সাবের হোসেন চৌধুরী প্রশাসনিক বিভাগে এমসিসি’র আজীবন সদস্যপদ পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি নয়

সম্প্রতি, তথ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স’ এর মে মাসের সংখ্যায় ১৬তম পৃষ্ঠায় “মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) আজীবন সদস্য মাশরাফী” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য প্রচার করা হয়েছে। 

যেখানে দাবি করা হয়েছে, “ক্রিকেটের আইনপ্রণেতা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (MCC) আজীবন সদস্যপদ পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি খেলোয়াড় জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্তুজা। এ বছর আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হয় ১৯ জনকে, যেখানে আছেন ৮টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের সাবেক খেলোয়াড়েরা। ২০০৩ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে প্রশাসনিক বিভাগে MCC’র আজীবন সদস্যপদ পান সাবেক বিসিবি সভাপতি এবং ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। ১৭৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত MCC ক্রিকেটের অগ্রযাত্রায় বড় ভূমিকা পালন করে আসছে। ১৮৩৫০ জন পূর্ণ ও ৬০০০ সহযোগী সদস্য আছেন MCC’র।”

Screenshot from ‘কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স’

অর্থাৎ, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স দাবি করছে, ২০০৩ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে প্রশাসনিক বিভাগে MCC’র আজীবন সদস্যপদ পান সাবেক বিসিবি সভাপতি এবং ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০০৩ সালে প্রশাসনিক বিভাগে এমসিসি’র (মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব) আজীবন সদস্যপদ পাননি সাবেক বিসিবি সভাপতি এবং ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বরং তিনি দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এমসিসি’র আজীবন সদস্য পদ পেয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে ১৯৮২ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে প্রশাসনিক বিভাগে এমসিসি’র আজীবন সদস্যপদ পান বিসিবির সাবেক সহ–সভাপতি প্রয়াত রাইসউদ্দিন আহমেদ।

অনুসন্ধানের শুরুতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, এমসিসির (মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব) ওয়েবসাইটে গত ০৫ এপ্রিল “MCC ANNOUNCES LATEST COHORT OF HONORARY LIFE MEMBERS” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from Lord’s website 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ৮টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মোট ১৭ জন নারী ও পুরুষ ক্রিকেটারকে এবার আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে প্লেয়িং ক্যাটাগরিতে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে আছেন মাশরাফি। এছাড়া, ক্রিকেটে অবদান রাখার জন্য নন প্লেয়িং ক্যাটাগরিতে পেয়েছেন আরও দুইজন। 

Screenshot from Lord’s website  

এমসিসির এমন সম্মাননা প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সাবের হোসেন চৌধুরী পেয়েছেন কিনা, সে বিষয়ে জানতে ‘প্রথম  আলো’ এর ওয়েবসাইটে গত ০৫ এপ্রিলে “প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে এমসিসির আজীবন সদস্য মাশরাফি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রথম আলো লিখেছে, “এর আগে বাংলাদেশ থেকে এমসিসির সম্মানসূচক এই সদস্যপদ পেয়েছিলেন ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত দুজন। বিসিবির সাবেক সহ–সভাপতি প্রয়াত রাইসউদ্দিন আহমেদ ছিলেন এমসিসির সদস্যপদ পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি। এরপর সদস্যপদ পান সাবেক বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।” 

Screenshot from ‘Prothom Alo’ website

পাশাপাশি, গত ০৫ এপ্রিল ‘Cricket97’ নামের একটি টুইটার একাউন্ট থেকে রাইসউদ্দিন আহমেদ নামক ব্যক্তিকে এমসিসির পক্ষ থেকে পাঠানো আজীবন সদস্য পদ সংক্রান্ত একটি চিঠির ছবি টুইট করা হয়। 

Screenshot source: Twitter 

তবে, এমসিসির ওয়েবসাইটে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে রাইসউদ্দিন আহমেদের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিম, এমসিসি’র ওয়েবসাইটে আজীবন সদস্যদের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখেছে যে, তালিকার সকলেই বেঁচে আছেন। মৃত ব্যক্তির নাম ওয়েবসাইট থেকে মুছে ফেলা হতে পারে এমন সম্ভাবনা থেকে অধিকতর অনুসন্ধানে এমসিসি’র টুইটার অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ০৯ আগস্ট রুডি কোয়ের্টজেন এবং ২০২১ সালের ০২ ফেব্রুয়ারি ক্যাপ্টেন স্যার টম মোরে নামে দুই ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়ে টুইট খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে দুই ব্যক্তিকেই এমসিসির আজীবন সদস্যপদ লাভকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

Screenshot source: Twitter 

কিন্তু এমসিসির ওয়েবসাইটের আজীবন সদস্যদের তালিকায় উক্ত দুই ব্যক্তির নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে, মৃত ব্যক্তির নাম এমসিসি’র ওয়েবসাইটে ‘আজীবন সদস্যদের তালিকা থেকে মুছে ফেলা হয়েছে’ শীর্ষক সম্ভাবনাটি জোরালো হয় বলে প্রতীয়মান হয়। 

এই তথ্যের সূত্র ধরে উক্ত তারিখের (২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি) পূর্বের এমসিসির ওয়েবসাইটের আজীবন সদস্যদের তালিকা বিষয়ক পেজটির আর্কাইভ ভার্সন (২০২০ সালের ০৯ আগস্ট) খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত আর্কাইভ ভার্সন থেকে দেখা যায়, পেজে তখন রাইসউদ্দিন আহমেদের নাম রয়েছে। 

Screenshot from Lord’s website

একইসাথে এমসিসি’র টুইটে যে দুজনের (রুডি কোয়ের্টজেন এবং ক্যাপ্টেন স্যার টম মোরে) মৃত্যুর বিষয়ে জানিয়েছে তাদের নামও খুঁজে পাওয়া যায় একই আর্কাইভ ভার্সনে। 

অর্থাৎ, এমসিসির আজীবন সদস্য পদ পাওয়া কোনো ব্যক্তি যদি মারা যান তবে তার নাম এমসিসি’র ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। এক্ষেত্রে তাই রাইসউদ্দিন আহমেদের নামও সরিয়ে নিয়েছে এমসিসি। 

মূলত, সাম্প্রতিক তথ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স’ এর মে মাসের সংখ্যায় ১৬তম পৃষ্ঠায় “মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) আজীবন সদস্য মাশরাফী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক সংবাদে দাবি করা হয়, ২০০৩ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে প্রশাসনিক বিভাগে MCC’র আজীবন সদস্যপদ পান সাবেক বিসিবি সভাপতি এবং ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়৷ সাবের হোসেন চৌধুরীর উক্ত সম্মাননা পাওয়ার পূর্বে ১৯৮২ সালে রাইসউদ্দিন আহমেদ এই সম্মানসূচক আজীবন সদস্যপদ পেয়েছিলেন।  

সুতরাং, প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে প্রশাসনিক বিভাগে সাবেক বিসিবি সভাপতি এবং ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী MCC’র আজীবন সদস্যপদ পেয়েছেন দাবি করে সাম্প্রতিক তথ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

উল্লেখ্য, পূর্বে যথাক্রমে ‘প্রথম ও দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে মাশরাফি এমসিসি’র আজীবন সদস্যপদ পেয়েছেন’ এমন দাবির প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানী ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদেন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।  

আরও পড়ুন

spot_img