Home Blog Page 27

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাম্প্রতিক বন্যার নয়, এসব ছবি ভারতের উত্তর প্রদেশের বন্যার পরিস্থিতির 

টানা বৃষ্টি আর ফারাক্কা বাঁধের কিছু গেট খুলে দেওয়ায় উজান থেকে ঢল নামার ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সম্প্রতি বন্যা দেখা দিয়েছে। পদ্মা নদীর পানি বেড়ে এতে জেলা সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। 

এরই প্রেক্ষিতে ‘রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্তে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নারায়নপুর এলাকায় এভাবে নদীগর্ভে বিলিন বাড়ি-ঘর…’ ক্যাপশনে একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন পদ্মা টাইমস টোয়েন্টিফোর (ফেসবুক)।

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)৷

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতির দৃশ্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের উত্তর প্রদেশের সাম্প্রতিক বন্যার ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম জি নিউজের উত্তর প্রদেশ-উত্তরাখণ্ডের আঞ্চলিক ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৩ আগস্ট প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর দৃশ্যাবলীর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। 

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটির বিবরণী থেকে জানা যায়, ভিডিওতে যুক্ত এসব ফুটেজে ভারতের উত্তর প্রদেশের বালিয়া জেলার বন্যা পরিস্থিতির চিত্র ধারণ করা হয়েছে। প্রবল নদী ভাঙনের ফলে বালিয়া জেলার অনেক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভিডিওর ঘটনাটি বালিয়া জেলার ‘চকিয়া নৌরঙ্গা’ গ্রামের।

পরবর্তীতে, আরেক ভারতীয় গণমাধ্যম নিউজ এইটিনের উত্তর প্রদেশ-উত্তরাখণ্ডের আঞ্চলিক ইউটিউব চ্যানেলে গত ০২ আগস্ট প্রকাশিত একটি রীলে একই দৃশ্য ও তথ্য পাওয়া যায়৷ 

উল্লেখ্য, আগস্ট মাসের শুরুর দিকে অতিবৃষ্টির কারণে ভারতের উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। বন্যাকবলিত হয় উত্তর প্রদেশের বালিয়া, কানপুর নগর, লখিমপুর খেরি, আগ্রা, গাজীপুর, মির্জাপুরসহ আরও বেশ কয়েকটি জেলা। 

সুতরাং, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির ছবি দাবিতে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতির ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

গেল ১৫ আগস্ট উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ এ মিছিল দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ২০২৩ সালের ভিন্ন ঘটনার

গত ১৫ আগস্ট ‘জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাড়ির সামনে মিছিল শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটিতে মিছিলকারীদের আওয়ামী লীগের পক্ষে স্লোগান দিতে দেখা যায়।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গত ১৫ আগস্ট উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কোনো মিছিলের নয়। বরং, এটি আওয়ামীলীগের ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের মিছিলের ভিডিও। 

এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে মিছিলে থাকা ব্যানারে ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়।

প্রপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই ‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।‌’ শিরোনামে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিওে খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওতে দেখানো মিছিলে থাকা ব্যানার এবং মিছিলের সামনে থাকা কিছু লোকজনের পোশাকের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিছিলের ব্যানার এবং কিছু লোকজনের পোশাকের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison : Rumor Scanner

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ফেসবুক পেজে পাওয়া ভিডিওর ঘটনার ভিন্ন একটি ভিডিও বলে প্রতীয়মান হয়।

পরবর্তীতে, যুবলীগের পেজটি পর্যবেক্ষণ করে সেই সময় একই দাবিতে প্রচারিত কিছু ছবিতেও আলোচিত ভিডিওর সমানের সারিতে থাকা কিছু ব্যক্তিদের দেখতে পাওয়া যায়।

এছাড়াও, ‘R Media Center’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই ‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ’ শিরোনামে একই ঘটনার ভিন্ন একটি ভিডিও প্রচার করতে দেখা যায়।

অর্থাৎ, প্রচারিত মিছিলের ভিডিওটি গত ১৪ আগস্ট কিংবা সাম্প্রতিক সময়ের নয়। 

সুতরাং, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ২০২৩ সালের জুলাই মাসের মিছিলের ভিডিওকে গেল ১৫ আগস্ট উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এ মিছিল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

চাঁদাবাজদের বিষয়ে সেনা সদস্যের বক্তব্য দাবিতে এআই নির্মিত ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি, বাংলাদেশের চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে এক সেনা সদস্যের সঙ্গে সাংবাদিকের কথোপকথনের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। 

ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, এক সাংবাদিক সেনা কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করছেন, “আপনারা থাকতে দেশে এতো চাঁদাবাজি হচ্ছে! ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন?” এসময় প্রত্যুত্তরে ওই সেনা কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, “চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব পুলিশের, আমাদের নয়।” 

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁদাবাজদের প্রসঙ্গে সেনা সদস্য এবং সাংবাদিকের কথোপকথনের ভিডিওটি আসল নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। 

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভয়েস ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়। 

পরবর্তীতে ভিডিওটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে বিশ্লেষণ করা হলে, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৮ শতাংশ বলে ফলাফল আসে।  

Screenshot from Cantilux by Rumor Scanner 

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটির দৈর্ঘ ৮ সেকেন্ডের। ভিডিওটি ৮ সেকেন্ড দীর্ঘ হওয়ায় এটি গুগলের অত্যাধুনিক এআই টুল Veo দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ‘Veo’  টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। 

সুতরাং, এআই ভিডিওকে চাঁদাবাজির বিষয়ে সেনা সদস্যের সঙ্গে সাংবাদিকের কথোপকথনের আসল দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

  • AI Content Detection Tool: Cantilux 
  • Rumor Scanner’s Analysis  

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে নয়, ছবিটি কোটা আন্দোলনে গুলি চালানোর প্রতিবাদে আইনজীবীদের মানববন্ধনের

0

সম্প্রতি ‘এটাকে বলে মেরুদণ্ড। স্পেডকে চোখে চোখ রেখে স্পেড বলতে পারা! যারা দেশে ইউনূস রেজিম দ্বারা বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী জনগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের উপর চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন, স্যালুট।’ ক্যাপশনে ‘গণহত্যার বিচার চাই | গায়েবী মামলা-গ্রেফতার ও নির্যাতন বন্ধ কর | আইনজীবী সমাজ’ লিখিত ব্যানারে একটি মানববন্ধনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)৷

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের মানববন্ধনের কোনো ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে ‘আইনজীবী সমাজ’-এর ব্যানারে একটি মানববন্ধনের ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম কালের কন্ঠের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই ‘আন্দোলনে গুলি চালিয়ে সরকার ফৌজদারি অপরাধ করেছে’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ছবির সাথে প্রচারিত ছবিটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। 

Comparison: Rumor Scanner 

প্রতিবেদনের ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ছবিটিতে ‘গণহত্যার বিচার চাই | গায়েবী মামলা-গ্রেফতার ও নির্যাতন বন্ধ কর | আইনজীবী সমাজ’ লিখিত ব্যানার হাতে আইনজীবী জেড আই পান্না, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, সারা হোসেন প্রমুখ উপস্থিত রয়েছেন। অন্যদিকে, প্রচারিত ছবিটিতে একই ব্যানার হাতে আইনজীবী জেড আই পান্না, জ্যোতির্ময় বড়ুয়াসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতি রয়েছে এবং উভয় ছবির পশ্চাৎপট ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতার মিল রয়েছে৷ 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাতের ঘটনায় গুলি চালিয়ে ফৌজদারি অপরাধ করা হয়েছে এবং এর বিচার হওয়া উচিত বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। এই দাবিতে সে বছরের ২৮ জুলাই ‘আইনজীবী সমাজ’-এর ব্যানারে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়, ব্যানারে লেখা ছিল, ‘গণহত্যার বিচার চাই, গায়েবি মামলা-গ্রেপ্তার ও নির্যাতন বন্ধ করো’। উক্ত মানববন্ধনে আইনজীবী জেড আই পান্না, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, সারা হোসেন, তোবারক হোসেনসহ আরও অনেকে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। 

এ বিষয়ে অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই ‘আন্দোলনে গুলি চালিয়ে সরকার ফৌজদারি অপরাধ করেছে’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই চিত্র ও তথ্য পাওয়া যায়। 

এছাড়া, প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই ‘ফৌজদারি অপরাধ করা হয়েছে মানুষের সঙ্গে, বিচার হওয়া উচিত’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একই ঘটনার একটি ভিন্ন ফ্রেম থেকে ধারণকৃত ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। 

সুতরাং, সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের মানববন্ধনের ছবি দাবিতে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদে আইনজীবীদের মানববন্ধনের পুরোনো ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ এ আ.লীগের লোক ভেবে এক ব্যক্তিকে বিএনপি কর্তৃক হত্যার দাবিটি মিথ্যা 

0

সম্প্রতি, ‘ধানমন্ডি ৩২ এ আওয়ামী লীগের কর্মী ভেবে এক পথচারীকে পিটিয়ে হত্যা করে বিএনপির মব সন্ত্রাসী’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৫ আগস্টে ধানমন্ডি ৩২ এ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতা-কর্মী কর্তৃক মবের শিকার হয়ে কেউ নিহত হননি, বরং কোনো তথ্য প্রচার ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

তবে জাগো নিউজের ওয়েবসাইটে ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে এসে ভিডিও কল, আওয়ামী লীগ সন্দেহে গণপিটুনি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে সকাল থেকেই রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থান নিয়েছিল ছাত্র-জনতা। অবস্থানকালে রাত ০৮ টার দিকে সেখানে উপস্থিত তিন ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগ কর্মী সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয় জনতা। তবে হামলার শিকার সেই ব্যক্তি মারা গেছেন এমন কোনো তথ্য প্রতিবেদনটিতে পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া, গত ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ শ্রদ্ধা জানাতে এসে একাধিক ব্যক্তি হেনস্তা ও মারধরের শিকার হলেও নিহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

এ বিষয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমগুলোতে (, , ) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও প্রায় একই তথ্য জানা যায়।

সুতরাং, গত ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ এ বিএনপি কর্তৃক মবের শিকার হয়ে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেগম খালেদা জিয়াকে ‘গণতন্ত্রের মা’ বলে সম্বোধন করেননি

গত ১৫ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন ছিল। তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘আজ গণতন্ত্রের মা, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন। তিনি এ দিনটি উদযাপন করেন না, তবে দল থেকে সারা দেশে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হচ্ছে।’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে ডিবিসি নিউজ তাদের ফেসবুক পেজে ১৫ আগস্ট একটি ফটোকার্ড প্রচার করে। 

ডিবিসি নিউজের ফেসবুক পেজে প্রচারিত এমন ফটোকার্ড দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত অন্যান্য পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত ফটোকার্ডটি নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করে আওয়ামী লীগের এক্টিভিস্ট নিঝুম মজুমদার। তার ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস খালেদা জিয়াকে নিয়ে আলোচিত মন্তব্যটি করেননি। প্রকৃতপক্ষে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের করা মন্তব্যটিকে ডিবিসি নিউজের ফেসবুক পেজে প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অন্যকোনো গণমাধ্যমে বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আলোচিত মন্তব্যটি করার দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ১৫ আগস্ট ফুলের তোড়া পাঠিয়ে খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে, ‘আপনারা জানেন, গণতন্ত্রের মা, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আজ জন্মদিন। তিনি নিজে কোনো অনুষ্ঠান পালন করেন না। তবে দলীয়ভাবে সারা দেশে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন চলছে।’ শীর্ষক মন্তব্যটি করেন। 

এছাড়াও একাধিক গণমাধ্যম থেকে একই তথ্য পাওয়া যায়। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। অর্থাৎ, ডিবিসি নিউজে বিএনপি নেতা অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের মন্তব্যকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ‍মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেগম জিয়াকে ‘গণতন্ত্রের মা’ বলে সম্বোধন করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মৃত্যুর দাবিটি গুজব

0

গত ৭ আগস্ট, “শোক সংবাদ…. মাত্রাতিরিক্ত নির্যাতনে কারাগারে অসুস্থ হয়ে ঢাকা পিজি হাসপাতালে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধের ১নং সাব সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রবীণ রাজনীতিবিদ জননেতা ইন্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, (“ইন্নালিল্লাহি ওয়া লিল্লাহি রাজিউন”)” শীর্ষক দাবিতে একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মৃত্যুর তথ্যটি সঠিক নয় বরং,  ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তিনি জামিনে মুক্ত হন। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সংবাদমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মৃত্যুর দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে, কি ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের ওয়েবসাইটে ২০২৫ সালের ১৪ আগস্ট “জামিনে মুক্ত সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৪ আগস্ট জামিনে মুক্তি পান আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। কারা কর্তৃপক্ষের বরাতে বলা হয়, ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা ছিল। সর্বশেষ পল্টন থানায় একটি মামলায় তিনি জামিন পান। এর আগে অন্যান্য মামলায় ধাপে ধাপে তিনি জামিন পান। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তিনি জামিনে মুক্তি পান। 

এ বিষয়ে দেশিয় অন্যান্য গণমাধ্যমে (,,) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট মধ্যরাতে বার্ধক্যজনিত রোগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় কারাগারের হাসপাতাল থেকে তাকে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

সুতরাং, আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মৃত্যুবরণ করেছেন শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

সিলেটে পাথরকাণ্ডে আটক বিএনপি নেতাকে জামায়াত নেতা দাবিতে প্রচার

সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটন এলাকা থেকে পাথর লুটপাটের ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি দেশব্যাপী তুমুল আলোচনা চলছে৷ উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে সাদাপাথর লুটপাটের অভিযোগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আলমগীর আলমকে গত ১৪ আগস্ট গ্রেফতার করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, “সাদাপাথর লুটের ঘটনায় জামায়াত নেতা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলম গ্রেপ্তার”।

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট : দেশ টিভি

গণমাধ্যম ছাড়াও আরো নানা ফেসবুক পেজ ও অ্যাকাউন্ট থেকেও আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেটে পাথরকাণ্ডে আটক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলমগীর আলম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা নন। প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন বিএনপি নেতা এবং সিলেট জেলা কৃষক দল নেতা।

অনুসন্ধানের শুরুতে সিলেটে পাথর লুটের অভিযোগে আটক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলমগীর আলমের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ‘আলমগীর আলম চেয়ারম্যান’ খুঁজে পাওয়া যায়। ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে গত ৩০ মার্চে একটি পোস্টারের ছবি অ্যাকাউন্টটিতে পোস্ট করা হয়েছে। পোস্টারে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবির পাশাপাশি আলমগীর আলমের ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায়। পোস্টারটিতে আলমগীর আলমের পদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, “স্থানীয় সরকার বিষয় সম্পাদক কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা | বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক সিলেট জেলা কৃষক দল”।

Comparison : Rumor Scanner

এছাড়া, অ্যাকাউন্টটিতে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গত ২৬ মার্চে প্রচারিত আরেকটি পোস্টারের ছবি পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টটিতেও আলমগীর আলমের পদ হিসেবে “স্থানীয় সরকার বিষয় সম্পাদক কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি | যুগ্ম আহবায়ক সিলেট জেলা কৃষক দল” লেখা দেখতে পাওয়া যায়। পাশাপাশি, অ্যাকাউন্টটি আরো পর্যবেক্ষণ করলে নানা সময়ে কৃষকদল ও বিএনপির নানা কার্যক্রমের বিষয়ে পোস্ট পাওয়া যায়।

এছাড়াও, এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে ‘সিলেটে পাথর লুটের অভিযোগে বিএনপির ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার’ শিরোনামে গত ১৪ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় পাথর লুটের ঘটনায় বিএনপির এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তাঁকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার ইউপি চেয়ারম্যান হলেন পূর্ব ইসলামপুর ২ নম্বর ইউপির চেয়ারম্যান মো. আলমগীর আলম। তিনি জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক।”

উপরোল্লিখিত তথ্যপ্রমাণ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সিলেটে পাথরকাণ্ডে আটক মো. আলমগীর আলম প্রকৃতপক্ষে একজন বিএনপি নেতা এবং সিলেট জেলা কৃষক দল নেতা।

সুতরাং, সিলেটে পাথরকাণ্ডে আটক বিএনপি নেতা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলমগীর আলমকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

১৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পক্ষে নারীদের মিছিল দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার

গত ১৫ আগস্ট  ‘আজ প্রমাণ হয়ে হয়ে গেছে বাংলার মানুষকে দাবায় রাখা সম্ভব না,, ধন্যবাদ নারীরা তোমাদের হাত ধরেই ফিরবেন।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

অর্থাৎ, দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটি গত ১৫ আস্টের।

ভিডিওটিতে, নারীদের শেখ হাসিনার পক্ষে স্লোগান দিতে দেখা যায়।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত মিছিলের ভিডিওটি গত ১৫ আগস্টের নয় বরং, ২০২৩ সালের জুন মাসে বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে ফরিদপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের উদ্যোগে আয়োজিত আনন্দ মিছিলের ভিডিও।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Rukhsana Ahmed’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ২ জুন প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর প্রথম ৯ সেকেন্ড অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জনবান্ধব বাজেট (২০২৩-২০২৪) ঘোষণা পরবর্তী ফরিদপুর মহিলা আওয়ামী লীগ,বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ,  ফরিদপুর জেলা শাখার আনন্দ মিছিল।’

Comparison : Rumor Scanner

উক্ত ফেসবুক অ্যাকউন্টটিতে ২০২৩ সালের ১ জুন একই দাবিতে একই মিছিলের কিছু ছবি প্রচার করতে দেখা যায়। 

এছাড়াও, ভিডিওটি  ২০২৩ সালের ২ জুন ‘Tusher Mahabi Blog’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে ‘যুব মহিলা লীগের আনন্দ মিছিল(Jubo mohilalig er annodo missil)’ শিরোনামে প্রচার করতে দেখা যায়।

অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি গত ১৫ আগস্টের নয়।

সুতরাং, ২০২৩ সালের জুন মাসে ফরিদপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের উদ্যোগে আয়োজিত আনন্দ মিছিলের ভিডিওকে গত ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পক্ষে নারীদের মিছিল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর ।

তথ্যসূত্র

১৫ আগস্টে ধানমন্ডি ৩২ এ মিষ্টি বিতরণ করে বাড়ি ফেরার পথে কুষ্টিয়ায় বাইক রেসে প্রাণহানি দাবিতে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা

অন্তত গত ১৬ আগস্ট থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুইটি ফুটেজের সমন্বয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ এ মিষ্টি বিতরণ করে ঢাকা থেকে ফেরার পথে কুষ্টিয়ায় মোটরসাইকেল রেস করতে গিয়ে প্রা/ণ গেল দুই জুলাই যোদ্ধার”।

উল্লেখ্য, ভিডিওটিতে প্রদর্শিত প্রথম ফুটেজে একজন ব্যক্তিকে মিষ্টি খাওয়াতে দেখা যায় এবং উপলক্ষ হিসেবে বলতে শোনা যায়, ‘বাকশাল পতন’ উপলক্ষে। এবং দ্বিতীয় ফুটেজটিতে একটি দুর্ঘটনাস্থল দেখা যায়।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত পোস্টগুলো সম্মিলিতভাবে প্রায় ৩ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ২ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওগুলোতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

এরূপ দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৫ আগস্টে ধানমন্ডি ৩২ এ মিষ্টি বিতরণকারী ব্যক্তি ফেরার পথে কুষ্টিয়ায় বাইক রেসে মারা যাননি। প্রকৃতপক্ষে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ফুটেজ দুইটি ভিন্ন দুই ঘটনার। মিষ্টি বিতরণকারী ব্যক্তির নাম মো: নেয়ামত উল্ল্যাহ যিনি এখনও বেঁচে আছেন। অপরদিকে কুষ্টিয়ায় বাইকরেসে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের নাম মাহিন হোসেন ও সিয়াম হোসেন।

ধানমন্ডি ৩২ এ মিষ্টি বিতরণের দৃশ্যের বিষয়ে অনুসন্ধানে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘ঢাকা মেইল’ এর ফেসবুক পেজে গত ১৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭ টার কিছুক্ষণ পরে সম্প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে মিষ্টি বিতরণের আলোচিত ঘটনার দৃশ্যটিও দেখা যায়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে মিষ্টি বিতরণের প্রচারিত দৃশ্যটি গত ১৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭ টার সময়ের। পরবর্তীতে মিষ্টি বিতরণকারীর বিষয়ে অনুসন্ধান করলে জানা যায়, উল্লিখিত মিষ্টি বিতরণকারীর নাম মো: নেয়ামত উল্ল্যাহ। অনুসন্ধানে নেয়ামতের ফেসবুক অ্যাকাউন্টও খুঁজে পাওয়া যায়। 

নেয়ামতের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, তার নিহতের দাবি প্রচারের পরবর্তী সময়েও তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক পোস্ট হয়েছে। এর মধ্যে একটি পোস্টে আলোচিত দাবি সম্বলিত পোস্ট শেয়ার করে নেয়ামতের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়, “পরকাল থেকে বলছি পিয় গুজবলীগ”। 

পরবর্তীতে বাইক দুর্ঘটনার দৃশ্যের বিষয়ে অনুসন্ধান করলে সংবাদমাধ্যম ‘জনকণ্ঠ’ এর ফেসবুক পেজে ‘কুষ্টিয়ায় মোটরসাইকেল রেস করতে গিয়ে প্রা/ণ গেল দুই বন্ধুর’ শিরোনামে গত ১৬ আগস্টে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির ১ মিনিট পরবর্তী দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে সংযুক্ত বাইক দুর্ঘটনার দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

এছাড়া, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে জনকণ্ঠের লোগোর খানিকটা অংশ ও একই বিজ্ঞাপনের ব্যানার দেখা যায় যা নিশ্চিত করে প্রচারিত ভিডিওটি জনকণ্ঠের উক্ত ভিডিওটি থেকে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, অনুসন্ধানে বাইক দুর্ঘটনার উক্ত দৃশ্য মূলধারার গণমাধ্যম ‘সমকাল’ এর ফেসবুক পেজেও গত ১৬ আগস্টে ‘কুষ্টিয়ায় মোটরসাইকেল রেস করতে গিয়ে প্রা ণ গেল দুই বন্ধুর’ শিরোনামে প্রচার হতে দেখা যায়। 

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে ‘গতির প্রতিযোগিতায় নেমে পিকআপে ধাক্কা, প্রাণ গেল ২ বন্ধুর’ শিরোনামে গত ১৬ আগস্টে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় মোটরসাইকেল নিয়ে গতির প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কায় দুই বন্ধু নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে উপজেলার বারোমাইল এলাকায় কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দুই তরুণ হলেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া সরদারপাড়া গ্রামের মাহিন হোসেন (২০) ও মথুরাপুর গ্রামের সিয়াম হোসেন (২১)।”

এছাড়াও, এ বিষয়ে আরো একাধিক মূলধারার গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একইরকম তথ্য জানা যায়।

উপরোল্লিখিত তথ্যপ্রমাণ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে গত ১৫ আগস্টে ধানমন্ডি ৩২ এ মিষ্টি বিতরণকারী ব্যক্তির নাম মোঃ নেয়ামত উল্ল্যাহ ও গত ১৫ আগস্টে কুষ্টিয়ায় বাইক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের নাম মাহিন হোসেন ও সিয়াম হোসেন। অর্থাৎ, গত ১৫ আগস্টে ধানমন্ডি ৩২ এ মিষ্টি বিতরণকারী ও কুষ্টিয়ায় বাইক দুর্ঘটনায় নিহত দুই ব্যক্তি আদতে ভিন্ন ব্যক্তি।

সুতরাং, গত ১৫ আগস্টে ধানমন্ডি ৩২ এ মিষ্টি বিতরণ করে ফেরার পথে কুষ্টিয়ায় বাইক রেসে মিষ্টি বিতরণকারীর প্রাণহানি ঘটেছে শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র