মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষিতে ‘ইরানের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা ইসরায়েলের এজেন্ট মোসাদের গোয়েন্দা ইহুদি ঘাটি ইরানের দখলে আটক গোয়েন্দা এজেন্ট।’ শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটিতে কয়েকজন ইউনিফর্ম পরিহিত সশস্ত্র ব্যক্তিকে একটি বন্দিশালায় ঢুকে কিছু বন্দির হাত ও চোখ বেঁধে ফেলতে দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ইরানে থাকা ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টদের আটকের নয় বরং, ইসরায়েলে ইরানি বোমা হামলা উদযাপনের অভিযোগে ইসরায়েলের কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর হামলার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির ওয়েবসাইটে গত ১৬ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্যাবলীর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
Comparison: Rumor Scanner
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইসরায়েলে ইরানি বোমা হামলা উদযাপনের অভিযোগে প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলি পুলিশ বাহিনী কুকুর সাথে নিয়ে ফিলিস্তিনি বন্দীদের কক্ষে হামলা চালায় এবং হাতকড়া পরানোর পর লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস দিয়ে তাদের ওপর হামলা করে।
এই বিষয়ে ফিলিস্তিন ভিত্তিক গণমাধ্যম The Palestine Chronicle এর ওয়েবসাইটে গত ১৭ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একই ভিডিও ও তথ্য পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের নয়।
সুতরাং, ইরানে থাকা ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টদের আটকের ভিডিও দাবিতে ইসরায়েলের কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওউপর হামলার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির সাথে চাঁদপুুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। ছবিটিতে তাদের দুইজনের পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুও রয়েছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দীপু মনির সাথে চাঁদপুুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের এই ছবিটি আসল নয় বরং, ২০২১ সালে অক্টোবরে ঢাকায় অষ্টম ইয়ং লায়ন ক্যারাটে টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠানের একটি ছবিতে দীপু মনির বড় ভাই জে আর ওয়াদুদ ওরফে টিপুর জায়গায় সম্পাদনার মাধ্যমে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের ছবি যুক্ত করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ছবিটি রিভার্স সার্চ করে ‘প্রজন্ম একাত্তর’ নামক ফেসবুক পেজ থেকে ২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: প্রজন্ম একাত্তর (Facebook)
এই পোস্টের প্রচারিত ছবির মধ্যে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির সাথে সাদৃশ্য আছে এমন একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, সেই ছবিতে দীপু মনির পাশে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক নয়, রয়েছেন দীপু মনির বড় ভাই জে আর ওয়াদুদ ওরফে টিপু। এছাড়া ছবির বাকী সকল বিষয়ের হুবহু মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
পোস্টটির ক্যাপশনেবলা হয়, ‘৮ম ইয়ং লায়ন বি খিউকুশিন ফুল কন্টাক কারাতে টুর্নামেন্ট ২০২১ইং বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ এবং বাংলাদেশ শাখা প্রধান শিহান মনির আহমেদ ভূঁইয়ার এর রচিত “খিউকুশিন কারাতে” বই এর মোড়ক উন্মোচন ব্লাক বেল্ট প্রদান ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এমপি আপা।’
এছাড়াও বলা হয়, ‘বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু ভাই, বাংলাদেশ আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু ভাই।।’
এছাড়াও, সেই সময় ‘Jahangir Hossen Nabir’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই বিষয়ে প্রচারিত পোস্টেও ছবিটি পাওয়া যায়। তবে, এই পোস্টের ছবিতেও শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক নয়, রয়েছেন দীপুমনির বড় ভাই জে আর ওয়াদুদ ওরফে টিপু।
এই পোস্ট দুটি ছবি পর্যলোচনা করে এটি নিশ্চিত যে ২০২১ সালের ছবিটি প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে দীপু মনির বড় ভাই জে আর ওয়াদুদ ওরফে টিপুর জায়গায় শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে কারাতে সংস্থা কিয়োকুশিনকাইকানের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ২২ অক্টোবর ঢাকায় অষ্টম ইয়ং লায়ন ক্যারাটে টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীনশিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. জে. আর. ওয়াদুদ টিপু ও এ.কে.এম. আফজালুর রহমান বাবু।
পরবর্তীতে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত ছবির বিষয়ে গত ২৪ জুন একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Sk Farid Ahmed Manik
পোস্টর ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম দোসর , বিনা ভোটের এমপি দীপু মনির সাথে আমার একটা কাট এন্ড পেষ্ট ছবি সামাজিক মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে ছড়ানো হয়েছে।
চাঁদপুরে দীর্ঘ ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের দিপু মনি দ্বারা আমরা নির্যাতিত হয়েছি। বার বার কারাগারে নেয়া হয়েছে। আমার ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যবসা বানিজ্য ধ্বংস করা হয়েছে। সন্ত্রাস দমন আইনে হত্যা সহ বহু মামলার আসামি করা হয়েছে। দিপু মনি আমার মার্কা ধানের শীষের নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। অথচ সেই দিপু মনির সাথে ছবি জুড়ে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যায়ভাবে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে! অন্যায় অপপ্রচার নয় , সুস্থ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় স্বাগত জানাই।আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। আমিন। (সবার জ্ঞাতার্থে আসল ও নকল ছবিগুলো সংযুক্ত করলাম)’
সুতরাং, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির সাথে চাঁদপুুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের ভাইরাল ছবিটি সম্পাদিত।
সম্প্রতি ভারতের রাজনৈতিক দল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর মন্তব্য দাবিতে “মোদি আর নেতানিয়াহুর কাছে আঞ্চলিক দেশ গুলো নিরাপদ নয়” শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম ‘ইত্তেফাক’ এর লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, “মোদি আর নেতানিয়াহুর কাছে আঞ্চলিক দেশ গুলো নিরাপদ নয়- প্রিয়াঙ্কা গান্ধী” শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম ‘ইত্তেফাক’ কোনো ফটোকার্ড প্রচার করেনি এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, “নেতানিয়াহু একটি জাতিকে ধ্বংস করছে, ভারত তাকে সমর্থন ও উৎসাহও দিচ্ছে – প্রিয়াঙ্কা গান্ধী” শীর্ষক শিরোনামে ‘ইত্তেফাক’ এর প্রচারিত ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘ইত্তেফাক’ এর লোগো দেখা যায়। এরই সূত্র ধরে ‘ইত্তেফাক’ এর ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করলে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, ‘ইত্তেফাক’ এর ফেসবুক পেজে গত ১৪ জুন “নেতানিয়াহু একটি জাতিকে ধ্বংস করছে, ভারত তাকে সমর্থন ও উৎসাহও দিচ্ছে – প্রিয়াঙ্কা গান্ধী” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
Photocard Comparison by Rumor Scanner
উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে উক্ত ফটোকার্ডের লোগো, ছবি ও “প্রিয়াঙ্কা গান্ধী” শব্দগুচ্ছের ফন্টের মিল রয়েছে। তবে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর মূল বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত লেখা ও লেখার ফন্টের বৈসাদৃশ্য পাওয়া যায়। ইত্তেফাক এর উক্ত মূল ফটোকার্ডটিতে “নেতানিয়াহু একটি জাতিকে ধ্বংস করছে, ভারত তাকে সমর্থন ও উৎসাহও দিচ্ছে” শীর্ষক বাক্য থাকলেও প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে এর পরিবর্তে “মোদি আর নেতানিয়াহুর কাছে আঞ্চলিক দেশ গুলো নিরাপদ নয়” শীর্ষক বাক্য লেখা হয়েছে।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় “ইত্তেফাক” এর আসল ফটোকার্ড সম্পাদনা (এডিট) করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
মূল ফটোকার্ড সম্বলিত “ইত্তেফাক” এর পোস্টে মন্তব্যের ঘরে পাওয়া গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও মানবাধিকার রক্ষার প্রস্তাবে ভারত ভোটদানে বিরত থাকায় কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপি’র বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তিনি এই সিদ্ধান্তকে ‘লজ্জাজনক ও হতাশাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। খবর ইকোনমিক টাইমস। শনিবার (১৪ জুন) এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ দেওয়া পোস্টে প্রিয়াঙ্কা বলেন, এই সিদ্ধান্তের কোনও নৈতিক বা কূটনৈতিক ভিত্তি নেই। প্রকৃত আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের জন্য ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহস দরকার। তিনি আরও বলেন, যখন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি পুরো জাতিকে ধ্বংস করছেন, তখন ভারত শুধু নীরব সমর্থক নয়, বরং ইসরায়েলের ইরানে হামলা এবং দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলকে উৎসাহিত করছে। তার মতে, এটি একটি দেশের সার্বভৌমত্বের চরম লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক নীতিমালার সম্পূর্ণ বিরোধী।..” উক্ত প্রতিবেদনের কোথাও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নামে প্রচারিত মন্তব্যটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, “মোদি আর নেতানিয়াহুর কাছে আঞ্চলিক দেশ গুলো নিরাপদ নয়- প্রিয়াঙ্কা গান্ধী” শীর্ষক দাবিতে ইত্তেফাক এর লোগো সম্বলিত প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।
সাম্প্রতিক সময়ে হওয়া ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একটি পুরোনো বক্তব্য সামনে আসে যেখানে তাকে বলতে দেখা যায়, “সর্ববৃহৎ মিশন হলো—একটি উগ্র ইসলামপন্থী শাসনের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র যেন না পৌঁছায়, অথবা পারমাণবিক অস্ত্রের হাতে যেন উগ্র ইসলামপন্থী শাসন না আসে। প্রথমটি হলো ইরান, দ্বিতীয়টি হলো পাকিস্তান। কারণ, যদি এসব চরমপন্থী শাসনব্যবস্থার হাতে পারমাণবিক অস্ত্র চলে যায়, তাহলে তারা গত প্রায় সাত দশকে যে নিয়ম-কানুন মানা হয়েছে, সেগুলো মানবে না।” (অনূদিত)
এরপর এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য দাবিতে একটি বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত উক্ত বক্তব্যে ট্রাম্পের কণ্ঠে শোনা যায়, “পাকিস্তান ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে, কারণ ইসরায়েল ভুল করে বলেছিল, ইরানের পরেই পাকিস্তান দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। পাকিস্তান এখন তার আকাশ, স্থল ও নৌবাহিনীসহ পুরোপুরি সতর্ক রয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, যদি ইসরায়েল আবার ইরানকে আক্রমণ করে, তাহলে পাকিস্তান সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলকে ধ্বংস করে দেবে। কিন্তু আমি যা বলছি তা হলো — পাকিস্তানের উচিত এটা না করা। পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো সমস্যা নেই। সেনাবাহিনী ইতোমধ্যেই সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আমার মতে, পাকিস্তানের এই যুদ্ধে জড়ানো উচিত নয়। এটি ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধ। আমাদের এই অঞ্চলে শান্তি দরকার, লড়াই বন্ধ করা দরকার — মাঝখানে জড়ানো নয়। এটাই সত্য, এটাই বুদ্ধিমানের কাজ।” (অনূদিত)
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তান ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে, কারণ ইসরায়েল ভুল করে বলেছিল পাকিস্তান ইরানের পরেই দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে শীর্ষক কোনো মন্তব্য ডোনাল্ড ট্রাম্প করেননি। বরং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তার কণ্ঠ নকল করে তৈরি একটি ভিডিওর মাধ্যমে এই দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা যায়, ট্রাম্পের ঠোঁটের নড়াচড়া ও বক্তব্যের মধ্যে অসঙ্গতি রয়েছে।
উক্ত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ট্রাম্পের একই স্থান ও একই পোশাকে ‘The White House’ এর ইউটিউব চ্যানেল থেকে গত ৩০ মে তারিখে সম্প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
তবে আলোচিত বক্তব্যটি কোথাও পাওয়া যায়নি। এমনকি, তার এ ধরনের বক্তব্য লিখিত আকারেও দেশীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি।
পরবর্তীতে ভিডিওটির অডিও অংশ ডিপফেক শনাক্তকরণ টুল ‘Resemble AI’-এর মাধ্যমে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, উক্ত শনাক্তকরণ টুলটি ট্রাম্পের অডিওকে ভুয়া বলে শনাক্ত করেছে।
Collage: Rumor Scanner/Resemble, DeepFake-o-meter
এছাড়া, ডিপফেক শনাক্তকরণ টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’-এর একাধিক শনাক্তকরণ টুল অনুসারে, অডিওটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ থেকে ১০০ শতাংশ।
সুতরাং, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কণ্ঠ নকল করে তৈরি একটি ভিডিওকে ‘পাকিস্তান ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে, কারণ ইসরায়েল ভুল করে বলেছিল পাকিস্তান ইরানের পরেই দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে’ শীর্ষক ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত একটি ভিডিও-ই প্রায় ১০ লাখ ৬০ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ৩৩ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়াও জানানো হয়েছে।
আলোচিত পোস্টটির মন্তব্যের ঘর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওকে বাস্তব ভেবে অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে ভিডিওর কথিত পুলিশ সদস্যকে ভারতীয় ভেবে মন্তব্য করেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জুলাইয়ে পুলিশ হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ সদস্যের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে পুলিশ কর্মকর্তার আলোচিত এই ভিডিওর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও রিউমর স্ক্যানার টিমের বিশ্লেষণে ভিডিওতে একাধিক এআই-জনিত অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে। ভিডিওতে রাস্তা দিয়ে একই কাপলকে পরপর দুবার যেতে দেখা যায়। তাছাড়া ভিডিওটির শুরুতে স্ক্রিনের নিচের দিকে একটি লেখা দেখতে পাওয়া যায়। যা অসঙ্গতিপূর্ণ। লেখাটির কিছু অংশের সাথে ভিডিওর ব্যক্তির বক্তব্যের মিল পাওয়া গেলেও বাকি অংশগুলো অর্থপূর্ণ নয়। পাশাপাশি রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনেও অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা যায়।
Screenshot: Facebook
ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।
Screenshot: Facebook
বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম Cantilux এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৬৬ শতাংশ।
Screenshot: Cantilux
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Authentic News Bangladesh নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ২১ জুন দুপুর ৩ টা ৪৮ মিনিটে প্রচারিত সম্ভাব্য প্রথম ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর মন্তব্যের ঘরে পোস্টকারী জানান ভিডিওটি এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।
Screenshot: Facebook
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে জুলাই আন্দোলনে হওয়া পুলিশ হত্যার বিচার নিয়ে এক পুলিশ সদস্যের মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
২৪ জুন রাতে ফেসবুকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন এক পোস্টে লেখেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও আসিফ ভূঁইয়াকে বলব, প্রয়োজনে আমাকে ধরে বুকে গুলি চালান। কিন্তু আমার পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য অন্য কারও বুকে ছুরি চালাবেন না।’ গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, এর জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ফেসবুকে বলেছেন, ‘বুকটা ধ্বক করে উঠেছিল। একটা মাছিকেও কখনও গুলি করিনি।’ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ওই রাতে এক ফেসবুক পোস্টে এই মন্তব্য করেন এবং ইশরাকের বক্তব্য সংক্রান্ত একটি সংবাদের স্ক্রিনশট যুক্ত করেন।
একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের পোস্টের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ‘বুকটা ধ্বক করে উঠেছিল। একটা মাছিকেও কখনও গুলি করিনি’ শীর্ষক মন্তব্য করেননি। বরং, ভিন্ন একজন আসিফের পোস্টকে উপদেষ্টা আসিফের বক্তব্য হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ এবং ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সংশ্লিষ্ট পোস্টের খোঁজ করা হয়। কিন্তু গণমাধ্যমে বর্ণিত মন্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো পোস্ট সেখানে পাওয়া যায়নি।
তবে ‘Asif Shibgat Bhuiyan’ নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইলে ২৪ জুন রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে দেওয়া একটি পোস্টে আলোচিত মন্তব্যটি হুবহু পাওয়া যায়। সেখানে ইশরাক হোসেনের বক্তব্যসংক্রান্ত কালের কণ্ঠের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি পোস্টের স্ক্রিনশটও দেখা যায়, যা গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।
Screenshot: Facebook.
আসিফ সিবগাত ভূঞার ফেসবুক প্রোফাইল পর্যবেক্ষণে জানা যায়, তিনি একজন লেখক। রকমারির তার প্রোফাইল অনুযায়ী, তিনি সেইন্ট জোসেফ স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করছেন।
অর্থাৎ, আসিফ সিবগাত ভূঞা এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া দুজন ভিন্ন ব্যক্তি। সুতরাং, ইশরাকের পোস্টের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ ‘বুকটা ধ্বক করে উঠেছিল। একটা মাছিকেও কখনও গুলি করিনি’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত সংবাদটি মিথ্যা।
সাম্প্রতিক সময়ে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষিতে ইরানে হামলার প্রতিবাদে পাকিস্তানের জনসাধারণ রাস্তায় নেমেছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ইরানে হামলার প্রতিবাদে পাকিস্তানে জনসাধারণের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানানোর কোনো ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে ও ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে পাকিস্তানের করাচিতে হওয়া পুরোনো বিক্ষোভ সমাবেশের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে এটির কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Gemsofislamm নামের একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ১৫ এপ্রিল প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
পোস্টটির প্রথম ভিডিওটি পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাথে এটির হুবহু মিল রয়েছে। এছাড়াও উভয় ভিডিওতেই প্রতিবাদী জনসাধারণকে একই স্লোগান দিতে শোনা যায়। পোস্টটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, এটি ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের চালানো গণহত্যার প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিনি জনসাধারণের পক্ষে পাকিস্তানের করাচিতে অনুষ্ঠিত হওয়া বিক্ষোভের ভিডিও। যেখানে দশ হাজারেরও অধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন বলে পোস্টটিতে উল্লেখ করা হয়।
পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে লেবানিস গণমাধ্যম Al Mayadeen English এর ফেসবুক পেজে ১৫ এপ্রিল প্রচারিত একই ঘটনার আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে আলোচিত ফুটেজটি ব্যতীতও সেদিনের বিক্ষোভের আরও বেশ কয়েকটি ফুটেজ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও পোস্টটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, উক্ত বিক্ষোভ কর্মসূচিটি ১৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়।
Screenshot: Facebook
তুরস্কভিত্তিক গণমাধ্যম Anadolu Ajansı এর ওয়েবসাইটে গত ১৩ এপ্রিল Tens of thousands flood streets of Pakistan in solidarity with Palestiniansশীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও বিক্ষোভ কর্মসূচিটি সংক্রান্ত একই তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়াও ইরান-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাত শুরু হয় গত ১৩ জুন ইরানের পরমাণুকেন্দ্রসহ অন্যান্য সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ইসরায়েলি হামলা ও এর প্রেক্ষিতে একইদিনে ইরানের ইসরায়েলে হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে। সে বিবেচনায়ও আলোচিত ভিডিওটির সাথে ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতের কোনো সম্পর্ক নেই।
সুতরাং, সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ইরানে হামলা চালানোর প্রতিবাদে পাকিস্তানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে দাবিতে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে পাকিস্তানে হওয়া পুরোনো বিক্ষোভের ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সাম্প্রতিক সময়ের ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের ভিডিও দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘অনেক জ্বালিয়েছো এখন দেখেন সাদ কেমন তোমাদেরও আরামের ঘুম হারাম’ (বানান অপরিবর্তিত)। এছাড়াও, #iran #Israel হ্যাশট্যাগও ব্যবহার করা হয়।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি ইরান-ইসরায়েল সাম্প্রতিক সংঘাতের ভিডিও নয় বরং, ২০২০ সালের ০৪ আগস্টে লেবাননের বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওর প্রথম ও দ্বিতীয় দৃশ্য যাচাই
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এর ‘DW News’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট ‘Beirut explosion – Multi-angle footage | DW News’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রাচরিত একটি ইউটিউব শর্টস ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর প্রথম ও দ্বিতীয় দৃশ্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
জানা যায়, এটি ২০২০ সালের আগস্টে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিস্ফোরণের ঘটনা।
ভিডিওর তৃতীয় দৃশ্য যাচাই
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Trending Watchers’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ৪ আগস্ট ‘Explosion in Beirut’ শীর্ষক শিরোনামের প্রচারিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর তৃতীয় দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।
মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষিতে জ্বলন্ত বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়ার একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “তেলাভিভে জলন্ত ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ছে ইহুদিবাদীরা | Zionist jumps from burning building in Telaviv”. অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে যে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাত চলাকালীন দৃশ্যের।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাত চলাকালীন সময়ের দৃশ্যের নয় বরং প্রায় চার মাস পূর্বে গত ০১ মার্চে ইসরায়েলের তিবেরিয়াস নামক শহরের একটি বিল্ডিংয়ে ঘটা অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্যটও ইসরায়েলের তেল আবিব শহরের নয় বরং তিবেরিয়াস নামক শহরের।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ইসরায়েল ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ynet’ এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ০১ মার্চে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
ভিডিওটি সম্পর্কে ইনস্টাগ্রাম পোস্টটিতে বলা হয়, “১৭ জন তিবেরিয়াসের একটি ভাড়ার ভিলায় অগ্নিকাণ্ডে আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১১ জন শিশু। আগুন থেকে বাঁচতে কয়েকজনকে দ্বিতীয় তলা থেকে লাফ দিতে দেখা গেছে। ৫ জনের মাঝারিভাবে আহত হয়েছেন।” (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত)
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে উক্ত সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে গত ০১ মার্চে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “একটি ভাড়া করা ভিলায় আগুন লেগেছে। নিচতলা পুরোপুরি পুড়ে গেছে এবং আটকা পড়া কিছু লোক দ্বিতীয় তলা থেকে লাফিয়ে পড়েছে। পাঁচজন মাঝারি ধরনের আঘাত পেয়েছেন এবং বাকিরা সামান্য আহত হয়েছেন।” (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত)
এছাড়াও, “תמיר שלום” নামক একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকেও আলোচিত ভিডিওটি একই দাবিতে গত ০১ মার্চে প্রচার হতে দেখা যায়। অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পূর্বের সময়ের। অগ্নিকাণ্ডের উক্ত ঘটনাটি ইসরায়েলের শহর তিবেরিয়াসে ঘটেছে, তেল আবিব শহরে নয়। উল্লেখ্য যে, উক্ত অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঠিক কীভাবে হলো সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সুতরাং, সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাত চলাকালীন সময়ের দৃশ্য দাবিতে প্রায় চার মাস পূর্বে গত ০১ মার্চে ইসরায়েলের তিবেরিয়াস নামক শহরের একটি বিল্ডিংয়ে ঘটা অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের বাসায় ভিজিডির চাল পাওয়া গেছে দাবিতে একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে প্রচার করা হয়েছে। পাশাপাশি ভিজিডির চাল জব্দ হওয়ার ঘটনায় জামায়াতের নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে দাবিতে ‘ভিজিডির ৯৬ বস্তা চাল জব্দ জামাত নেতা কারাগারে’ শীর্ষক শিরোনামে কালবেলার লোগো সম্বলিত আরেকটি ফটোকার্ডও ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সারজিস আলম কিংবা কথিত জামায়াত নেতার বাড়ি থেকে ভিজিডির চাল জব্দের দাবিগুলো সঠিক নয়। এমন দাবিতে কালবেলা কিংবা অন্যকোনো গণমাধ্যম কোনো ফটোকার্ডও প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে ভিজিডির চাল জব্দের পর তাকে আটকের ঘটনায় আইবি নিউজ নামের একটি ফেসবুকভিত্তিক সংবাদ প্লাটফর্ম এবং কালবেলায় প্রচারিত দুটি পৃথক পৃথক ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ড দুটি তৈরি করা হয়েছে।
ফটোকার্ড যাচাই ১
সারজিস আলমের বাসায় ভিজিডির চাল পাওয়ার দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে IB News নামের ফেসবুকভিত্তিক একটি সংবাদ প্লাটফর্মের পেজে গত ৩১ মে ভিজিডির ৯৬ বস্তা চাল জব্দ, বিএনপি নেতা আটক শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
Photocard Comparison by Rumor Scanner
ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ফটোকার্ডের লোগো,তারিখ, স্থানের নাম, ব্যক্তির ছবি শিরোনাম ব্যতীত বাকি অংশের পুরো সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের ডিজাইনের মিল রয়েছে। মূলত, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত ফটোকার্ডের উপরের অংশ মুছে দিয়ে বিএনপি নেতার ছবির স্থলে সারজিস আলমের ছবি যুক্ত করে এবং ‘ভিজিডির ৯৬ বস্তা চাল জব্দ, বিএনপি নেতা আটক’ শীর্ষক শিরোনামের পরিবর্তে ‘ভিজিডির চাল পাওয়া গেছে সারজিস আলম এর বাসায়’ শীর্ষক শিরোনাম বসিয়ে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
পরবর্তীতে উক্ত পোস্টের মন্তব্যের ঘরে প্রাপ্ত পূর্ণ সংবাদ থেকে জানা যায়, গত ২৯ মে রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানে শেরপুরের নকলা উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ভিজিডি) ৯৬ বস্তা সরকারি চাল অবৈধভাবে মজুত রাখার অভিযোগে চর অষ্টধর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৬ থেকে ৭ জনের নামে মামলার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরদিন আদালতে পাঠানো হয় বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও উক্ত প্রতিবেদনের কোথাও এ ঘটনার সাথে সারজিস আলমের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
ফটোকার্ড যাচাই ২
পরবর্তীতে ভিজিডির চাল জব্দ হওয়ার ঘটনায় জামায়াত নেতাকে কারাগারে পাঠানোর দাবিতে প্রচারিত কালবেলার লোগো সম্বলিত ফটোকার্ডটির বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে কালবেলার লোগোর পাশাপাশি এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ৩০ মে, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
কালবেলার লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ৩০ মে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, কালবেলার ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডের শিরোনাম ব্যতীত বাকি সকল উপাদানের সাথে উক্ত ফটোকার্ডের হুবহু মিল রয়েছে। এ থেকে স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত ফটোকার্ডের শিরোনাম পরিবর্তন করে এর স্থলে ‘ভিজিডির ৯৬ বস্তা চাল জব্দ জামাত নেতা কারাগারে’ শীর্ষক শিরোনাম যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি ফটোকার্ড পোস্টটির মন্তব্যের ঘর থেকে প্রাপ্ত মূল প্রতিবেদন থেকেও আইবি নিউজের মতো একই তথ্য জানা যায়।
সুতরাং, ভিজিডির চাল জব্দের ঘটনার সারজিস আলম এবং কথিত জামায়েত নেতাকে জড়িয়ে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো এডিটেড বা সম্পাদিত।