গত ২৩ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনস মাঠে নবনির্মিত ইনডোর প্লে-গ্রাউন্ডের উদ্বোধন শেষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন,”আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আফ্রিকার একটি দেশে গিয়ে বলেছেন- যদি তোমরা উন্নয়ন দেখতে চাও, তবে বাংলাদেশে যাও, শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করো”

পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এর এই বক্তব্যটি যুগান্তর, কালবেলার ফেসবুক পেজ সহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আফ্রিকার কোন দেশে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার বক্তব্যে “যদি তোমরা উন্নয়ন দেখতে চাও, তবে বাংলাদেশে যাও,শেখ হাসিনাকে অনুসরন করো ” শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি বরং প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় একমাত্র রাষ্ট্রীয় সফরের এক বক্তব্যে ওবামা বাংলাদেশ এবং জিম্বাবুয়ের নির্বাচন ব্যবস্থায় কেনিয়ার আবিষ্কৃত উশাহিদি নামের প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছিলেন।
মূলত, কেনিয়া বারাক ওবামার জন্মভূমি হলেও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তিনি কেবলমাত্র একবারই কেনিয়া সফরে গিয়েছিলেন। এটিই ছিলো কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম কেনিয়া সফর। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবার ২০১৫ সালের ২৪ জুলাই কেনিয়ার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে যান। সেই সফরে ২৫ জুলাই নাইরোবিতে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়ার সঙ্গে বৈশ্বিক উদ্যোক্তা বিষয়ক এক যৌথ সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করেন বারাক ওবামা। সেই বক্তব্যে কেনিয়ার প্রযুক্তিতে পারদর্শী তরুণ উদ্যোক্তাদের কথা বলতে গিয়ে ওবামা বলেছিলেন, “বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন, লক্ষ লক্ষ মানুষ এম-পেসা [কেনিয়ার মোবাইল মানি ট্রান্সফার সার্ভিস] দিয়ে অর্থ পাঠায় এবং সঞ্চয় করে… জিম্বাবুয়ে থেকে বাংলাদেশে, নাগরিকরা ক্রাউড-সোর্সিং প্ল্যাটফর্ম উশাহিদি ব্যবহার করে নির্বাচন নিরাপদ রাখতে কাজ করে – এবং এটি একটি দুর্দান্ত ধারণা যা এখানে কেনিয়া থেকে শুরু হয়েছিল।” অর্থাৎ, বারাক ওবামা কেনিয়া সফরের সেই বক্তব্যে জিম্বাবুয়ে এবং বাংলাদেশের নির্বাচনে কেনিয়ার তৈরি সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে বলে কেনিয়ার তরুণদের প্রশংসা করতে গিয়েই বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করেছিলেন। বারাক ওবামার দেয়া বক্তব্য এবং দেশীয় গণমাধ্যমে সেই বক্তব্যের বিকৃত রূপ প্রচারের কারণেই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন সময়ে একাধিক মন্ত্রী কর্তৃক উক্ত বিষয়টিকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে বক্তব্য প্রদান করতে দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বক্তব্য প্রদান করলে বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।