সাম্প্রতিক সময়ে হওয়া ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একটি পুরোনো বক্তব্য সামনে আসে যেখানে তাকে বলতে দেখা যায়, “সর্ববৃহৎ মিশন হলো—একটি উগ্র ইসলামপন্থী শাসনের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র যেন না পৌঁছায়, অথবা পারমাণবিক অস্ত্রের হাতে যেন উগ্র ইসলামপন্থী শাসন না আসে। প্রথমটি হলো ইরান, দ্বিতীয়টি হলো পাকিস্তান। কারণ, যদি এসব চরমপন্থী শাসনব্যবস্থার হাতে পারমাণবিক অস্ত্র চলে যায়, তাহলে তারা গত প্রায় সাত দশকে যে নিয়ম-কানুন মানা হয়েছে, সেগুলো মানবে না।” (অনূদিত)
এরপর এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য দাবিতে একটি বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত উক্ত বক্তব্যে ট্রাম্পের কণ্ঠে শোনা যায়, “পাকিস্তান ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে, কারণ ইসরায়েল ভুল করে বলেছিল, ইরানের পরেই পাকিস্তান দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। পাকিস্তান এখন তার আকাশ, স্থল ও নৌবাহিনীসহ পুরোপুরি সতর্ক রয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, যদি ইসরায়েল আবার ইরানকে আক্রমণ করে, তাহলে পাকিস্তান সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলকে ধ্বংস করে দেবে। কিন্তু আমি যা বলছি তা হলো — পাকিস্তানের উচিত এটা না করা। পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো সমস্যা নেই। সেনাবাহিনী ইতোমধ্যেই সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আমার মতে, পাকিস্তানের এই যুদ্ধে জড়ানো উচিত নয়। এটি ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধ। আমাদের এই অঞ্চলে শান্তি দরকার, লড়াই বন্ধ করা দরকার — মাঝখানে জড়ানো নয়। এটাই সত্য, এটাই বুদ্ধিমানের কাজ।” (অনূদিত)

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তান ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে, কারণ ইসরায়েল ভুল করে বলেছিল পাকিস্তান ইরানের পরেই দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে শীর্ষক কোনো মন্তব্য ডোনাল্ড ট্রাম্প করেননি। বরং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তার কণ্ঠ নকল করে তৈরি একটি ভিডিওর মাধ্যমে এই দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা যায়, ট্রাম্পের ঠোঁটের নড়াচড়া ও বক্তব্যের মধ্যে অসঙ্গতি রয়েছে।
উক্ত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ট্রাম্পের একই স্থান ও একই পোশাকে ‘The White House’ এর ইউটিউব চ্যানেল থেকে গত ৩০ মে তারিখে সম্প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়।

তবে আলোচিত বক্তব্যটি কোথাও পাওয়া যায়নি। এমনকি, তার এ ধরনের বক্তব্য লিখিত আকারেও দেশীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি।
পরবর্তীতে ভিডিওটির অডিও অংশ ডিপফেক শনাক্তকরণ টুল ‘Resemble AI’-এর মাধ্যমে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, উক্ত শনাক্তকরণ টুলটি ট্রাম্পের অডিওকে ভুয়া বলে শনাক্ত করেছে।

এছাড়া, ডিপফেক শনাক্তকরণ টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’-এর একাধিক শনাক্তকরণ টুল অনুসারে, অডিওটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ থেকে ১০০ শতাংশ।
সুতরাং, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কণ্ঠ নকল করে তৈরি একটি ভিডিওকে ‘পাকিস্তান ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে, কারণ ইসরায়েল ভুল করে বলেছিল পাকিস্তান ইরানের পরেই দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে’ শীর্ষক ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- The White House – President Trump Participates in a Press Conference with Elon Musk
- Resemble AI
- Deepfake-o-meter
- Rumor Scanner’s analysis