Home Blog Page 25

উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের পৈত্রিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগের দাবিটি ভুয়া

আজ (১৮ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাঙ্গচুর ও অগ্নিসংযোগের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের ওপর ক্ষোভের প্রেক্ষিতে কুমিল্লার মিঠাইভাঙায় আসিফ নজরুলের পৈতৃক বাড়িতে ছাত্রলীগ ও সাধারণ জনতা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আসিফ নজরুলের কুমিল্লার পৈত্রিক বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের দাবিরও কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, প্রচারিত ভিডিওটি গত ৫ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১ টার দিকে কুমিল্লায় সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার।

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘জাগো নিউজ’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ‘কুমিল্লায় বাহারের বাড়ি ভা’ঙ’চু’র, অ’গ্নি’সংযোগ’ শিরোনামে গত ৬ ফেব্রুয়ারিতে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়।

ভিডিওটিতে বলা হয়, “কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে ছাত্রজনতা। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত ১ টার দিকে নগরীর মুন্সেফবাড়িতে এ ভাঙচুর করা হয়।”

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে ‘কুমিল্লায় বাহাউদ্দিনের বাড়িতে ভাঙচুর, আগুন’ শিরোনামে গত ৬ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “কুমিল্লায় সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিক্ষুব্ধরা পেট্রল ঢেলে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন।

এছাড়াও, এ বিষয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘ঢাকা পোস্ট’ এর ওয়েবসাইটে ‘কুমিল্লার সাবেক এমপি বাহারের বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ’ শিরোনামে গত ৬ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “সারাদেশে বুলডোজার কর্মসূচির অংশ হিসেবে কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১টার দিকে নগরীর মুন্সেফে অবস্থিত বাহারের তিনতলা বাড়িতে হামলে পড়েন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এসময়, বাহারের বাড়ির দরজা-জানালা ভাঙার চেষ্টা করা হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বিক্ষুব্ধরা। তবে বুলডোজার বা অন্য কোনো মেশিন না থাকলেও হাতে থাকা শাবল, লাঠি দিয়ে ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে অকটেন ও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন বাহারের বাড়িটিতে। এর আগে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও ওই বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছিল।”

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে সম্প্রতি আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হওয়ার সপক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, গত ৫ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে কুমিল্লায় সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার ভিডিওকে সম্প্রতি আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের পৈত্রিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আসিফ নজরুল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চান দাবিতে জুলাই আন্দোলনের পুরোনো ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, “স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের পদত্যাগ চায় ‘আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল’” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে পদত্যাগ করতে বলেননি। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনে আবু সাইদের মৃত্যুর ঘটনায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী  আসাদুজ্জামান খান কামালকে আসিফ নজরুলের পদত্যাগ করতে বলার ভিডিও।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ‘NEWS24’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই: আসিফ নজরুল | Asif Nazrul | Quota Andolon | Quota Protest | News24” শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি হুবহু মিল রয়েছে।

পরবর্তীতে, কি ওয়ার্ড সার্চ করে মূলধারার গণমাধ্যম ইত্তেফাকের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ চান আসিফ নজরুল’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বোরোবি) অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুলের সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আবু সাঈদকে যেখাবে হত্যা করা হয়েছে এটা একটা ঠান্ডা মাথার হত্যাকাণ্ড। এটা একটা খুন। এটা মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ। আমি শুধু ওই পুলিশ সদস্যের শাস্তি চাই না। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর (আসাদুজ্জামান খান কামাল) পদত্যাগ চাই। উনার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর) যদি লজ্জা থাকে, উনার মধ্যে বিন্দুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি থাকে তাহলে উনার পদত্যাগ করা উচিত। উনাকে জিজ্ঞেস করতে চাই মুক্তিযুদ্ধে চেতনা কী এই ছিল? যারা বৈষম্যহীনতার আন্দোলন করবে, যারা ইক্যুয়ালিটির আন্দোলন করবে তাদেরকে আনপ্রোভকড অবস্থা পুলিশ গুলি করে মারবে?”

অর্থাৎ, আসিফ নজরুলের বক্তব্যের এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। তিনি তার এই বক্তব্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে পদত্যাগ করতে বলেছিলেন।

এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোন নির্ভরযোগ্য সূত্র আলোচিত দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আবু সাইদের মৃত্যুতে আসিফ নজরুল কর্তৃক তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়ার ঘটনাকে আসিফ নজরুল বর্তমানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগ চেয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের রিট খারিজ করা হয়েছে দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি ‘আ.লীগ নিষিদ্ধের রীট খারিজ! সারাদেশে আওয়ামী লীগের আনন্দ মিছিল। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবে’ শিরোনামে একটি ভিডিও শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি প্রায় ২ লক্ষবার দেখা হয়েছে, ভিডিওতে প্রায় ১৫ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ভিডিওটি প্রায় সতের শত বার শেয়ার করা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে আদালত কর্তৃক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের রিট খারিজ করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের রিট খারিজ হওয়া নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত পুরোনো ভিডিও প্রতিবেদনের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পৃথক কিছু ভিডিও ফুটেজ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলোগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।

ভিডিও যাচাই- ১

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ০১ সেপ্টেম্বর ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়ে করা রিট সরাসরি খারিজ’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির দৃশ্যাবলীর সাথে প্রচারিত ভিডিওটির প্রথম ফুটেজের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। 

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির ০০:০১ থেকে ০০:০৫ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটি প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে। 

ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণীতে বলা হয়, ‘সারডা সোসাইটি’ নামে একটি সংগঠনের পক্ষে এর নির্বাহী পরিচালক আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দলটির নিবন্ধন বাতিল চেয়ে একটি রিট আবেদন করে। সে বছরের ০১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রিটটি সরাসরি খারিজ করে৷ 

এ বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ০১ সেপ্টেম্বর ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিল চেয়ে করা রিট সরাসরি খারিজ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও ফুটেজটি পুরোনো এবং সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের রিট খারিজ হওয়ার ঘটনার নয়। 

ভিডিও যাচাই- ২

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এটিএন নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর ‘দুই মাস পরে আদালতে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের স্লোগান’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির দৃশ্যাবলীর সাথে প্রচারিত ভিডিওটির দ্বিতীয় ফুটেজের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির ০০:০১ থেকে ০০:১০ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটি প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।

ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর পৃথক দুটি হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক ও ফারুক খানকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আদালতে শুনানি শেষ হওয়ার পর পুলিশ ফারুক খানকে এজলাস থেকে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় আদালতের সামনে ২০ থেকে ২৫ জন আইনজীবী ও কয়েকজন যুবক স্লোগান দিতে থাকে। এটি সেই মিছিলের ভিডিও।

একই বিষয়ে গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর ‘ঢাকার সিএমএম আদালতের সামনে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই ধরণের চিত্র ও তথ্য পাওয়া যায়। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও ফুটেজটিও সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয়। 

উল্লেখ্য, সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুযায়ী গত ১২ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। 

সুতরাং, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের রিট খারিজ হওয়া নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদনের সাথে আরও ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ফুটেজ যুক্ত করে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের রিট খারিজ করা হয়েছে  দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন করায় তিন যুবলীগ কর্মীকে ‍কুপিয়ে হত্যার দাবিটি ভুয়া

গত ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে শোক দিবস পালন করায় কথিত মাদানীপুরে প্রকাশ্যে তিনজন যুবলীগ কর্মীকে ‍কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে দাবিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।  

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন করায় দেশের কোনো স্থানে তিনজন যুবলীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যার কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, মাদারীপুরে বালুর ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ তার দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যার পুরোনো ঘটনাকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে এটির কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে গত ৮ মার্চ মাদারীপুরে বালু ব্যবসার দখল নিয়ে দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা! শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এর ১৭ সেকেন্ড থেকে ৪৬ সেকেন্ড পর্যন্ত সময়ের ফুটেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর ফুটেজের হুবহু মিল রয়েছে। উভয় ভিডিওতে একইভাবে ভ্যানে করে লাশ বহন করতে দেখা যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত মার্চ মাসে মাদারীপুরে অবৈধ বালু ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আপন দুই ভাইসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। 

এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, মূলত কীর্তিনাশা নদী থেকে বালুতলা নিয়ে খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল সরদারের সাথে স্থানীয় প্রভাবশালী শাহজাহান খানের বিরোধ দীর্ঘদিনের। এর জেড়ে সাইফুলের উপর চড়াও হয় শাহজাহানের সমর্থকরা। উদ্ধারে সাইফুলের ভাই প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে হামলার শিকার হন তারাও। ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান ও তার বড় ভাই আতাউর। হাসপাতালে নিলে আরো একজন মারা যান।

প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ৮ মার্চ মাদারীপুরে বালুর ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বে তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যা শিরোনামে একই ঘটনায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, এটি প্রকাশের দিন অর্থাৎ, ৮ মার্চ মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের সরদার বাড়িতে উক্ত হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিপক্ষের হামলা থেকে বাঁচতে সাইফুল ও তাঁর আরও দুই ভাই বাড়ির সামনে একটি মসজিদে আশ্রয় নিলে হামলাকারীরা মসজিদে ঢুকে তিন ভাইকে কুপিয়ে জখম করেন। নিহতরা হলেন, আতাউর রহমান সরদার, সাইফুল ইসলাম ও তাঁদের চাচাতো ভাই পলাশ সরদার।

প্রতিবেদনটিতে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহার বরাতে উল্লেখ করা হয়, সাইফুল এর আগে ওই এলাকায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দুই বালু ব্যবসায়ীর দুই পা ভেঙে দেন। এর জেরে ওই ব্যবসায়ীরা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকারী লোকজন একত্র হয়ে সাইফুল ও তাঁর ভাইদের ওপর হামলা করেন।

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে মাদানীপুর উল্লেখ করা হলেও মূলত ভিডিওর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে মাদারীপুরে। 

অর্থাৎ, মাদারীপুরে বালু ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে হওয়া হত্যাকাণ্ডের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, মাদারীপুরে বালু ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে হওয়া হত্যাকাণ্ডের পুরোনো ফুটেজকে ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন করায় প্রকাশ্যে তিনজন যুবলীগ কর্মীকে ‍কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ঢাবিতে ছাত্রদলের মিছিলে শিবিরের হামলার দৃশ্য দাবিতে ২০২৩ সালের ঈশ্বরদীর ভিডিও প্রচার

অন্তত গত ১৮ আগস্ট থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “এই মুহুর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল মিছিল বের করলে, শিবিরের নেতাকর্মীরা হামলা করেছে। দুপক্ষের ব‍্যাপক সংঘর্ষ হচ্ছে এবং সেখানে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, এমন পরিস্থিতি যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মিছিলে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের হামলার দাবিরও কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, প্রচারিত ভিডিওটি ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বরের পাবনার ঈশ্বরদীর একটি ঘটনার। পুলিশের তথ্যমতে, সেসময় পাবনার ঈশ্বরদী রেলগেটে বিএনপি ঘোষিত অবরোধের সমর্থনে রেল লাইনে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘পাবনা পোস্ট ডটকম’ নামক একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বরে প্রচারিত ২ মিনিট ৭ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে প্রথম প্রায় ১ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের হুবহু মিল পাওয়া যায়। এমনকি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে ‘পাবনা পোস্ট’ এর লোগোর জলছাপও পাওয়া যায় যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি পাবনা পোস্টের উক্ত ভিডিওটি থেকেই নেওয়া হয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটি সম্পর্কে পাবনা পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, “ঈশ্বরদীতে ককটেল বিস্ফোরণ-রেললাইনে আগুন-ভাঙচুর যা বললেন পুলিশ সুপার”। ভিডিওটিতে একজনকে বলতে শোনা যায়, “অবরোধের সমর্থনে এইযে বিক্ষোভ প্রদর্শন থেকে শুরু করে সহিংস ঘটনার সাথে জড়িত তাদেরকে আমরা প্রায়শই নিয়মিত কিন্তু গ্রেফতারের মধ্যে রেখেছি। তারপরেও তাদের এইযে সহিংস অবস্থান নিয়ন্ত্রণের জন্য যতরকমের চেষ্টা, আমরা সেটা করছি। এবং আমরা বিশ্বাস করি, যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় আনতে পারবো।”

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম ‘দ্য ডেইলি স্টার’ এর ওয়েবসাইটে ‘ঈশ্বরদীতে ককটেল হামলা, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর’ শিরোনামে ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “পাবনার ঈশ্বরদী রেলগেট এলাকায় দফায় দফায় ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একটি ট্রাক ও পুলিশের কাজে নিয়জিত একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আজ রোববার (২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর) রাতে এ ঘটনা ঘটেছে। ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আজ রাত (২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর) সাড়ে ৭টার দিকে অবরোধকারীদের একটি দল অতর্কিত রেলগেট এলাকায় বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতংক সৃষ্টি করে।’ তিনি জানান, এ সময় হামলাকারীরা একটি ট্রাক ও পুলিশের রিকুইজিশন করা একটি পিকআপ ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”

এছাড়াও, অনুসন্ধানে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘যায় যায় দিন’ এর ওয়েবসাইটে ‘ঈশ্বরদী রেলগেটে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ৮ জনের নামে মামলা’ শিরোনামে ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বরে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “পাবনার ঈশ্বরদী রেলগেটে অবরোধের সমর্থনে রেল লাইনে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মেহেদী হাসানকে (৩৫) প্রধান আসামী করে ৮ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর) রাতে ঈশ্বরদী থানার উপ- পরিদর্শক (এসআই) সুব্রত কুমার বাদী হয়ে এ মামলা করেন।…মামলা সুত্র মতে , বিএনপির দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত অবরোধের সমর্থনে রোববার (২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপির ২০-২৫ জন যুবক রেলগেট এলাকায় রেল লাইনের ওপর আগুন জ্বালিয়ে অবরোধের সমর্থনে স্লোগান দেয়। এ সময় রেলগেটের কাছে একটি ট্রাকের হামলা চালিয়ে গ্লাস ভাঙচুর করে। জনমনে আতংক সৃষ্টি করতে অবরোধ সমর্থকরা পরপর ৬টি ককটেল বিস্ফোরন ঘটায়। মুহূর্তেই রেলগেট থেকে শুরু করে বাজার এবং শহরের প্রধান প্রধান সড়কের দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।”

উপরোল্লিখিত তথ্যপ্রমাণ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বরের এবং পাবনার ঈশ্বরদীর। পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কোনো মিছিলে শিবিরের হামলার সপক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বরে পাবনার ঈশ্বরদীর ভিডিওকে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের মিছিলে ছাত্রশিবিরের হামলার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে জিয়াউর রহমানের করমর্দন করার দৃশ্য দাবিতে এআই ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে জিয়াউর রহমানের করমর্দন করার একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, এটি ব্রিগেডিয়ার জিয়াউর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে মেজর জেনারেল ও উপ-সেনাপ্রধান পদে নিযুক্তির জন্যে সাবেক সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ সুপারিশ করায় বঙ্গবন্ধুর তা সানন্দে গ্রহণ করার দুর্লভ মুহুর্তের ভিডিও। ভিডিওটিতে সাবেক সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহর হাত থেকে বঙ্গবন্ধুকে একটি কাগজ গ্রহণ করতে দেখা যায়। এরপরই জিয়াউর রহমানের সাথে বঙ্গবন্ধুকে করমর্দন করতে দেখা যায়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

এরূপ দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

এরূপ দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে জিয়াউর রহমানের করমর্দন করার ভিডিওটি আসল নয়। এছাড়াও সাবেক সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ জিয়াউর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে মেজর জেনারেল ও উপ-সেনাপ্রধান পদে নিযুক্তির জন্যে ‍সুপারিশ করেছিলেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটিও সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ইন্টারনেটে বিদ্যমান অনুরূপ একটি ছবিকে এআই প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিওতে রূপান্তরিত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার ভিডিওটিতে Vidnoz Gen লেখা একটি জলছাপ দেখতে পায়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, Vidnoz একটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি। যার সহায়তায় ছবি থেকে ভিডিও তৈরি করা যায়। ভিডিওগুলো ৫ সেকেন্ড থেকে ৮ সেকেন্ডের হয়ে থাকে। যার নিচের দিকে Vidnoz Gen শীর্ষক জলছাপ থাকে। আলোচিত ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৫ সেকেন্ড। 

Screenshot: Facebook 

পরবর্তীতে ভিডিওটিতে ব্যবহৃত ছবির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ভিডিওর অনুরূপ ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে বঙ্গবন্ধুকে সাবেক সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহর হাত থেকে একটি কাগজ নিতে দেখা যাচ্ছে। ছবিতে দেখতে পাওয়া তাদের তিনজনের পোশাক ও পারিপার্শ্বিক অন্যান্য জিনিসের সাথে আলোচিত ভিডিওতে দেখতে পাওয়া সকল উপাদানের ‍হুবহু মিল পাওয়া যায়। অর্থাৎ, এ থেকে স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে যে, উক্ত ছবিটি ব্যবহার করেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। তবে ছবিটিতে সাবেক সেনাপ্রধান বঙ্গবন্ধুকে কিসের কাগজ দিচ্ছে তা উল্লেখ না থাকায় সেসময় তিনি জিয়াউর রহমানকে পদোন্নতির জন্যে সুপারিশপত্র দিচ্ছিলেন কিনা তা জানা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও অনুসন্ধানে ছবিটির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য খুঁজে না পাওয়ায় দাবিটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

জিয়াউর রহমানকে পদোন্নতির সুপারিশের তথ্যটির বিষয়ে অনুসন্ধানে পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ‘আমাকে সেনাপ্রধান ও জিয়াকে উপপ্রধান করে বঙ্গবন্ধু ভুল করেছিলেন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ১৫ আগস্ট শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সাবেক সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ বলেন, ‘সেনাবাহিনীর মধ্য থেকেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। আর আমি তখন ছিলাম সেনাপ্রধান। বঙ্গবন্ধু একটা মস্ত বড় ভুল করেছিলেন, সেটা হচ্ছে আমাকে সেনাপ্রধান করে আর জিয়াউর রহমানকে উপপ্রধান করে।’ উক্ত সভায় জিয়াউর রহমানকে উপপ্রধান করাটা ঠিক হয়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি সেনাপ্রধান হতে চাননি জানিয়ে বলেন, জেনারেল ওসমানী ৫ এপ্রিল ডেকে বললেন, “তুমি আর্মি টেক ওভার করো।” আমি বললাম, আমার সিনিয়র আছে। আমার তিনজন সিনিয়রের নাম বললাম। কর্নেল রব, দত্ত ও জিয়াউর রহমান। আমরা একই ব্যাচের হলেও জিয়াউর রহমান আমার চেয়ে ১ নম্বরের সিনিয়র ছিলেন। তখন আমি বললাম, এটা ঠিক হবে না।

এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আরেক মূলধারার গণমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৯ জানুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসূলের আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে গিয়ে জেনারেল শফিউল্লাহ বলেন, ১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল যখন আমাকে সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়, আমি প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর কাছে।’’ কারন হিসেবে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান তার চেয়ে সেনা একাডেমিতে সিনিয়র ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, “দুই ঘণ্টার আলোচনা শেষে, বঙ্গবন্ধু মন্তব্য করেন, ‘আমি তোমার কথা শুনেছি। এখানে একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার আছে।’” উত্তরে কে এম শফিউল্লাহ বলেন, “স্যার, আজ থেকে আমি এখন এবং ভবিষ্যতে পরিস্থিতির শিকার হব।” কিন্তু বঙ্গবন্ধু বললেন, “তুমি বড় বড় কথা বলছো। এখন যাও এবং আগামীকাল জেনারেল ওসমানী (তৎকালীন সেনাপ্রধান) থেকে তোমার দায়িত্ব নিয়ে নাও।”

সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, ”তিনি তখন বঙ্গবন্ধুর অফিস থেকে সরাসরি ৪৬ ব্রিগেডে চলে গিয়েছিলেন এবং কুমিল্লায় জিয়াউর রহমানকে ফোন করে পুরো ঘটনা খুলে বলেন। তিনি বলেন, “জিয়া আমার কথা শুনে বললেন, ‘ঠিক আছে শফিউল্লাহ, এখন বিদায়।’” এক সপ্তাহ পর, সেনাবাহিনীর উপপ্রধান পদের একটি নতুন পদ তৈরি করা হয় এবং জিয়াউর রহমানকে সেখানে নিয়োগ দেয়া হয়। জিয়াউর রহমান কুমিল্লা থেকে এসে সেই পদে যোগ দেন, তবে তিনি কিছুটা ক্ষুব্ধ ছিলেন, যা তিনি অন্যদের কাছে প্রকাশ করেছিলেন।”

অর্থাৎ, প্রাপ্ত তথ্য থেকে স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে, তৎকালীন সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ জিয়াউর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে উপ-সেনাপ্রধান পদে নিযুক্তির জন্যে বঙ্গবন্ধুর কাছে সুপারিশ করেননি।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে জিয়াউর রহমানের করমর্দন করার দুর্লভ মুহুর্তের ভিডিও দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীদের দিয়ে শিবিরের ডাকসু প্যানেল ঘোষণা দাবিতে ছাত্রলীগের নামে ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রচার

0

গতকাল (১৮ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অংশ নিতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ২৮ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। প্যানেলে সহসভাপতি (ভিপি) পদে মনোনীত হয়েছেন শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে রয়েছেন ঢাবি শাখার বর্তমান সভাপতি এস এম ফরহাদ এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মনোনীত হয়েছেন ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান। এরই প্রেক্ষিতে, সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীদের দিয়ে শিবিরের ডাকসু প্যানেল ঘোষণা, ছাত্রলীগের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে দাবিতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

কথিত এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীদের দিয়ে শিবিরের ডাকসু প্যানেল ঘোষণা, ছাত্রলীগের নিন্দা ও প্রতিবাদ

আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী সাদিক কায়েম ওসমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউ ছাত্রলীগ নেতা এস.এম ফরহাদ ভিপি ও জিএস পদে শিবিরের প্যানেল ঘোষণা করেছে। কর্মী হাইজেক করার কারনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এর তীব্র নিন্দা জানায়।

তারুণ্যের অনুভূতি-নিঃশ্বাস ধারণ করে, তারুণ্যের ভাষায় কথা বলে, তারুণ্যের নেতৃত্বেই বাংলাদেশবিরোধী সকল অপশক্তিকে উৎখাত করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।”

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীদের দিয়ে শিবিরের ডাকসু প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে দাবিতে ছাত্রলীগের নামে প্রচারিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এমন কোনো প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কথিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, একটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ১৮ আগস্ট, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে এই তারিখে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে এমন কোনো প্রেস বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে, দলটির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত অন্যান্য প্রেস বিজ্ঞপ্তির (,) সঙ্গে আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়। বিশ্লেষণে দেখা যায়, কথিত বিজ্ঞপ্তির ফ্রন্ট ডিজাইনের সাথে ছাত্রলীগের প্রচলিত বিজ্ঞপ্তিগুলোর ফন্টের অমিল রয়েছে। প্রচলিত বিজ্ঞপ্তিগুলোতে তারিখ হাতে লেখা হলেও আলোচিত বিজ্ঞপ্তিতে টাইপ করে লেখা দেখতে পাওয়া যায়। 

Comparison: Rumor Scanner 

ভুয়া বিজ্ঞপ্তির উৎস যাচাই

অনুসন্ধানে ‘Department of Politics: Republic of Bangladesh’ নামক ফেসবুক পেজে  গতকাল বেলা ১২:৩২ মিনিটে প্রচারিত একটি পোস্টে আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটি খুঁজে পাওয়া যায়। রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে এই পোস্টের পূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত বিজ্ঞপ্তি যুক্ত পোস্ট পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে, উক্ত পেজটি পর্যবেক্ষণ করে ইন্ট্রোতে ‘লীগের সুনাম বাদে, এখানে সব দলের সুনাম/ট্রল করা হয়।’ লেখা খুঁজে পাওয়া যায়। যা থেকে স্পষ্ট যে এটি একটি সার্কাজম পেজ।

Screenshot: Facebook 

ধারণা করা হচ্ছে, এই পেজ থেকেই সর্বপ্রথম এই প্রথম ভুয়া বিজ্ঞপ্তিটি সার্কাজম হিসেবে প্রচার করা হয়। যা পরবর্তীতে সত্য দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে। 

সুতরাং, সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীদের দিয়ে শিবিরের ডাকসু প্যানেল ঘোষণার দাবিতে ছাত্রলীগের নামে ফেসবুকে প্রচারিত এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া ও বানোয়াট। 

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s Own Analysis 

এটি কালনী এক্সপ্রেস কিংবা বাংলাদেশে কোনো ট্রেন যাত্রার ভিডিও নয়

বেশ কিছু দিন ধরে ‘তেমন কিছু না, কালনী এক্সপ্রেস দিয়ে আজমপুর থেকে সিলেট যাচ্ছিলাম’ ক্যাপশনে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।

ভিডিওটিতে, চলমান একটি ট্রেনের বগির ভেতর ট্রেনের ঝাঁকুনিতে যাত্রীদের অবস্থা দেখানো হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি কালনী এক্সপ্রেস বা বাংলাদেশের কোনো ট্রেন যাত্রার দৃশ্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভিডিওটি অন্তত ২০১৬ সাল থেকেই ইন্টারনেট মিয়ানমারের ট্রেন দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে। সেই পুরোনো ভিডিওকেই হাস্যরসাত্মকভাবে বাংলাদেশের কালনী এক্সপ্রেসের দৃশ্য দাবি করে প্রচার করার ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোর মন্তব্য ঘর পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অনেকেই ভিডিওটিকে মিয়ানমারের ট্রেন বলে উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে একে বাংলাদেশের ট্রেনযাত্রা, অর্থাৎ কালনী এক্সপ্রেসের ভিডিও ভেবে মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ এটিকে ভারতের ভিডিও বলেও দাবি করেছেন। আর কিছু মন্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে ভিডিওটি আসলে ব্যঙ্গাত্মকভাবে পোস্ট করা হয়েছে।

Collage : Rumor Scanner

বিষয়টি নিশ্চিত হতে ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Grand Marshal’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ‘Funny Myanma (Burma) train ride’ শিরোনামে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একটি দীর্ঘ সংস্করণ খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটির ক্যাপশন বর্ণনায় বলা হয়, ‘শাওয়ে নিয়ং (Shwe Nyaung) থেকে ইয়াঙ্গুন পর্যন্ত ৩০ ঘণ্টার ঝাঁকুনিভরা ট্রেন যাত্রা। দেখুন স্থানীয়রা কীভাবে ঘুমায়।’ (অনূদিত)

প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মিয়ানমারের ট্রেন দাবিতে ভিডিওটি ভিন্ন ভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলেও খুঁজে পাওয়া যায়। দেখুন – এখানে, এখানে

অর্থাৎ, ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়, বরং অনেক আগে থেকেই মিয়ানমারের ট্রেনযাত্রার দাবি করে প্রচারিত হয়ে আসছে।

সুতরাং, অন্তত ২০১৬ সাল থেকে মিয়ানমারের ট্রেন দাবিতে প্রচারিত একটি ভিডিওকে বাংলাদেশের কালনী এক্সপ্রেসের ঝাঁকুনির দৃশ্য বলে প্রচার করা হয়েছে, যা ব্যঙ্গাত্মক (সার্কাজম)।

তথ্যসূত্র

শেখ হাসিনাকে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেননি স্টিফেন ডুজারিক

সম্প্রতি, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ একটি জরুরি বৈঠক করেছে এবং বৈঠকটির পর জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক একটি জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছেন দাবিতে স্টিফেন ডুজারিক প্রেস ব্রিফংয়ে কথা বলছেন এমন একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। 

ভিডিওটি প্রচার করে ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আজ জাতিসংঘের জরুরী বৈঠকের পর জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক জরুরী সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

এতে বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনের নামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। স্টিফেন ডুজারিক আরো বলেন, একটি মেটিকুলাস প্লান করে গত একবছর ধরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে ড. ইউনুস, এতে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের উপর ইউনুস প্রশাসন গণহত্যা চালাচ্ছে। আগামী ২৫ দিনের মধ্যে ড. ইউনুস রাষ্ট্রপতির নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানো হবে বলে জানান তিনি।’ 

অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে,

এক. সম্প্রতি বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ একটি জরুরি বৈঠক করেছে এবং এরপর উক্ত বৈঠকটির বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক একটি জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

দুই. উক্ত সংবাদ সম্মেলনে ডুজারিক জানান, কোটা আন্দোলনের নামে শেখ হাসিনাকে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে।

তিন. ড. ইউনূস একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গত এক বছর ধরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছেন।

চার. পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে থাকায়, এতে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর ইউনূস প্রশাসন গণহত্যা চালাচ্ছে।

পাঁচ. কথিত সংবাদ সম্মেলনে ডুজারিক জানান, ২৫ দিনের মধ্যে ড. ইউনূস রাষ্ট্রপতির নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানো হবে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটির সাথের প্রচারিত দাবিগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়া, ভিডিওটিসাম্প্রতিক সময়েরও নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের ২৯শে জুলাই জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিকের বাংলাদেশের সেই সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করে আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, সম্প্রতি জাতিসংঘ বাংলাদেশ ইস্যুতে কোনো জরুরি বৈঠকে বসেনি এবং ডুজারিকও বাংলাদেশ নিয়ে এমন কোনো সংবাদ সম্মেলন করেননি।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। এতে, অডিও হিসেবে শুনা যায়, “I can tell you that The Secretary-General remains deeply concerned about the situation in Bangladesh. He notes reports of the resumption of student protests today and reiterates his call for calm and restraint. The Secretary-General is concerned about reported mass arrests of thousands of young people and political opposition in connection with the current … student movement. He is also alarmed by emerging reports about the excessive use of force by security forces and credible evidence of human rights violations.”

আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করে ক্যাপশনে বাংলাদেশ পরিস্থিতি বা শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়া ইস্যুতে যেসব দাবি করা হয়েছে সেসব বিষয়ে ভিডিওটিতে কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে ভিডিওটি জুলাই আন্দোলনের সময়ের বলে প্রতীয়মান হয়।

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘United Nations’ ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৩০ জুলাই ‘Venezuela, South Asia floods & other topics – Daily Press Briefing (29 July 2024) | United Nations’ ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটির ১ মিনিট ৭ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৩২ সেকেন্ড এবং ১ মিনিট ৪১ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৫০ সেকেন্ড অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

উক্ত ভিডিওটির ১ মিনিট থেকে ২ মিনিট ৫১ সেকেন্ড অংশে বাংলাদেশের সেই সময়ে চলমান ছাত্র আন্দোলন তথা কোটা সংষ্কার আন্দোলনের পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ইস্যুতে স্টিফেন ডুজারিক জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া জানান।

ডুজারিকের ব্রিফিং থেকে জানা যায়, জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশের সেই সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি তখন ছাত্র বিক্ষোভ আবার শুরু হওয়ার প্রেক্ষিতে সব পক্ষকে শান্ত থাকার এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান। তিনি ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার তরুণ ও রাজনৈতিক বিরোধীদের গণহারে গ্রেপ্তারের খবরেও চিন্তিত ছিলেন। তিনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের ওপর জোর দেন। এছাড়াও, নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের যে খবর সে সময় এসেছে  তাতে তিনি বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি সব ধরনের সহিংসতার দ্রুত, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং যারা এর জন্য দায়ী, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার কথা বলেছিলেন সেই সময় জাতিসংঘের উদ্বেগের বিষয়টি ঢাকা ও নিউ ইয়র্ক উভয় জায়গাতেই বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অব্যাহতভাবে জানিয়েছে বলে জানা যায়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই ব্রিফিংয়ের বিষয়ে প্রচারিত প্রতিলিপি থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

সুতরাং, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশের তৎকালীন আন্দোলন সম্পর্কিত বিষয়ে জাতিসংঘের মন্তব্যের ভিডিওকে সম্প্রতি শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়া ইস্যুতে আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিকের সংবাদ সম্মেলন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

গণধর্ষণ বা এসিড নিক্ষেপ নয়, এই কিশোরী মামাবাড়িতে নির্যাতনের শিকার

0

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন কিশোরীর ধারণকৃত একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “রাজধানীতে ৮ম শ্রেণির ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর,এসিড নিক্ষেপ❗ছাত্রীর পিঠ ও বুক পুড়ে গেছে।” 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত কিশোরীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ এবং এর পরবর্তীতে এসিড নিক্ষেপ করা হয়নি বরং, তাকে তার মামাবাড়িতে মামা-মামিরা নানাভাবে নির্যাতন করেছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চে ‘Cat world’ নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ৮ মার্চে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি সম্পর্কে ক্যাপশনে বলা হয়, “মামার বাড়ি কবিতার মতো বাস্তব কাহিনি.. “মামি আইলো লাঠি নিয়া পালাই পালাই”..কিন্তু রোজিনা পালাতে পারে নি.. দা*, প্লেট, গরম খুনতি, পুতারও বাদ যাই নি পায়ের আঙুল থেতলে দাওয়ার জন্য..”। 

এছাড়া আলোচ্য বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভি ও সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও উক্ত কিশোরী মামা-মামি কর্তৃক নির্যাতনের শিকার বলে উল্লেখ রয়েছে, সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের কোনো বিষয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মার্চ মাসে ‘বিবস্ত্র নারী- উলঙ্গ দেশ, এ কেমন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই তরুণীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়। সে সময়ে বিষয়টিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।