চলতি বছরের (২০২৩ সাল) জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও দেশীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ১০৮২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক থেকে গণনাকৃত এই সংখ্যার মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি (২৪৮) ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে, যা মোট ভুল তথ্যের ২৩ শতাংশ। গেল বছর (২০২২) রাজনৈতিক বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া ৯২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছিল রিউমর স্ক্যানার। এ বছর প্রথম পাঁচ মাসেই এ সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।
রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণ বলছে, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় চলতি বছর ইন্টারনেটে রাজনৈতিক বিষয়ক ভুল তথ্যের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে জড়িয়ে গত আট মাসে ৭৪টি ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। নির্বাচন সামনে রেখে বিদেশি গণমাধ্যম, রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং তাদের নেতৃত্বকে উদ্ধৃত করে বা জড়িয়ে ভুয়া মন্তব্য বা তথ্য প্রচারের প্রবণতাও লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার, যার সংখ্যা ২৪টি। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা বাতিল সংক্রান্ত ১৩টি এবং রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য বিকৃত করে ২১টি ভুল তথ্য প্রচার করতে দেখা গেছে।
রাজনৈতিক বিষয়ের বাইরে গেল আট মাসে আন্তজার্তিক বিষয়ে ২২৯টি, খেলার বিষয়ে ১২৩টি, জাতীয় বিষয়ে ১১৬টি, ধর্মীয় বিষয়ে ১১১টি, শিক্ষা বিষয়ে ৮১টি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ৬৩টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে ৫০টি, আর্থিক প্রতারণা বিষয়ে ৪৪টি এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে ১৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত আট মাসে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক (৪৩) ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে, যা মোট রাজনৈতিক ভুল তথ্যের ১৭ শতাংশ। এছাড়া, কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমের বিষয়ে ২০টি, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিষয়ে ১৫টি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বিষয়ে ১২টি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিষয়ে ১০টি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিষয়ে ০৮টি, গণ অধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুরের বিষয়ে ০৭টি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিষয়ে ০৭টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
এর বাইরে বাংলাদেশ পুলিশের বিষয়ে ১৪টি গুজব ছড়ানো হয়েছে। পুলিশের একক সদস্য হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মুহাম্মদ হারুন অর রশিদের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি (০৫) ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ব্যক্তিত্ব নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ০৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।
গত ফেব্রুয়ারিতে তুরস্ক ও সিরিয়ায় একাধিক ভূমিকম্পের ঘটনায় বিপর্যস্ত পরিস্থিতির শিকার হয় দেশ দুইটি। এ সময় উক্ত ঘটনার বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া ৩৬টি ভুল তথ্য (লিঙ্ক) শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। চলতি বছরের আট মাসে একক কোনো ঘটনায় এটিই সর্বোচ্চ ভুল তথ্য শনাক্তের সংখ্যা।
গত ১৪ আগস্ট ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু হয়। পরদিন এ বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া ১০টি ভুল তথ্য (লিঙ্ক) শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে কোনো একক ঘটনায় একদিনে এটিই সর্বোচ্চ ভুল তথ্য ছড়ানোর সংখ্যা। সাঈদীর বিষয়ে পরবর্তীতে আগস্ট মাসে আরও চারটি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।
চলতি বছরের (২০২৩) আট মাসে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ফটোকার্ড ব্যবহার করে ৩৯টি ভুল তথ্য (নকল ফটোকার্ড ২৩ টি, গণমাধ্যমের নাম ও লোগো ব্যবহারে ০৯ টি, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম এডিট করে ভিন্ন শিরোনাম যুক্ত করে প্রচার ০৭ টি) প্রচার করা হয়েছে (লিঙ্ক)। এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে ভুল তথ্য প্রচারে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র নাম সবচেয়ে বেশি (১৮) ব্যবহার করা হয়েছে, শতকরা হিসেবে যা ৪৬ শতাংশ। এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে রাজনৈতিক বিষয়ে (২৭), যা মোট সংখ্যার ৬৯ শতাংশ। তবে এককভাবে এইচএসসির বিষয়ে সবচেয়ে বেশি (৬) ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার একটি ফ্যাক্ট-চেকিং বা তথ্য-যাচাইয়ের উদ্যোগ যার প্রধান লক্ষ্য দেশের চলমান গুজব ও ভুয়া খবর নির্মূল করা এবং সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ যাত্রা শুরুর পর পরের বছরের (২০২১) ২৮ জুলাই রিউমর স্ক্যানার আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) এর সদস্যপদ লাভ করে।
বার্তা প্রেরক
মোঃ ছাকিউজ্জামান
সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও উপ-সম্পাদক
[email protected]