সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়শই কোনো সবজি বস্তুর বা অন্যকিছুর মধ্যে আল্লাহ এর নামের বিষয়টি আলোচনায় আসে। ঈদুল আযহার সময় গরুর মাংসের মধ্যে আল্লাহ শব্দ লেখা দেখার খবর তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়৷ শুধু আল্লাহ শব্দটাই নয় অনেক সময় হিন্দুদের ত্রিশূল কিংবা কোনো দেবতার অবয়ব দেখা যাওয়ারও খবর পাওয়া যায়। বাংলাদেশে খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠী কম থাকায় আরেকটা খবর খুব একটা দৃষ্টিগোচর হয় না। তবে, বিদেশি খবরাখবর রাখলে পশ্চিমা খ্রিষ্টানপ্রধান নানা দেশে নানা বস্তুতে যিশু খ্রিষ্ট বা ভার্জিন মেরির অবয়বও দেখতে পাওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়৷ শুধু তাই নয়, অনেক সময় এটা বেশ চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যায়। ২০০৪ সালে ভার্জিন মেরির অবয়বসমৃদ্ধ একটি চিজ ২৮,০০০ ডলারে বিক্রি হয়। ২০০২ সালে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে একটি রুটির মধ্যে দেখা যায় যিশুর ছবি। তা দেখে সম্মান জানাতে দক্ষিণ ভারতের শহর ব্যাঙ্গালুরুতে চলে গিয়েছিলেন প্রায় ২০ হাজার ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টান।
এ তো গেল নানা বস্তুতে ধর্মীয় চরিত্র দেখার বিষয়। তবে, সবসময় যে ধর্মীয় চরিত্রই দেখার কথা শোনা যায় তা নয় মোটেও। মানুষ মাদার তেরেসা, এডলফ হিটলার, জর্জ ওয়াশিংটনের মতো চরিত্রও দেখার দাবি করে। কখনও কখনও সেটা বিক্রি হয় চড়া দামে।
তাছাড়া, শুধু ভূখণ্ডেই নয়, অনেকে মেঘের মধ্যে হাতি, ঘোড়া কিংবা কেউ চাঁদের মধ্যেও কারো অবয়ব দেখতে পাওয়ার দাবি করে। ১৯৭৬ সালে নাসার তোলা মঙ্গল গ্রহের একটি ছবিতে মানুষের মুখের অবয়ব দেখতে পাওয়ারও দাবি করেছিল মানুষজন।
তাছাড়া, বিভিন্ন সময় ঘরের রান্নাঘরের জিনিসপাতি থেকে শুরু করে গাছের কান্ড, সবকিছুতেই কেউ না কেউ মুখমণ্ডল দেখার দাবি করেছে। অনেক সময় তো উপর থেকে তোলা পাহাড়ের ছবিতে নারীর অবয়ব দেখতে পাওয়ারও নানা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পাওয়া যায়।
তাছাড়া, শুধু ছবিই নয়। এটি হতে পারে শব্দের ক্ষেত্রেও। সম্প্রতি গত ১২ মে তারিখে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি টিভি চ্যানেল সময় নিউজ তাদের ফেসবুক পেজে মোরগের মুখে আল্লাহর জিকির মর্মে একটি ভিডিও আপলোড করেছে। তার আগে গত ২৫ মার্চ বাংলাদেশি অন্য আরেকটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম চ্যানেল, ATN News Digital “বেগুন কাটতেই ভেসে উঠলো ‘আল্লাহ’র নাম” শিরোনামে সংবাদ প্রচার করে।
শুধু আল্লাহর নামই নয়। অনেক সময় অনেকেই অর্থহীন নানা শব্দে নানা অর্থপূর্ণ জিনিস শুনতে পাওয়ার দাবি করে। হতে পারে কোনো গাড়ির শব্দে কেউ নিজের নাম শুনতে পাওয়ার দাবি করছে। কোনো গানকে হঠাৎ করে চালু করলে কোনো অর্থপূর্ণ বাক্য শুনতে পাচ্ছে বলে দাবি করছে যার ঐখানে থাকার কোনো যুক্তিই নেই৷
এরকম কিছু প্যারিডোলিয়া দেখুন :
এই সবকিছুরই একটি সাধারণ ব্যাখ্যা আছে। যেকোনো এলোমেলো জিনিসপাতিতেই নানা অর্থপূর্ণ আকার, ইঙ্গিতপূর্ণ জিনিস ইত্যাদি খুঁজার প্রবণতাকে অ্যাপোফেনিয়া বলে। এটির আবার প্রকারভেদ আছে৷ তার মধ্যে একটি হচ্ছে প্যারিডোলিয়া। যখন এলোমেলো ছবি, শব্দ দেখার পর মানুষের কাছে সেটা অর্থপূর্ণ কিছু মনে হয়, তাকে প্যারিডোলিয়া বলে। এখন এটি হতে পারে আল্লাহ লেখা, মোরগের মুখে আল্লাহর জিকির, মানুষের মুখের অবয়ব, আকাশের মেঘে হাতি-ঘোড়া দেখতে পাওয়া যেকোনো অর্থপূর্ণ কিছু।
প্যারিডোলিয়া কী এবং কেন
প্যারিডোলিয়া দুইটি গ্রিক শব্দের সমন্বয়ে ঘটিত একটি শব্দ। শব্দ দুটি হলো ‘para’ ( যার অর্থ পরিবর্তিত, পাশে বা পাশাপাশি, ত্রুটি, ভুল কোনোকিছু) এবং ‘eidolon’ (যার অর্থ ছবি, আকার বা আকৃতি)। প্যারিডোলিয়া হলো যেকোনো অর্থহীন ছবি, আকৃতি ইত্যাদি দেখে সেটাকে একটা অর্থপূর্ণ অবয়ব দেওয়ার একটি প্রবণতা। তবে সাধারণত এটি কোনো রোগ নয়। মানুষের মস্তিষ্কের একটি স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যই হলো যেকোনো কিছুতে একটা অর্থ খুঁজে আনা। যখন আমরা কোনোকিছু দেখি তখন সেটার মধ্যে ইতোমধ্যে মস্তিষ্কে থাকা তথ্যানুসারে একটি পরিচিত প্যাটার্ন খুঁজে বের করার চেষ্টা করে আমাদের মস্তিষ্ক। আকাশে হাতি দেখা থেকে শুরু করে সবজিতে আল্লাহ নাম দেখা সবকিছুই এই প্যারিডোলিয়ার অংশ। তাছাড়া, শুধু মানুষই নয়। লন্ডন ভিত্তিক জনপ্রিয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ম্যাগাজিন নিউ সায়েন্টিস্টে ২০১৭ সালে “Monkeys can see faces in inanimate things, just like us” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বানরেরও প্যারিডোলিয়ার অভিজ্ঞতা আছে।
আবিষ্কার ও রিসার্চ সম্বন্ধীয় জনপ্রিয় বিজ্ঞান ওয়েবসাইট লাইভ সায়েন্সে ২০২৩ সালে “What is pareidolia?” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, প্যারিডোলিয়া হওয়ার কারণ হিসেবে বেশ কিছু মতবাদ আছে। সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স জার্নালে ২০২০ সালে প্রকাশিত একটি গবেষনা অনুযায়ী, মানুষের মস্তিষ্ক এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছে যাতে করে ভিড়ের মধ্য থেকেও তাড়াতাড়ি মুখমণ্ডল চিহ্নিত করতে পারে। এই কারণে এই মুখমণ্ডল চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়ায় ফেইস প্যারিডোলিয়া “False Positive” হিসেবে ঘটে থাকে। উল্লেখ্য, False Positive হলো কোনোকিছু না থাকলেও, ধরে নেওয়া হয় ‘আছে’ এবং False Negative এর উল্টো। মানুষের পূর্বপুরুষদের টিকে থাকার জন্য False positive প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ ছিল বলে ধরা হয়।
তাছাড়া, মানুষের মস্তিষ্ক শুধু মুখমণ্ডলই নয়, বরং ছবিতে থাকা আবেগকেও দেখে। এর পাশাপাশি আল্লাহ নাম দেখা, কিংবা ধর্মীয় চিহ্ন দেখাও এরকমই প্যরিডোলিয়ার অংশ।
নিউরোসায়েন্স বিষয়ক রিসার্চের সংবাদের ওয়েবসাইট ও ম্যাগাজিন নিউরোসায়েন্স নিউজ ওয়েবসাইটেও এ বিষয়ে ৪ বছর পূর্বে প্রকাশিত হওয়া প্রতিবেদনে উল্লিখিত গবেষণার লেখক, ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলসের রিসার্চাস ডক্টর কোলিন পালমার এর মতে, “এগুলোর একটি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো শুধু মুখমণ্ডলের মতোই দেখায় না, এমনকি ব্যক্তিত্ব অথবা সামাজিক অর্থ জ্ঞাপন করতেও সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, একটি ঘরের জানালা দেখে মনে হতে পারে দুইটি চোখ আপনাকে দেখছে, এবং একটি লঙ্কার দিকে তাকিয়ে সুখী মুখ দেখতে পারেন।”
পূর্বপুরুষদের ক্ষেত্রে প্যারিডোলিয়ার প্রভাব :
২০১৩ সালে বিবিসিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে, ব্রিটিশ সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির সদস্য ক্রিস্টোফার ফ্রেঞ্চের মতে, পুরাতন যুগের একজন ব্যক্তি খচমচ করতে থাকা ঝোপের আড়াল দেখে যদি বাঘ মনে করে পালান, তাহলে তার টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
আমেরিকান জনপ্রিয় বিজ্ঞান ম্যাগাজিন সায়েন্টিফিক আমেরিকানে প্রকাশক ও লেখক মাইকেল শারমারের “Patternicity: Finding Meaningful Patterns in Meaningless Noise.” শিরোনামে ২০০৮ সালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে তিনি উল্লেখ করেছেন, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বায়োলজিস্ট কেভিন আর. ফস্টার এবং ইউনিভার্সিটি অব হেলসিঙ্কি এর বায়োলজিস্ট হান্না কোক্কো তার একটি থিওরি ইভ্যুলশনারি মডেলিং এর মাধ্যমে টেস্ট করেছেন এবং প্রমাণ করেছেন, যখনই কোনো ভুল প্যাটার্নকে আসল ভাবার মাশুল, কোনো আসলকে ভুল প্যাটার্ন ভাবার মাশুলের চেয়ে কম হয়, তখন প্রাকৃতিক নির্বাচন প্যারিডোলিয়ার পক্ষপাতিত্ব করে। তারা সূত্র অনুযায়ী কাজ করলেও সহজ ভাষায় উদাহরণ দিয়ে বুঝালে, ঘাসের নড়াচড়া দেখে সেটাকে ভয়ংকর প্রাণী ধরে সরে গেলে বিপদ কম। হতে পারে সেটা বাতাসই ছিলো। আবার সেই ঘাসের নড়াচড়াকে বাতাস ভেবে পরোয়া না করলে এবং সেটা আসলে কোনো ভয়ংকর প্রাণী হয়ে থাকলে প্রাণ হারাতে হবে। এই কারণে মানুষের টিকে থাকার জন্য মানুষের মস্তিষ্ক “False Positive” এর পক্ষে থাকে। False Positive হলো না থাকলেও, কোনোকিছু আছে ধরে নেওয়া৷ অপরদিকে False Negative হলো থাকলেও, নেই ধরে নেওয়া।
কারা প্যারিডেলিয়া বেশি অনুভব করে:
Wiley Online Library এর একটি রিসার্চ পেপার অনুসারে, যারা বেশি ধর্মপ্রাণ এবং অতিপ্রাকৃত বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে বিশ্বাসী, তাদের সাথে এটি বেশি ঘটতে পারে।
The Cut ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য সাংবাদিক মেলিসা দাহল এর লেখা প্রতিবেদন অনুসারে, মানসিক ভারসাম্যহীন এবং নেতিবাচক মনোভাবে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্যারিডোলিয়া ঘটার সম্ভাবনা বেশি৷ এর কারণ হচ্ছে, তারা বিপদ ঘটার ক্ষেত্রে বেশি সচেতন অবস্থায় থাকে, যে কারণে কোথাও কোনোকিছু না থাকলেও সেখানে তারা কিছু একটা আছে দেখে।
২০১৬ সালে Oxford Academic এ প্রকাশিত হওয়া একটি রিসার্চ পেপার অনুসারে, নারীদের ক্ষেত্রে এটি ঘটার সম্ভাবনা বেশি। এটির সাথে সায়েন্স ডিরেক্টে প্রকাশিত একটি রিসার্চ পেপারের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা যেতে পারে যে মুখের অভিব্যক্তি দেখে আবেগ বুঝার সক্ষমতা নারীদের ক্ষেত্রে বেশি থাকে।
PNAS জার্নালে প্রকাশিত ২০২২ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, মানুষ সাধারণত নারীদের চেয়ে পুরুষদের মুখাবয়ব তুলনামূলক বেশি দেখে।
কেন প্যারিডোলিয়াতে পুরুষদের অবয়ব বেশি দেখা যায়?
সায়েন্স অ্যালার্টে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, PNAS জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের একজন রিসার্চার, অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ কুইন্সল্যান্ডের মনোবিজ্ঞান রিসার্চার জেসিকা টাউবার্ট জানান, প্যারিডোলিয়ার বিষয়ে ৩৮১৫ অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে করা একটি রিসার্চ শেষে লক্ষ্য করা যায়, বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী (৯০ শতাংশ) মুখাবয়বকে পুরুষ বলে চিহ্নিত করেছেন।
এক্সপেরিমেন্টের উপাদান থেকে সন্দেহজনক লিঙ্গ নির্ধারণকারী বৈশিষ্ট্য সরিয়ে পুনরায় এক্সপেরিমেন্ট করলেও ফলাফলে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। তাই, নির্দিষ্টভাবে বলতে না পারলেও রিসার্চারদের অনুমান, সামাজিক যোগাযোগে পুরুষ একটি ডিফল্ট লিঙ্গ। এইরকম বিভ্রমজনক মুখাবয়বে যখন ব্যাক্তির প্রসঙ্গ আসে, তখন এটি পুরুষদের প্রতি নির্দেশ করে, যদি না অতিরিক্ত তথ্য অন্যকিছু না প্রমাণ করে। প্রাসঙ্গিক একটা ধারণা হলো, যদি না দৃশ্যমান অন্যান্য বর্ণনা (যেমন: চোখের পাতার লোম, লম্বা চুল, ছাঁটাই করা ভ্রু) অন্যকিছু না বুঝায়, পুরুষ হচ্ছে একটি মুখাবয়বের জন্য ডিফল্ট লিঙ্গ।
প্যারিডোলিয়া কি রোগের লক্ষণ?
প্যারিডোলিয়া সাধারণত স্বাভাবিক একটি বিষয়। তবে, লাইভ সায়েন্স ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের দ্বারা পরিচালিত বিশ্বের সর্ব বৃহৎ মেডিক্যাল লাইব্রেরি National Library of Medicine এর মতে, প্যারিডোলিয়া Autism Spectrum Disorder (ASD) অথবা পার্কিনসনের মতো নির্দিষ্ট কিছু মস্তিষ্কের রোগের অন্তর্দৃষ্টি দিতে সক্ষম। ASD তে আক্রান্ত শিশুরা ফেইস প্যারাডোলিয়া শনাক্ত করতে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়৷ অপরদিকে পারকিনসন বা Lewy Body Dementia তে আক্রান্ত শিশুরা অপেক্ষাকৃত বেশি প্যারিডোলিয়া অনুভব করে।
PLos One জার্নালে ২০২২ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুসারে, যারা প্যারিডোলিয়া অনুভব করেন, তাদের অতিপ্রাকৃত বিষয় অনুভব করারও সম্ভাবনা বেশি৷
অডিও প্যারিডোলিয়া
মানুষ যেমন ছবি দেখে মুখাবয়ব বা নানা লেখা, চিহ্ন বা প্রতীক চিহ্নিত করে, একইভাবে অনেক সময় অর্থহীন শব্দ শুনেও সেটাকে অর্থবোধক বানিয়ে নেয়। সম্প্রতি মোরগের মুখে আল্লাহর জিকিরের ক্ষেত্রেও একই ব্যখ্যা প্রযোজ্য। তবে, এটিকে অডিও প্যারিডোলিয়া বলে।
পপুলার সায়েন্সের প্রতিবেদন অনুসারে, সেন্টার ফর হিয়ারিং লস হেল্পের প্রতিষ্ঠাতা নিল বাউম্যানের মতে, “যখন আপনার জন্ম হয়, আপনার মস্তিষ্ক বলতে গেলে একটি খালি কাগজ ছিল কিন্তু আপনার মস্তিষ্ক সবসময় প্যাটার্ন খুঁজে, সেটা হোক দৃষ্টিসংক্রান্ত কিছু, শ্রবণ সংক্রান্ত কিছু কিংবা অন্য কিছু।”
পপুলার সায়েন্সের মতে, মস্তিষ্ক সবসময় প্যাটার্ন খুঁজে, আর এ কারণেই এলোমেলো জিনিসেও অর্থবোধক জিনিস দেখা যায় বা প্যারিডোলিয়া ঘটে। শারীরবৃত্তীয়ভাবে, যখন মস্তিষ্ক সংবেদনশীল কোনোকিছু পেয়ে থাকে, মস্তিষ্ক সর্বোচ্চ চেষ্টা করে এর একটি অর্থ বের করে দিতে।
বাউম্যান বলেন, “আপনার কান যা শুনে, আপনি তা শুনেন না। আপনি তা-ই শুনেন যা আপনার মস্তিস্ক শোনায়।”
পপুলার সায়েন্সের প্রতিবেদন অনুসারে, প্যারিডোলিয়া হচ্ছে আপনার মস্তিষ্কের ডাটা প্রসেস করার একটি গ্লিচ।
বিভ্রান্তিকর পারিপার্শ্বিক শব্দ সম্পর্কে বাউম্যান বলেন, “ঐসব শব্দ প্রথমত ঝাপসা বা অস্পষ্ট, একদম পরিষ্কার নয়। যদি প্যাটার্ন পরিষ্কার হতো, তাহলে মস্তিষ্ক একদম নিখুঁতভাবে মেলাতে পারতো। তখন আপনি শুনতে পেতেন সেটা কোনো ফ্যান বা মোটরের শব্দ। শব্দের অস্পষ্টতার কারণেই এত অনিশ্চয়তা ঘটে।”
অর্থাৎ, যখন শব্দ অস্পষ্ট বা অর্থহীন থাকে কিংবা শব্দের অর্থ ঠিকঠাক বুঝা যায় না, তখন মস্তিষ্ক সেই শব্দে একটা প্যাটার্ন খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যার ফলে মোরগের ডাকেও জিকির শোনা গিয়েছে।
মূলত, মানুষের মস্তিষ্ক এলোমেলো জিনিসের মধ্যে প্যাটার্ন খুঁজার চেষ্টা করে। সেটা হোক ছবি কিংবা শব্দ। মানুষ যে বিষয় নিয়ে বেশি ভাবে তার ক্ষেত্রে সেটিই বেশি ঘটতে দেখা যায়। আর, এলোমেলো জিনিসে মস্তিষ্কের মিল খুঁজার প্রবণতার ফলশ্রুতিতে অনেক সময় নানা বস্তুতে আল্লাহ নাম, ত্রিশূল, যিশু কিংবা চেনা-অচেনা মুখাবয়ব ফুটে ওঠে। রিসার্চারদের মতে, এই প্রবণতাটি মানুষের পূর্বপুরুষ থেকেই আছে।
সুতরাং, মোরগের ডাকে আল্লাহর জিকির, এলেমেলো অবস্থায় কোনো বস্তুতে আল্লাহর নাম, কোনো অর্থহীন জায়গায় দেবতার অবয়ব কিংবা কারো মুখাবয়ব বা অন্য কোনো অর্থবোধক ছবি, এগুলো অলৌকিক নয়, বরং প্যারিডোলিয়ার ফসল।
তথ্যসূত্র
- NBC News – ‘Virgin Mary grilled cheese’ sells for $28,000
- BBC – India marvels at ‘miracle chapati’
- The European Space Agency – ‘Face on Mars’ illusion as seen by Viking 1
- Psychology Today – Pareidolia
- New Scientist – Monkeys can see faces in inanimate things, just like us
- Science ABC – Apophenia: Does Everything Really Happen For A Reason?
- Live Science – What is pareidolia?
- Psychological Science – Face Pareidolia Recruits Mechanisms for Detecting Human Social Attention
- University of Hawai‘i at Manoa – Practices of Science: False Positives and False Negatives
- Neuro Science – Why the Brain Is Programmed to See Faces in Everyday Objects
- BBC – Pareidolia: Why we see faces in hills, the Moon and toasties
- Scientific American – Patternicity: Finding Meaningful Patterns in Meaningless Noise
- Wiley Online Library – Paranormal and Religious Believers Are More Prone to Illusory Face Perception than Skeptics and Non-believers
- The Cut – Neurotic People See Faces in Things
- Oxford Academic – Women are better at seeing faces where there are none: an ERP study of face pareidolia
- Science Direct – Gender and parental status affect the visual cortical response to infant facial expression
- PNAS – Illusory faces are more likely to be perceived as male than female
- Science Alert – The Mysterious ‘Pareidolia’ Phenomenon Turns Out to Have a Surprising Bias
- Live Science – Pareidolia: Seeing Faces in Unusual Places
- National Library Of Medicine – Face-like pareidolia images are more difficult to detect than real faces in children with autism spectrum disorder
- National Library of Medicine – Behavioral and neural correlates of pareidolic illusions in dementia with Lewy bodies
- PLos One – Paranormal experiences, sensory-processing sensitivity, and the priming of pareidolia
- Popular Science – Why our brains hear words and songs in random noise
- Rumor Scanner’s own analysis