ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। ভারতে আশ্রয় নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান তৎকালীন সরকার দলীয় সংসদ সদস্যদের মতো সমানভাবে সমালোচিত হয়ে আসছেন। সরকার পতনের সময়ে কানাডায় ছিলেন সাকিব। এরপর আর দেশে ফেরেননি এই ক্রিকেটার। পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে একাধিক মামলা। গত ২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার জন্মদিনে ‘শুভ জন্মদিন আপা’ লিখে নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ও পেজে পোস্ট করেন সাকিব। এই পোস্টের পর সাকিবকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এক পোস্টে উল্লেখ করেন, “একজনকে পুনর্বাসন না করায় সহস্র গালি দিয়েছেন আপনারা আমাকে। But i was right. End of the discussion.” সাকিব পাল্টা পোস্ট দিয়ে বলেন, “যাক শেষমেষ কেউ একজন স্বীকার করে নিলেন যে তার জন্য আমার আর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেওয়া হলো না, বাংলাদেশের জন্য খেলতে পারলাম না! ফিরবো হয়তো কোন দিন আপন মাতৃভূমিতে, ভালোবাসি বাংলাদেশ।” এরপর আসিফও আরেকটি পোস্ট করেন। লিখেন, “ভাইয়া, আমাকে জোর করে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল। আমি শুধু নির্বাচনটাই করেছিলাম, আওয়ামিলীগের দলীয় রাজনীতিতে জড়িত হইনি। You know who. যার হাত ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। বোর্ডের কর্তারা একাধিকবার রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করতে বললেও তা না করে বরং খুনিদের এনডোর্স করা ছাড়াও শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, মানি লন্ডারিং, ফাইনানশিয়াল ফ্রড করা কাউকে কেন শুধু ভালো ক্রিকেটার বলেই পুনর্বাসন করতে হবে? আইন সবার জন্য সমান, Face it.”

আসিফ-সাকিবের পাল্টাপাল্টি এসব পোস্টের সূত্রেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিবের ফেরা বা না ফেরার বিষয়টি নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে একাধিক অপতথ্যের প্রচারও দেখা যাচ্ছে৷
দাবি ১
সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে ক্রিকেটার তামিম ইকবাল “আমার জীবন থাকতে সাকিব আল হাসানকে নিষিদ্ধ হতে দেবো না। আমি বোর্ড প্রেসিডেন্ট হলে সাকিব আল হাসানকে দেশে ফেরাবো এবং সাকিব আল হাসানকে জাতীয় দলে ফেরাবো।” বলে মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার হচ্ছে।
টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার বার। ভিডিওটি দেখুন এখানে।
একই ভিডিও ইউটিউবে দেখা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার বার। দেখুন এখানে।
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
অনুসন্ধানে তামিম ইকবালের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ০১ সেপ্টেম্বর ‘I will be unavailable for T20 World Cup’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

ভিডিও থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন দলের বাইরে থাকা ও অনুশীলনের ঘাটতির জন্য তামিম বিশ্বকাপ দলে থাকতে চাননি।
অর্থাৎ, চার বছর আগের পুরোনো ভিডিও দিয়ে ভুয়া দাবিটি প্রচার হচ্ছে।
দাবি ২
সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে সাবেক ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা “আমরা বেঈমান জাতি। সাকিবকে নিষিদ্ধ করলে খুব খারাপ হবে।” বলে মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার হচ্ছে।
টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষাধিক বার। ভিডিওটি দেখুন এখানে।
একই ভিডিও ইউটিউবে দেখা হয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার বার। দেখুন এখানে।
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
অনুসন্ধানে Maher Hossen Jakir নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইলে ২০১৭ সালের ০৮ নভেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

ভিডিও এবং এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিপিএল চলাকালীন সে সময় চিটাগাং ভাইকিংসের বিপক্ষে ম্যাচে দলটির ক্রিকেটার শুভাশিস রায়ের সঙ্গে মাঠে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে রংপুর রাইডার্সের মাশরাফির। এই ঘটনার খবর প্রকাশের পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার শিকার হন শুভাশিস। তা দেখেই মাশরাফি এই ভিডিও পোস্ট করেন। তাতে তিনি সমর্থকদের এটা নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করার অনুরোধ জানান।
অর্থাৎ, প্রায় আট বছর পূর্বের পুরোনো ভিডিও দিয়ে ভুয়া দাবিটি প্রচার হচ্ছে।
দাবি ৩
সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম “সাকিব আল হাসানকে ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করলে আমরা চুপ থাকবো না।” বলে মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার হচ্ছে।
টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় তিন হাজারের অধিক বার। ভিডিওটি দেখুন এখানে।
একই দাবির ভিডিও ইউটিউবে দেখা হয়েছে প্রায় দুই লক্ষাধিক বার। দেখুন এখানে।
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
অনুসন্ধানে তামিম ইকবালের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ০৫ মে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

ভিডিও এবং এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সে সময় করোনা ভাইরাসের কারণে সব ক্রিকেটারই গৃহবন্দি হয়ে ছিলেন৷ আর সেসময়টাকে কাজে লাগাতেই একটু খোশ গল্পের মেজাজে ছিলেন তামিম। এজন্য লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে সতীর্থ ক্রিকেটারদের সাথে আড্ডা দেন সে সময়। মুশফিকের সাথে করা এই ভিডিও সে সময়েরই। এটিকে সম্পাদনার মাধ্যমে তামিমের ফ্রেমের অংশ বাদ দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচার হচ্ছে।
অর্থাৎ, প্রায় আট বছর পূর্বের পুরোনো ভিডিও দিয়ে ভুয়া দাবিটি প্রচার হচ্ছে।
দাবি ৪
সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে সাবেক ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ “সাকিবের জন্য রাজপথে নামবো। তবু সাকিবকে নিষিদ্ধ হতে দেবো না।” বলে মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার হচ্ছে।
টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৭৮ হাজারের অধিক বার। ভিডিওটি দেখুন এখানে।
একই দাবির ভিডিও ইউটিউবে দেখা হয়েছে প্রায় ৩৭ হাজারের অধিক বার। দেখুন এখানে।
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
অনুসন্ধানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গত ০৭ এপ্রিল প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

ভিডিও এবং এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফিলিস্তিনের মানুষদের ওপর ইসরায়েলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে ১২ এপ্রিল মার্চ ফর গাজা কর্মসূচীতে অংশ নিতে সেদিন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রকাশ করা ভিডিওতে ‘মার্চ ফর গাজায়’ অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
অর্থাৎ, প্রায় ছয় মাস পূর্বের পুরোনো ভিডিও দিয়ে ভুয়া দাবিটি প্রচার হচ্ছে।
দাবি ৫
সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে সাবেক যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন “সাকিব তোমাদের মতো হওয়ায় ভাইসা আসে নাই, সে শৗঘ্রই রাজা হয়েই ফিরবে।” বলে মন্তব্য কেছেন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার হচ্ছে।
ফেসবুকে উক্ত দাবির পোস্ট দেখুন এখানে।
একই দাবির ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দেখুন এখানে।
একই দাবির থ্রেডস পোস্ট দেখুন এখানে।
একই দাবির টিকটক ভিডিও দেখুন এখানে। টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার বার।

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, নাজমুল হাসান পাপন এমন কোনো মন্তব্য করেননি।
অনুসন্ধানে এ সংক্রান্ত ভাইরাল একটি ফেসবুক পোস্টের কমেন্টের ঘরে ব্লগস্পটের ফ্রি ডোমেইনে তৈরি একটি সাইটের লিংক পাওয়া যায়। লিংকে প্রবেশ করে এতে পাপনের কথিত মন্তব্যটির আরো কিছুটা দীর্ঘ ভার্সন পাওয়া যায়। তবে পাপন কবে বা কোথায় এই মন্তব্য করেছেন তার কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। গত বছরের আগস্ট পরবর্তী সময়ে নাজমুল হাসান পাপনকে গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। সাকিব বিষয়ে সাম্প্রতিক আলোচনার পরবর্তী সময়েও পাপন প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ প্রকাশ হতে দেখা যায়নি।
অর্থাৎ, নাজমুল হাসান পাপনের নামে ভুয়া মন্তব্য ছড়ানো হয়েছে।
দাবি ৬
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া লাইভে এসে সাকিব আল হাসানের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ফুটেজ প্রচার করা হচ্ছে।
টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৮১ হাজারেরও অধিক বার। ভিডিওটি দেখুন এখানে।
একই দাবির ভিডিও ইউটিউবে দেখা হয়েছে প্রায় ৭ হাজার বার। দেখুন এখানে।
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার৷
অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এখন টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

ভিডিও থেকে জানা যায়, তার মন্ত্রণালয় থেকে বিসিবি নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন তিনি। সাকিব ইস্যুর সূত্রপাত তারও দুই দিন পরে৷
অর্থাৎ, ভিন্ন ঘটনার ভিডিও দিয়ে ভুয়া দাবিটি প্রচার হচ্ছে।
দাবি ৭
সাকিব ইস্যুর জেরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া গ্রেফতার হয়েছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ফুটেজ প্রচার করা হচ্ছে।
ইউটিউবে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজারেরও অধিক বার। ভিডিওটি দেখুন এখানে।
একই দাবির ভিডিও টিকটকে দুই অ্যাকাউন্ট দেখা হয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ ৮৪ হাজারেরও অধিক বার। দেখুন এখানে, এখানে।
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার৷
অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম দেশ টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৫ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

ভিডিও থেকে জানা যায়, সে সময় রাতভর যৌথবাহিনীর অভিযান চলছিল এবং একটি স্পটে আসিফ মাহমুদ এসে উপস্থিত হন। এটি তখনকার ভিডিও।
অর্থাৎ, ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও দিয়ে ভুয়া দাবিটি প্রচার হচ্ছে।
দাবি ৮
সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন “সাকিব বাংলাদেশকে যে যায়গাই নিয়ে গেছে সামনে ১০০ বছরেও কেউ তা পারবে না” বলে বক্তব্য দিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি প্রচার হচ্ছে।
ফেসবুকে উক্ত দাবির পোস্ট দেখুন এখানে।
একই দাবির ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দেখুন এখানে।

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন এমন কোনো মন্তব্য করেননি।
অনুসন্ধানে সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের ফেসবুক প্রোফাইল, পেজ এবং তার অনুষ্ঠান ‘ঠিকানায় খালেদ মহিউদ্দিন’ এর ফেসবুক পেজে তাকে এ বিষয়ে সম্প্রতি কোনো বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। তাছাড়া, জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের সাথে আলোচিত দাবির ফটোকার্ডের পারিপার্শ্বিক মিল লক্ষ করা গেলেও পত্রিকাটির ফেসবুক পেজে হুবহু একই ফটোকার্ড পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের নামে ভুয়া মন্তব্য ছড়ানো হয়েছে।
দাবি ৯
সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে আইসিসির চেয়ারম্যান জয় শাহ “নিউজ দেখা যাচ্ছে যে সাকিবকে নিষিদ্ধ করতে চায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আইসিসির নিয়ম ছাড়া সাকিবকে নিষিদ্ধ করলে আইসিসি বিসিবিকেই নিষিদ্ধ করে দিবে।” বলে মন্তব্য করে দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার বার। ভিডিওটি দেখুন এখানে।
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়। ডিপফেক প্রযুক্তিতে তৈরি।
অনুসন্ধানে সম্প্রতি জয় শাহকে সাকিব প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভারতীয় ক্রিকেটার স্মৃতি মান্দানার এক্স প্রোফাইলের পোস্ট এবং ভারতের গণমাধ্যমে ২০২৪ সালের আগস্টের প্রতিবেদনে ব্যবহৃত জয় শাহের ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

ছবিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটিতে এবং প্রাপ্ত ছবিতে জয় শাহকে একই পোশাকে, একই স্থানে এবং একই ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখা যায়।
অর্থাৎ, অন্তত ২০২৪ সাল থেকে অনলাইনে থাকা একটি ছবি ব্যবহার করে ডিপফেক প্রযুক্তিতে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
দাবি ১০
সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আসিফকে উদ্দেশ্য করে সাবেক ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা
“তু’ই সাকিবকে নি’ষি’দ্ধ করার কে?” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন বলে একটি দাবি প্রচার হচ্ছে।
ফেসবুকে উক্ত দাবির পোস্ট দেখুন এখানে।
ইউটিউবে একই দাবির ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় সাত হাজারের অধিক বার। ভিডিওটি দেখুন এখানে।

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা এমন কোনো মন্তব্য করেননি।
অনুসন্ধানে সাংবাদিক মাশরাফির ফেসবুক পেজে তাকে এ বিষয়ে সম্প্রতি কোনো বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। অনুসন্ধানে এ সংক্রান্ত ভাইরাল একটি ফেসবুক পোস্টের কমেন্টের ঘরে ব্লগস্পটের ফ্রি ডোমেইনে তৈরি একটি সাইটের লিংক পাওয়া যায়। লিংকে প্রবেশ করে এতে মাশরাফির কথিত মন্তব্যটির আরো কিছুটা দীর্ঘ ভার্সন পাওয়া যায়। তবে মাশরাফি কবে বা কোথায় এই মন্তব্য করেছেন তার কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। সাকিব বিষয়ে সাম্প্রতিক আলোচনার পরবর্তী সময়ে মাশরাফির বক্তব্য সম্বলিত কোনো সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে দেখা যায়নি।
অর্থাৎ, সাবেক ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার নামে ভুয়া মন্তব্য ছড়ানো হয়েছে।
দাবি ১১
সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান “শাকিব আল হাসান বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন, বাচ্চা উপদেষ্টা কি বল্ল এটা গোনার টাইম নাই, দুইদিন পর লাথি মেরে চেয়ার থেকে নামাবো।” বলে মন্তব্য করেছেন শীর্ষক একটি দাবি প্রচার হচ্ছে।
টিকটকে উক্ত দাবির ভিডিও দেখুন এখানে। টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার বার।
ফেসবুকে উক্ত দাবির পোস্ট দেখুন এখানে।

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ফজলুর রহমান এমন কোনো মন্তব্য করেননি।
অনুসন্ধানে সাম্প্রতিক সময়ে ফজলুর রহমানকে সাকিব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। দাবিটির সূত্রপাত অনুসন্ধানে ফজলুর রহমানের নামে চালু থাকা একটি পেজে গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একই দাবির একটি পোস্টের সন্ধান মেলে। পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন সূত্রে জানা যায়, এটি সৌদি আরব থেকে পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি ফজলুর রহমান এক বক্তব্যে জানান, তার AMI TV নামের একটি ফেসবুক পেজ আছে যেটা তার বিশ্বস্ত লোকেরা পরিচালনা করেন আর একটি পেজ আছে Advocate Fazlur Rahman নামে। এছাড়া বাকি সব পেজ ভুয়া।
অর্থাৎ, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের নামে ভুয়া পেজ থেকে কথিত মন্তব্যটি ছড়ানো হয়েছে।
দাবি ১২
সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল “সাকিবকে নিষিদ্ধ করলে ভয়াবহ হবে! যারা সাকিবকে নিয়ে কথা বলে তারা ওর নখের যোগ্য” বলে মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার হচ্ছে।
টিকটকে ভিডিওটি দেখুন এখানে।
একই দাবির ভিডিও ইউটিউবে দেখা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার বার। দেখুন এখানে।
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার৷
অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এখন টিভির ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ০৬ জুলাই প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

ভিডিও এবং অন্যান্য গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৬ জুলাই আচমকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছিলেন তামিম ইকবাল। তার প্রেক্ষিতে আশরাফুল ভিডিওর মাধ্যমে এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন।
অর্থাৎ, ভিন্ন ঘটনার ভিডিও দিয়ে ভুয়া দাবিটি প্রচার হচ্ছে।
সুতরাং, সাকিব প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক আলোচিত ইস্যুতে সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং ক্রিকেট প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিদের জড়িয়ে অন্তত ১২টি অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এসব অপতথ্য সম্বলিত ভিডিও দেখা হয়েছে অন্তত ১.২ মিলিয়ন বার। এসব অপতথ্যের প্রচারে ব্যবহার হয়েছে পুরোনো ও ভিন্ন প্রসঙ্গের ভিডিও, ভুয়া মন্তব্য এবং সাম্প্রতিক ভিন্ন ঘটনার ভিডিও।