সম্প্রতি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের বাসায় ভিজিডির চাল পাওয়া গেছে দাবিতে একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে প্রচার করা হয়েছে। পাশাপাশি ভিজিডির চাল জব্দ হওয়ার ঘটনায় জামায়াতের নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে দাবিতে ‘ভিজিডির ৯৬ বস্তা চাল জব্দ জামাত নেতা কারাগারে’ শীর্ষক শিরোনামে কালবেলার লোগো সম্বলিত আরেকটি ফটোকার্ডও ফেসবুকে প্রচার করা হয়।

সারজিস আলমের বাসায় দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ড দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
জামায়াত নেতার বাড়ি থেকে চাল জব্দ দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ড দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সারজিস আলম কিংবা কথিত জামায়াত নেতার বাড়ি থেকে ভিজিডির চাল জব্দের দাবিগুলো সঠিক নয়। এমন দাবিতে কালবেলা কিংবা অন্যকোনো গণমাধ্যম কোনো ফটোকার্ডও প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে ভিজিডির চাল জব্দের পর তাকে আটকের ঘটনায় আইবি নিউজ নামের একটি ফেসবুকভিত্তিক সংবাদ প্লাটফর্ম এবং কালবেলায় প্রচারিত দুটি পৃথক পৃথক ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ড দুটি তৈরি করা হয়েছে।
ফটোকার্ড যাচাই ১
সারজিস আলমের বাসায় ভিজিডির চাল পাওয়ার দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে IB News নামের ফেসবুকভিত্তিক একটি সংবাদ প্লাটফর্মের পেজে গত ৩১ মে ভিজিডির ৯৬ বস্তা চাল জব্দ, বিএনপি নেতা আটক শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।

ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ফটোকার্ডের লোগো,তারিখ, স্থানের নাম, ব্যক্তির ছবি শিরোনাম ব্যতীত বাকি অংশের পুরো সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের ডিজাইনের মিল রয়েছে। মূলত, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত ফটোকার্ডের উপরের অংশ মুছে দিয়ে বিএনপি নেতার ছবির স্থলে সারজিস আলমের ছবি যুক্ত করে এবং ‘ভিজিডির ৯৬ বস্তা চাল জব্দ, বিএনপি নেতা আটক’ শীর্ষক শিরোনামের পরিবর্তে ‘ভিজিডির চাল পাওয়া গেছে সারজিস আলম এর বাসায়’ শীর্ষক শিরোনাম বসিয়ে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
পরবর্তীতে উক্ত পোস্টের মন্তব্যের ঘরে প্রাপ্ত পূর্ণ সংবাদ থেকে জানা যায়, গত ২৯ মে রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানে শেরপুরের নকলা উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ভিজিডি) ৯৬ বস্তা সরকারি চাল অবৈধভাবে মজুত রাখার অভিযোগে চর অষ্টধর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৬ থেকে ৭ জনের নামে মামলার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরদিন আদালতে পাঠানো হয় বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও উক্ত প্রতিবেদনের কোথাও এ ঘটনার সাথে সারজিস আলমের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
ফটোকার্ড যাচাই ২
পরবর্তীতে ভিজিডির চাল জব্দ হওয়ার ঘটনায় জামায়াত নেতাকে কারাগারে পাঠানোর দাবিতে প্রচারিত কালবেলার লোগো সম্বলিত ফটোকার্ডটির বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে কালবেলার লোগোর পাশাপাশি এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ৩০ মে, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
কালবেলার লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ৩০ মে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, কালবেলার ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে ৩০ মে গণমাধ্যমটির পেজে ভিজিডির ৯৬ বস্তা চাল জব্দ বিএনপি নেতা কারাগারে শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডের শিরোনাম ব্যতীত বাকি সকল উপাদানের সাথে উক্ত ফটোকার্ডের হুবহু মিল রয়েছে। এ থেকে স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত ফটোকার্ডের শিরোনাম পরিবর্তন করে এর স্থলে ‘ভিজিডির ৯৬ বস্তা চাল জব্দ জামাত নেতা কারাগারে’ শীর্ষক শিরোনাম যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি ফটোকার্ড পোস্টটির মন্তব্যের ঘর থেকে প্রাপ্ত মূল প্রতিবেদন থেকেও আইবি নিউজের মতো একই তথ্য জানা যায়।
সুতরাং, ভিজিডির চাল জব্দের ঘটনার সারজিস আলম এবং কথিত জামায়েত নেতাকে জড়িয়ে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো এডিটেড বা সম্পাদিত।
তথ্যসূত্র
- IB News Facebook Page Post
- Kalbela Facebook Page Post
- Kalbela Website: ভিজিডির ৯৬ বস্তা চাল জব্দ, বিএনপি নেতা কারাগারে