হওয়া ব্যক্তিরা ভারতীয় নাগরিক এবং তাদেরকে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের সময় আটক করা হয়েছে।

সুতরাং, গত ১৪ জুলাইয়ে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের সময় ভারতীয় ৩৪ জেলে আটকের ঘটনার দৃশ্যকে বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীদের ভারত থেকে দেশে ফেরত পাঠানোর ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

জাফলংয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বাস দুর্ঘটনার দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার 

গত ১১ আগস্ট, “কিছুক্ষণ আগে জাফলং যাওয়ার পথে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রা/স্তা/র পাশে পড়ে যায়/আল্লাহ রহমত করো।” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১১ আগস্ট  জাফলংয়ে এমন কোনো বাস দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেনি বরং, এটি জাফলংয়ের গত জানুয়ারি মাসের বাস দুর্ঘটনার ভিডিও। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম মাছরাঙা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৫ সালের ২৬ জানুয়ারি “সিলেটের জাফলংয়ে যাত্রীসহ ভ/য়া/ব/হ বাস দু/র্ঘ/ট/না | sylhet jaflong | Maasranga News” শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

পরবর্তীতে, একই বিষয়ে কালবেলার ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৫ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রকাশিত আলোচিত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।  

এছাড়া, সেসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একই তথ্যসংবলিত পোস্ট (,,,) খুঁজে পাওয়া যায়। 

উল্লেখ্য, গত ১ আগস্ট সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের কাটাগাং এলাকায় বাস দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। ২৮ জন আহত হয়। 

সুতরাং, গত জানুয়ারি মাসে সিলেটের জাফলংয়ে বাস দুর্ঘটনার ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র 

মেহজাবীন চৌধুরীর ছবি বিকৃত করে প্রচার 

0

অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীকে আপত্তিকর দৃশ্যে দেখা গেছে দাবি করে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

উক্ত দাবির ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে।   

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি মেহজাবীন চৌধুরীর আসল ছবি নয় বরং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে মেহজাবীনের গায়ের পোশাকের ডিজাইন সম্পাদনা করে আপত্তিকর দৃশ্য হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মেহজাবীন চৌধুরীর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গত ৩০ মার্চ একই পোশাকে একাধিক ছবি সম্বলিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। তবে আলোচিত ছবিটি এই পোস্টে পাওয়া যায়নি।

Screenshot: Facebook 

পোস্টটির এডিট হিস্টোরি যাচাই করে দেখা যায়, এই পোস্টে আরও একটি ছবি যুক্ত ছিল। পরবর্তীতে ছবিটি সরিয়ে নেওয়া হয়। উক্ত ছবিটিই এই আলোচিত ছবি বলে রিউমর স্ক্যানারের কাছে প্রতীয়মান হয়। 

পরবর্তী অনুসন্ধানে একই দিন (৩০ মার্চ) এবং তার পরদিনও এই ছবিগুলো একাধিক ফেসবুক অ্যকাউন্ট থেকে পুনরায় পোস্ট হতে দেখা যায়। এসব পোস্টে আলোচিত ছবিটিও ছিল। তবে ছবিতে মেহজাবীনের পোশাকের ডিজাইনের সাথে আলোচিত ছবিটির পোশাকের ডিজাইনে দৃশ্যমান পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

Comparison: Rumor Scanner 

অর্থাৎ, মেহজাবীনের প্রকাশ করা ছবিটিকে সম্পাদনা করে আপত্তিকর হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।  

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিনোদন অঙ্গনের একাধিক নারী তারকা এমন ভুয়া এডাল্ট কনটেন্টের মাধ্যমে অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন। এই তালিকায় মেহজাবীন ছাড়াও আরো যারা আছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন সাদিয়া আয়মান, রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা, শবনম ফারিয়া, পরী মণি।  

সুতরাং, মেহজাবীন চৌধুরী দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি সম্পাদিত। 

তথ্যসূত্র

পাথর লুট ইস্যুতে সিলেটে বিএনপির ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ থেকে প্রকাশ্যে পাথর লুটপাটের ঘটনা সম্প্রতি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই লুটপাটের পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মদদ রয়েছে বলে নানা আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। এ ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের পদও স্থগিত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

এরই প্রেক্ষিতে, মধ্যরাতে সিলেটে বিএনপির পাথর এবং বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চলছে সেনাবাহিনীর ব্যাপক অভিযান দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সিলেটের নয়। ভিডিওটির সাথে সিলেটে পাথর লুটের ঘটনারও সম্পর্ক নেই। এমনকি সিলেটে বিএনপির পাথর এবং বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর আলাদা কোনো অভিযান পরিচালনার খবরও পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী গলিতে একজন ব্যক্তির ইসকন বিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনার একটি ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে সময় টিভির ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর প্রকাশিত ‘চট্টগ্রামে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ৮০’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ফিচার ইমেজের সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমের সাদৃশ্য রয়েছে। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওসমান আলী নামক একজন ব্যক্তির ইসকন বিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরীর টেরীবাজার এলাকার হাজারী লেনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরপর আনুমানিক ৫০০-৬০০ জন বিশৃঙ্খলাকারী হাজারী লেনে ওসমান আলী ও তার ভাইকে হত্যা এবং দোকান জ্বালিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়। স্থানীয় কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যদের ৬টি টহল দল ওই এলাকায় পৌঁছায়। 

বিশৃঙ্খলাকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় জানমাল রক্ষা এবং মব জাস্টিস রোধে যৌথবাহিনী ওসমান আলী ও তার ভাইকে ওই এলাকা থেকে উদ্ধার করে। উত্তেজিত জনতাকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়টি আশ্বস্ত করা সত্ত্বেও এক পর্যায়ে দুষ্কৃতিকারীরা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। দুষ্কৃতিকারীরা এ সময় যৌথবাহিনীর ওপর অতর্কিতভাবে জুয়েলারির কাজে ব্যবহৃত এসিড হামলা চালায় এবং ভারী ইট পাটকেলসহ ভাঙা কাঁচের বোতল ছুঁড়তে শুরু করে। এতে সেনাবাহিনীর ৫ জন সদস্যসহ ৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়।

এ অভিযানের পর দুষ্কৃতিকারীদের শনাক্তকরণে যৌথবাহিনীর ১০টি টহল দল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে হাজারী লেন এলাকায় গেলেলুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতিকারীরা পুনরায় যৌথবাহিনীর ওপর এসিড সদৃশ বস্তু ছুড়তে শুরু করে। এসময় যৌথবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে ৮০ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে।

ঢাকা পোস্টকালের কন্ঠের ওয়েবসাইটে ‍উক্ত ঘটনা নিয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিবৃতির বরাতে প্রচারিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। সময় টিভির প্রতিবেদনটিও আইএসপিআর -এর বিবৃতির বরাত দিয়েই করা হয়েছে।

অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি চট্টগ্রামের পুরোনো ভিন্ন ঘটনার।

এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য সূত্রে সিলেটে পাথর লুট ইস্যুতে সিলেট বিএনপির পাথর ও বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী আলাদাভাবে অভিযান চালিয়েছে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, আজ (১৩ আগস্ট) সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ঘটনায় অভিযান পরিচালনা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক।

সুতরাং, ২০২৪ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের হাজারী গলির পুরোনো ভিন্ন ঘটনার ভিডিও দিয়ে সম্প্রতি সিলেটে বিএনপির পাথর এবং বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

কথিত প্রাণী প্রশিক্ষক জেসিকা র‍্যাডক্লিফের ডলফিনের আক্রমণে নিহত হওয়ার দাবিটি ভুয়া

0

সম্প্রতি, জেসিকা র‌্যাডক্লিফ নামের কথিত এক সামুদ্রিক প্রাণী প্রশিক্ষককে কাইরো নামের তার লালনপালন ও প্রশিক্ষণ দেওয়া একটি ওরকার (আক্রমণাত্মক ডলফিন প্রজাতি) আক্রমণে নিহত হয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রচারিত ভিডিওগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের এক শোর আগে প্রশিক্ষণ চলাকালে তার ওরকা কাইরো হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে জেসিকাকে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

একই দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে

ইউটিউবে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে

টিকটকে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কথিত প্রাণী প্রশিক্ষক জেসিকা র‌্যাডক্লিফের ডলফিনের আক্রমণে নিহত হওয়ার দাবিটি সত্য নয়। বরং, কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি একাধিক ভিডিও ব্যবহার করে এই ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে কথিত জেসিকা র‌্যাডক্লিফ নামটি ভিত্তি করে খোঁজ করা হয়, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই নামের কোনো সামুদ্রিক প্রাণী প্রশিক্ষককে ওরকার আক্রমণে মৃত্যু হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। এমন ঘটনা ঘটলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তা নিশ্চিতভাবে প্রকাশ করত, কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো সংবাদ লক্ষ্য করা যায়নি।

এই বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ‘FactEX’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি জেসিকার মৃত্যুর দাবি করা হয়। ভিডিওতে দাবি করা হয়, জেসিকা ওশান হ্যাভেন নামের এক মেরিন পার্কে প্রথমবারের মতো ওরকা শো-তে অংশ নেন। তবে বিশ্বস্ত কোনো সূত্রেই এই পার্কের অস্তিত্ব মেলেনি।

একই ধরনের দাবি গত ১১ এপ্রিল ‘Animal Quests’ নামের ইউটিউব চ্যানেলেও প্রকাশিত হয়। তবে ভিডিওটির বর্ণনায় জেসিকাকে একজন কাল্পনিক প্রশিক্ষক হিসেবে দেখানো হয়েছে এবং গল্পটি বাস্তব ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত বলাও উল্লেখ করা হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘Mahmuda Champa’ ফেসবুক প্রোফাইল থেকে চারটি ভিন্ন ভিডিও প্রচার করে, এগুলো জেসিকার নিহত হওয়ার দৃশ্য বলে দাবি করা হয়েছে। তবে সবগুলো ভিডিওই এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি।

এছাড়া, ‘Bd Tube Master’ নামের ফেসবুক পেজে জেসিকা মৃত্যুর দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে, একজন নারীর সঙ্গে দুটি ডলফিনের দৃশ্য দেখা যায়। তবে এটিও এআই দিয়ে তৈরি করা ভিডিও। এআই শনাক্তকরণ টুল হাইভ মোডারেশনের বিশ্লেষণে, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৮ শতাংশ।

এছাড়া, এই ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমও (,,) এটি ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে।

তবে, ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সি-ওয়ার্ল্ড অরল্যান্ডোর ৪০ বছর বয়সী সিনিয়র প্রশিক্ষক ডন ব্রানশো একটি শো শেষে টিলিকাম নামের ওরকার আক্রমণে নিহত হন।

সুতরাং, কথিত প্রাণী প্রশিক্ষক জেসিকা র‌্যাডক্লিফের ডলফিনের আক্রমণে নিহত হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

Rumor Scanner’s analysis.
Hive Moderation.
Forbes: Fake Jessica Radcliffe Orca Attack Video Questions Viral Reach In AI Age

উত্তরায় আওয়ামী লীগের মিছিল দাবিতে চট্টগ্রামে হওয়া শিবিরের বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি, উত্তরায় রাস্তায় নেমেছে আওয়ামীলীগ – এই দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন লেখা অবধি টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার বারেরও বেশি। এছাড়াও ভিডিওটিতে প্রায় ৩ হাজারেরও বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি ভিডিওটি ৬’শ বারেরও বেশি শেয়ার করা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এটি আওয়ামী লীগের কর্মসূচিও নয়। প্রকৃতপক্ষে, জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ উপলক্ষে ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর শাখার বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনসন্ধানে চ্যানেল ২৪ -এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৮ নভেম্বর ‘চট্টগ্রামে স্মরণকালের বড় বিক্ষোভ মিছিল ছাত্র শিবিরের’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর প্রথম ২০ সেকেন্ডে অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাদৃশ্য রয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner

চ্যানেল ২৪ -এর ইউটিউব চ্যানেলে এই বিষয়ে প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ উপলক্ষে ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছিল ইসলামী ছাত্রশিবির।

পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে একই ভিডিওটি ‘Noman Mahdi’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর প্রচার হতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে মিছিলে থাকা ব্যানারে লেখা দেখতে পাওয়া যায়। ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ পালন উপলক্ষে জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, চট্টগ্রাম মহানগর’

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর প্রচারিত একটি পোস্ট থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর “জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে” জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহের অংশ হিসেবে সকল বিভাগীয় শহরে “বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ” কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ২৬ নভেম্বর এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,  ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগরে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ঘুরে শেষ হয়। মিছিল শেষে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সাথে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন ঠেকাতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সেই সময় চলমান অস্থিরতা নিরসনের লক্ষ্যে উপস্থিত সকল সংগঠন ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালনের বিষয়ে সম্মত হয়। বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

সুতরাং, জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ উপলক্ষে ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ভিডিওকে সম্প্রতি উত্তরায় আওয়ামী লীগ রাস্তায় নেমেছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর লুট প্রসঙ্গে প্রথম আলোর নামে ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার

0

সম্প্রতি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে পাথর লুটপাটের ঘটনা দেশ ও দেশের বাইরে ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এ ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের পদও স্থগিত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এই প্রেক্ষাপটে, ‘চুরি নয়, সাদা পাথরগুলো ধুয়ে শুকাতে দেওয়া হয়েছে – উপজেলা সভাপতি’ শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘চুরি নয়, সাদা পাথরগুলো ধুয়ে শুকাতে দেওয়া হয়েছে – উপজেলা সভাপতি’ শিরোনামে প্রথম আলো কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। বরং, প্রযুক্তির সাহায্যে প্রথম আলোর ফটোর্কার্ডের ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে প্রথম আলোর লোগো এবং প্রকাশের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে।

প্রথম আলোর লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, প্রথম আলোর ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বরং আজ (১৩ আগস্ট) গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “প্রথম আলোর নামে ছড়ানো এই তথ্য ও কার্ডটি নকল, আমাদের তৈরি নয়। বিভ্রান্তি এড়াতে আমাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও অনলাইনের সঙ্গে থাকুন।”

Screenshot: Facebook.

এছাড়া, আলোচিত দাবির পক্ষে অন্য কোনো গণমাধ্যমেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, ‘চুরি নয়, সাদা পাথরগুলো ধুয়ে শুকাতে দেওয়া হয়েছে – উপজেলা সভাপতি’ শিরোনামে প্রথম আলোর নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক মিছিল দাবিতে জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে একটি মিছিলের ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওটি গত ৩১ জুলাইয়ে লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগের মিছিলের দৃশ্যের।

এরূপ দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত ভিডিওটি ৪৭ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ভিডিওটিতে প্রায় ১০ হাজারটি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইক দেওয়া হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত মিছিলের ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং মিছিলটি আওয়ামী লীগেরও নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে চলাকালীন সে বছরের ০২ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ভিডিও।

অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ‘মেঘনা নিউজ’ নামক একটি ফেসবুক পেজে গত বছরের ০২ আগস্টে ৩ মিনিট ০১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওটির ১৩ সেকেন্ড পরবর্তী সময়ের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

এমনকি মেঘনা নিউজের লোগোর একাংশও প্রচারিত ভিডিওটিতে দেখা যায়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি মূলত ‘মেঘনা নিউজ’ নামক ফেসবুক পেজে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি থেকেই নেওয়া হয়েছে। ভিডিওটি সম্পর্কে ‘মেঘনা নিউজ’ এর ক্যাপশনে বলা হয়েছে, “লক্ষ্মীপুরে ‘শিক্ষার্থীদের’ বি-ক্ষো-ভ, ছাত্রলীগ-যুবলীগের ধাওয়া”।

এছাড়াও, অনুসন্ধানে গত বছরের ০২ আগস্টে একইরকম ক্যাপশনে আরো একাধিক ফেসবুক পোস্টে আলোচিত ঘটনার ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়।

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের বা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো মিছিলের দৃশ্যের নয়। তাছাড়া, গত ৩১ জুলাইয়ে বা সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগের এরূপ কোনো মিছিল হওয়ার সপক্ষে নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালীন সে বছরের ০২ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের দৃশ্যকে গত ৩১ জুলাইয়ে লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগের মিছিল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

দাম্পত্য কলহে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পুরোনো ঘটনাকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার 

অন্তত গত ০৮ আগস্ট থেকে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, “আজ সকালে নোয়াখালীর সেনবাগ থানার মইশাই গ্রামের পাল বাড়ি দুলাল পালের মেয়েকে প্রকাশ্যে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাচ্ছে ৭/৮ জন যুবক।”

উক্ত দাবির ফেসবুক ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে। 

এই দাবির ভিডিওগুলো অন্তত ১ মিলিয়ন বার দেখা হয়েছে। 

একই দাবির ইনস্টাগ্রাম ভিডিও দেখুন এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এই ঘটনার সাথে সাম্প্রদায়িকতারও সম্পর্ক নাই। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের আগস্টের এই ঘটনাটি দাম্পত্য কলহের জেরে ঘটেছিল। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চ করে ২০২৪ সালের ০৮ আগস্টও একই ভিডিওর খোঁজ পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ০৮ আগষ্ট বিকেলে নোয়াখালীর সেনবাগ থানার মইশাই গ্রামের পাল বাড়ি দুলাল পালের মেয়েকে জোরপূর্বক  তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল ৭/৮ জন যুবক। পরবর্তীতে এলাকাবাসী ও সেনাবাহিনী গাড়িসহ ৩ জনকে আটকে মেয়েকে উদ্ধার করে। বাকিরা পালিয়ে যায়। মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল। আর যে তুলে নিয়ে যেতে এসেছিল, সে মেয়েটার প্রাক্তন স্বামী। এর আগেও সে দুইবার তুলে নেয়ার চেষ্টা করছিল।

এর সূত্র ধরে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনের সন্ধান পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনেও একই ভিডিও থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশট যুক্ত ছিল। 

Comparison: Rumor Scanner 

প্রতিবেদনে বলা হয়, সে সময় এই ঘটনার ভিডিও দেখে কেউ কেউ এটিকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে উল্লেখ করছেন। অবশ্য ওই নারীর বাবা ও গ্রামবাসী জানিয়েছেন, ঘটনাটি সত্য। তবে সেটা সাম্প্রদায়িক হামলা বা সহিংসতার ঘটনা ছিল না। ওই নারীকে অপহরণের চেষ্টা করেছিলেন তাঁর স্বামী। তবে তিনি তা পারেননি।

রিউমর স্ক্যানারের ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের এক প্রতিবেদনেও গত বছর এই ভিডিওর বিষয়ে উল্লেখ ছিল। প্রতিবেদনে এই ঘটনার বিষয়ে জানানো হয়, এটি সাম্প্রদায়িক কোনো ঘটনার ভিডিও নয়। বরং পারিবারিক কলহের ঘটনার জেরে এমন কান্ড করে বসেন উক্ত নারীর স্বামী। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, দাম্পত্য বিরোধের জেরে স্বামীর ঘর থেকে বাবার বাড়িতে চলে এসেছিলেন ওই নারী। তাঁকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তাঁর স্বামীসহ কয়েকজন ব্যক্তি। তখন ওই নারীর চিৎকার শুনে গ্রামবাসী এগিয়ে আসেন। তাঁরা মাইক্রোবাসটি ভাঙচুর করেন। এ সময় ওই নারীর স্বামীসহ তিনজনকে তাঁরা আটক করেন। আটক ব্যক্তিদের সেনাবাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানায় গ্রামবাসী।

সুতরাং, দাম্পত্য কলহকে ঘিরে সংঘটিত এক বছর পুরোনো ঘটনার ভিডিও সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র 

ছাত্রদলের তালি মিছিলে প্রযুক্তি সহায়তায় আপত্তিকর স্লোগান যুক্ত করে অপপ্রচার

সম্প্রতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ছাত্রদলের তালি মিছিলের একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওতে মিছিলের সামনে থাকা নারীদের ‘কথায় কথায় পুটকি মার, পুটকি তোর বাপ দাদার’ শীর্ষক আপত্তিকর স্লোগান দিতে শোনা যায়। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছাত্রদলের মিছিলে আলোচিত আপত্তিকর স্লোগানটি দেওয়া হয়নি বরং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল কর্তৃক আয়োজিত তালি মিছিলের অডিওতে আপত্তিকর স্লোগান যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহসের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে  গত ০৯ আগস্ট প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে থাকা ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল রয়েছে। 

Video Comparison By Rumor Scanner 

সাহসের পোস্টে যুক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এর অডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর অডিওর অমিল পরিলক্ষিত হয়। সাহসের পোস্টের ভিডিওটিতে মিছিলে আপত্তিকর কোনো স্লোগান নয় বরং শুধু তালি দিতে দেখা যায় নেতাকর্মীদের। 

এছাড়া একই তারিখে একই ভিডিও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, মাছরাঙা এবং সময় টিভির ফেসবুক পেজ থেকেও প্রচার হতে দেখা যায়। উক্ত সূত্রগুলোর ভিডিওতেও ছাত্রদলের এই মিছিলে তালি ব্যতীত কোনো স্লোগান শোনা যায়নি।

অর্থাৎ, ছাত্রদলের তালি মিছিলের সাথে একটি আপত্তিকর  স্লোগানের অডিওটি যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অনলাইন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম রাইজিং বিডি এর ওয়েবসাইটে গত ০৯ আগস্ট “ঢাবিতে ছাত্রদলের মৌন মিছিল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ০৯ আগস্ট বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মৌন মিছিল করে। নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে মিছিল নিয়ে হলপাড়া হয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসিতে) পায়রা চত্বরে অবস্থান নেন তারা। এসময়, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কোনো ধরনের স্লোগান না দিয়ে শুধু হাততালি দিয়ে মিছিল করছেন। এর আগে, ঢাবির হলগুলোতে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে শুক্রবার (৮ আগস্ট) মধ্য রাতে হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এক পর্যায়ে রোকেয়া হল ও শামসুন্নাহার হলের একদল ছাত্রী হলের ফটকের তালা ভেঙে বেরিয়ে এসে বিক্ষোভে যোগ দেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে মিছিল করেন।

সুতরাং, ছাত্রদলের মিছিলে আপত্তিকর স্লোগান  দেওয়ার এই ভিডিওটি সম্পাদিত। 

তথ্যসূত্র