প্রতিবছর হাজার হাজার অভিবাসী ইউরোপে পাড়ি জমান। মানব পাচারকারীরা তাদেরকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমুহে জীবনযাত্রা সম্পর্কে ভুল ধারণা দেওয়ার মাধ্যমে প্রলোভন যোগায়। এছাড়াও, মানব পাচারকারীরা ইউরোপীয় ইউনয়নের দেশগুলোতে যাত্রার সমস্যা সম্পর্কেও ভুল ধারণা দেয়। এই প্রতিবেদনে আমরা পাচারকারীদের তিনটি দাবি (মিথ্যা আশ্বাস যা তারা শরণার্থী বা অভিবাসন প্রত্যাশীদের দেয়) যাচাই করবো।

শরণার্থী কী
Refugeesmigrants.un.org অনুসারে, শরণার্থী বা উদ্বাস্তু হল এমন ব্যক্তি যারা ভয়ঙ্কর নিপীড়ন, সংঘাত, সাধারণ সহিংসতা বা অন্যান্য পরিস্থিতির কারণে তাদের নিজ দেশের বাইরে থাকে। ভয়ঙ্কর নিপীড়ন, সংঘাত, সাধারণ সহিংসতা যা জনশৃঙ্খলাকে গুরুতরভাবে বিঘ্নিত করেছে এবং ফলস্বরূপ, আন্তর্জাতিক সুরক্ষা প্রয়োজন।
আর আলোচিত কারণে যারা নিজ দেশ ত্যাগ করে তাদেরকে বলা হয় শরনার্থী।

অভিবাসন কী
Refugeesmigrants.un.org অনুসারে, যদিও একজন আন্তর্জাতিক অভিবাসীর কোন আনুষ্ঠানিক আইনি সংজ্ঞা নেই। তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরা একমত যে যিনি অভিবাসনের কারণ বা আইনি অবস্থা নির্বিশেষে তার স্বাভাবিক বসবাসের দেশ পরিবর্তন করেন তাকে অভিবাসী বা অভিবাসন প্রত্যাশী বলা হয়। আর এই পরিবর্তন করাকে বলা হয় অভিবাসন বা মাইগ্রেশন।
সাধারণত, তিন থেকে ১২ মাসের সময়কাল স্বল্প-মেয়াদী বা অস্থায়ী মাইগ্রেশন এবং এক বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য বসবাসের দেশ পরিবর্তন হলো দীর্ঘমেয়াদী বা স্থায়ী মাইগ্রেশন।

মানব পাচারকারীদের তিনটি দাবি
মানব পাচারকারীদের কাছে শরণার্থী এবং অভিবাসন প্রত্যাশীদের ইউরোপে প্রবেশ করার ইচ্ছাটা একটা অন্যতম বড় আয়ের পথ (অবৈধ)। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন, নিষেধাজ্ঞা এবং অবৈধ যাতায়াতের পথের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তাই মানব পাচারকারীরা শরণার্থী এবং অভিবাসন প্রত্যাশীদের আগ্রহী করতে বিভিন্ন মিথ্যা আশ্বাস এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। [এই প্রতিবেদনে মিথ্যা আশ্বাসগুলোকে আমরা “দাবি” হিসেবে বর্ণনা করবো]

প্রথম দাবি
জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলে’র এক ভিডিও প্রতিবেদন অনুযায়ী মানব পাচারকারীদের প্রথম দাবি হচ্ছেঃ সিরিয়ান এক শরণার্থীকে তারা বলেছিল, “ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়া সত্যিই সহজ, এবং এতে মাত্র দুই ঘন্টা লাগে”।

অনুসন্ধানঃ অনেক অভিবাসী ও উদ্বাস্তু ভূমধ্যসাগর দিয়ে প্রবেশ করতে চায়, কিছু ক্ষেত্রে তারা চোরাকারবারিদের অনেক অর্থ প্রদান করে নিরাপদ ভ্রমণের আশায়। ডয়েচে ভেলে’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধুমাত্র ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অন্তত ১২০,০০০ মানুষ ইউরোপে পালিয়ে যাওয়ার জন্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছে। কতজন মারা গেছে বা নিখোঁজ রয়েছে তা সঠিকভাবে পরিমাপ করা কঠিন। যদিও UNHCR এর মতে, এই সময়ে ভূমধ্যসাগরে ১,৭০০ এর-ও বেশি শরণার্থী ইতোমধ্যেই মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে, প্রায় ২৬,০০০ মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে৷ অন্যান্য অনেক সংস্থা বলেছে; প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।

কিন্তু ভূমধ্যসাগরের পথ এত বিপজ্জনক কেন?
এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে। ভূমধ্যসাগর ক্রসিং করে ইউরোপে প্রবেশ করতে এক দিন থেকে এমনকি এক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এছাড়াও, প্রবেশের জন্য সম্ভাব্য কয়েকটি রুট রয়েছে। এতে কমপক্ষে ৮০ কিলোমিটার পাড়ি দিতেই হবে, তবে মাঝে মাঝে কয়েক’শ কিলোমিটার-ও অতিক্রম করতে হতে পারে। যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত অনেক নৌকা-ই এই পথে যাত্রার উপযোগী নয়।
ইউএনএইচসিআর এর ক্রিস মেলজার জানিয়েছেন, “দুর্ঘটনার একটি সাধারণ কারণ হলো- নৌকাগুলি এতটাই অকল্পনীয়ভাবে খারাপ যে তা ডুবে যায় বা ফুটো হয়ে যায়। এই নৌকাগুলি প্রায়শই ছোট রাবারের তৈরি হয়ে থাকে (ডিঙ্গি)। যা মূলত উপকূল থেকে ১০০ মিটার এর কিছু দূরে যাওয়ার জন্য তৈরি ও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু মানব পাচারকারী নিজেদেরকে বাঁচাতে পরে দাবি করে যে, যে ইঞ্জিন বিকলের কারণে এই সমস্যা হয়েছে।” এছাড়াও,
- তার উপরে নৌকাগুলোতে প্রায়ই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী বহন করা হয়।
- ডিঙ্গি যা বহন করতে পারে তার চেয়ে বেশি যাত্রীকে বহন করে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়।
- উপরন্তু: পারাপারের সময় সমস্যা হলে (মাঝপথে), সাহায্য পাওয়ার কোন উপায় নেই।
- ভূমধ্যসাগরের মাঝখানে প্রায়ই কোন মোবাইল ফোন পরিষেবা (নেটওয়ার্ক) নেই।
- রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বাধীন সমুদ্র উদ্ধার তৎপরতা বিগত বছরগুলিতে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
- উদ্বাস্তুরা বারবার অ-ইউরোপীয় দেশের কোস্টগার্ডদের হাতে গ্রেপ্তার এবং আটক হয় (যেমন লিবিয়া)।
সুতরাং, ভূমধ্যসাগর একটি নিরাপদ পালানোর পথ (ইউরোপে প্রবেশের পথ) নয় বরং এটি আসলে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সমুদ্র পথগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। তাই, প্রথম দাবিটি মিথ্যা।

দ্বিতীয় দাবি
জার্মানিতে অভিবাসন পাওয়া সিরিয়ান এক শরণার্থীর বক্তব্য অনুযায়ী, মানব পাচারকারীদের দ্বিতীয় দাবি হচ্ছেঃ “ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি চাকরির স্বর্গ, সেখানে প্রচুর কাজের ক্ষেত্র রয়েছে”। সে কারণে ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশী অনেক শরণার্থী এবং অভিবাসীও বিশ্বাস করতে চায় যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি চাকরির স্বর্গ।”
জার্মানিতে অভিবাসন পাওয়া সিরিয়ান আনাস মুস্তফা জানান, “মানব পাচারকারীরা বলেছিল- সপ্তাহে একবার কাজ করতে হবে, একদিনে ৩০০ বা ৪০০ ইউরো পাবেন। সরাসরি একটি অ্যাপার্টমেন্ট দেওয়া হবে। এমনকি জার্মান ভাষাও শিখতে হবে না।”
মোটকথা দাবি হলো যেঃ ইইউতে ভাল বেতনের চাকরি পাওয়া সহজ এবং দ্রুতই তা পাওয়া যায়।

অনুসন্ধানঃ ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন বলছে, শ্রম বাজারে অ্যাক্সেস আসলে এত সহজ নয়। কারণঃ
- প্রথমত, আইনি দিক আছে। কারো যদি ইউরোপে লিগ্যাল স্ট্যাটাস (বৈধতা) না থাকে তাহলে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয় না। তাই, অনেক শরণার্থী এবং অভিবাসীদেরকে অবৈধ চাকরি করতে হয়। ফলে খুব খারাপ কাজের পরিবেশেও তাদেরকে কাজ করতে হয়। কর্তৃপক্ষ তাদের ট্র্যাক করলে তারা শোষণের সম্মুখীন হয় এবং নির্বাসিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে।
[তবে, তারা যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দেশে আশ্রয়-প্রার্থনা করার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করে থাকে, তাহলে সেটা আলাদা বিষয়।]
- ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন বলছে, এই আইনটি কতটা ভালোভাবে বাস্তবায়িত হবে তা অনেক ক্ষেত্র বিশেষে পরিবর্তিত হতে পারে এবং আইনটি আসলে অভিবাসীদের জন্য একটি চাকরি খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রেও গ্যারান্টি দেয়না। এরপরেও তারা বছরের পর বছর ধরে চাকরি ছাড়া শরণার্থী শিবিরে আটকে থাকতে পারে। এছাড়াও, শেষ পর্যন্ত আশ্রয়-প্রার্থনা প্রক্রিয়া সফল হবে তারও কোনো গ্যারান্টি নেই।
- ২০২১ সালে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে অর্ধেকেরও বেশি (৫০%) আশ্রয়প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।
- কিন্তু যদি আবেদন গৃহীত হন, তাহলে কাজ করার অধিকার আছে। এটা হচ্ছে আইনি দিক। কিন্তু এর একটি ব্যবহারিক দিক-ও আছে। উদ্বাস্তুদের জন্য ইউরোপে, বিশেষ করে তাদের মূল পেশায় এবং ভালো বেতনে চাকুরী করা প্রায়শই সহজ নয়। ইইউ বহির্ভূত নাগরিকদের আবাসন, খাদ্য পরিষেবা কার্যক্রম, নির্মাণ, গার্হস্থ্য কাজে খাতে বেশি নিয়োগ করা হয় এবং শিক্ষা বা আর্থিক কর্মকান্ডের মত ভাল বেতনের খাতে কম নিয়োগ করা হয়।
- অন্যান্য দিক যা শ্রমবাজারে ভিবাসীদের মানিয়ে নেওয়া কঠিন করে তোলে তা হলোঃ ভাষা এবং কখনও কখনও সেই দেশের সামাজিক কুসংস্কার।
জার্মানির সবচেয়ে বড় অভিবাসনপ্রার্থী অ্যাডভোকেসি সংস্থা “PRO ASYL” এর “কার্ল কোপ” জানান; “কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, কেউ যদি আশ্রয়প্রার্থী পদ্ধতিতে থাকেন, তাহলে ইইউ-এর একটি নির্দেশনা অনুসারে তার সাধারণত নয় মাস পরে শ্রম বাজারে প্রবেশাধিকার থাকে।”
তিনি আরো জানান; “এমনকি অভিবাসন প্রত্যাশী উচ্চ যোগ্য শিক্ষাবিদদেরও নির্বাসনে প্রথমে সামাজিক মর্যাদার ক্ষতি হয়। কারণ তাদের ডিপ্লোমা, তাদের কর্মঘণ্টা সঠিকভাবে মুল্যায়ন নাও হতে পারে, যা অনেক সময় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। একজন অত্যন্ত দক্ষ ডাক্তারকে একজন নার্স এর চাকুরি করতে হতে পারে।”
সুতরাং, সংক্ষেপে বলা যায়: শ্রম বাজারে প্রবেশাধিকার একজন ব্যক্তির আইনি অবস্থার উপর নির্ভর করে। একজন শরণার্থীকে কাজ শুরু করার অনুমতি দেওয়া পর্যন্ত কিছু সময় লাগবে এবং অনেক শরণার্থী ভাল বেতনের, নিশ্চিত কর্মসংস্থানের জন্য সংগ্রাম করে থাকে।
অতএব, ইউরোপে ভাল বেতনের চাকরি পাওয়া এত সহজ নয়। তাই দ্বিতীয় দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

তৃতীয় দাবি
প্রতি বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নে পৌঁছানোর চেষ্টা করা অনেক শরণার্থীর মধ্যে গর্ভবতী মহিলা, শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক এবং সঙ্গিহীন উপজাতি থাকে।
আফগান এক শরণার্থীর বক্তব্য অনুযায়ী, মানব পাচারকারীদের তৃতীয় দাবি হচ্ছেঃ “পাচারকারীরা উদ্বাস্তুদের বলে যদি কারো বয়স ২০ বা ২১ হয় তবে নিজেকে ছোট করুন (ডকুমেন্টস-এ)। কারণ এতে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সুবিধা হবে। অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে কর্তৃপক্ষ তাদেরকে নির্বাসন দিতে পারবে না।”
সংক্ষেপে দাবি হলোঃ “গর্ভবতী নারী বা অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে আশ্রয়ের নিশ্চয়তা (নিশ্চিতভাবে রিফিউজি স্ট্যাটাস) দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন”।

অনুসন্ধানঃ ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন বলছে, এটা সত্য যে এই দুটি গ্রুপকে বিশেষভাবে দুর্বল বলে মনে করা হয়। অতএব, তারা নির্দিষ্ট শর্ত এবং গ্যারান্টির অধিকারী হতে পারে।
এ বিষয়ে জার্মানির সবচেয়ে বড় অভিবাসনপ্রার্থী অ্যাডভোকেসি সংস্থা “PRO ASYL” এর “কার্ল কোপ” জানান; “এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে ইউরোপীয় আইন এবং আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে যা তাদের (গর্ভবতী মহিলা ও নাবালক শিশুদের) প্রাথমিকভাবে রক্ষা করে। অর্থাৎ, আইনটি নিশ্চিত করে যে তাদেরকে মানবিক উপায়ে গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে শিশুদের জন্য উপযুক্ত সহায়তা এবং গর্ভবতী মহিলা হিসাবে তাদের চিকিৎসার চাহিদা পূরণ ও তাদের পর্যাপ্ত পরিচর্যা করা হয়”।
তবে ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন বলছে, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। যেমনঃ
- রিফিউজি স্ট্যাটাস– গর্ভবতী হওয়া বা সঙ্গীহীন নাবালিকদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক সুরক্ষার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত করা হয়না। তাদেরকে অন্য যেকোনো ব্যক্তির মতো একই আবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্য দিয়েই যেতেই হবে।
- সহায়ক সুরক্ষা (Subsidiary protection)– জাতি, ধর্ম, জাতীয়তা এবং রাজনৈতিক মতামতের কারণে নির্যাতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে শরণার্থী মর্যাদা দেওয়া হতে পারে।
- নির্বাসন নিষেধাজ্ঞা (Deportation ban)– যদি কেউ শরণার্থী মর্যাদা বা সহায়ক সুরক্ষার জন্য যোগ্য না হয় তাহলে নির্বাসনে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত হবে। আর অনুপ্রবেশ করা-কে মানবাধিকার সম্পর্কিত ইউরোপীয় কনভেনশনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। অথবা (সেখানকার নাগরিকদের) জীবন, অঙ্গ বা স্বাধীনতার জন্য যথেষ্ট বিপদজনক হিসেবে বিবেচিত হবে।
- সহনশীলতা (Toleration)- সহনশীলতা মানে-ই আবাসিক পারমিট নয়, সহনশীলতা এর অর্থ হলো নির্বাসন শুধুমাত্র সাময়িকভাবে স্থগিত করা। কোনো ব্যক্তি ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত না হলে বা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র হারিয়ে গেলে এটি মঞ্জুর করা হতে পারে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর “ক্রিস মেলজার” জানান, “গর্ভবতী মহিলাদের সাধারণত নির্বাসিত করা হয় না, তবে অন্তত সহ্য করা হয় (Toleration)। এটা সত্য যে শিশুদের নির্বাসিত করা হয় না, কিন্তু এর মানে এই নয় যে শিশুরা অবিলম্বে শরণার্থী হিসাবে স্বীকৃত হয়। এছাড়াও, শিশুরাও কোন একটা সময় পরে ১৮ বছর বয়সী হয়ে যায়।”

গর্ভবতী মহিলারা সন্তান প্রসব করার পর এবং শিশুরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর কী হয়
ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন বলছে, এটা হতে পারে যে দিনের শেষে তারা একটি ইইউ দেশে থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি তারা সেখানে থাকে একটি দীর্ঘ সময় থাকে এবং ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেসি সংস্থা “PRO ASYL” এর “কার্ল কোপ” জানান; “যখন তারা (শরনার্থী কিংবা অভিবাসী) ইতোমধ্যেই সমাজের অংশ এবং তারা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। যখন তারা কাজ করছে বা তারা সহজভাবে স্থায়ী হয়েছে। তারপর অবশ্যই আমরা তাদের ক্ষেত্রে স্থায়ী বাসিন্দা অধিকার নিয়েও আলোচনা করি। জার্মানি সেটাই করে, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমস্ত দেশ বিভিন্ন শর্তে এটিই করে: সাধারণ ক্ষমা, থাকার অধিকার, পুরোনো কেস রেগুলেশন।”
ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন বলছে, প্রতিটি ঘটনা আলাদা। অর্থাৎ, এই বিষয়টি যে সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে তা নয়। পারিপার্শ্বিকতা ও বিভিন্ন বিষয়ের বিবেচনায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন ধরণের ফলাফল হতে পারে। কারো ক্ষেত্রে সহায়ক সুরক্ষা (Subsidiary protection), কারো ক্ষেত্রে সহনশীলতা (Toleration) দেওয়া হতে পারে। আবার কারো ক্ষেত্রে ভিন্ন ঘটনা-ও ঘটতে পারে।
সুতরাং, গর্ভবতী বা নাবালক হলে নিশ্চিতভাবে রিফিউজি স্ট্যাটাস দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন” শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

আর একটি মিথ
এছাড়াও দাবি করা হয় যে, “ইইউ দেশে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই দেশের জাতীয়তা বা নাগরিকত্ব পাবে।” [ শরণার্থীদেরকে বলা হয় ]

তবে, ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন বলছে “এই দাবিটিও সত্য নয়”।
কেননা, ১৯৯৭ সালের ইউরোপিয়ান কনভেনশন অন ন্যাশনালিটি অনুযায়ী, রাজ্যগুলো (যে রাজ্যে শিশুরা জন্মাবে) এই শিশুদের রাষ্ট্রহীন (নাগরিকত্বহীন) হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তাদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে এমন আইন প্রণয়ন করবে। এটি কখনও কখনও উদ্বাস্তু এবং অভিবাসীদের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ঘটে (দেওয়া হয়)। কারণ পিতামাতারা, তাদের মূল দেশের (যেখান থেকে এসেছে) কর্তৃপক্ষের সাথে নিবন্ধন করতে সক্ষম হননা। কিন্তু বাস্তবে, এই নিয়ম অকার্যকর থেকে যায়।
কিছু ইইউ সদস্য রাষ্ট্র কনভেনশনের আওতাভুক্ত নয়, অন্যরা তাদের জাতীয় আইনে এটি কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছ। অতএব, গর্ভবতী বা নাবালক হওয়া আপনার ইউরোপীয় ইউনিয়নে আশ্রয়ের নিশ্চয়তা দেয় না।
ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন আরো বলছেঃ ইইউ এজেন্সি ফর অ্যাসাইলাম অনুসারে, এসকল ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে বিশেষ সুরক্ষা পাওয়া উচিত। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে কেউ শরণার্থী অবস্থা বা সহায়ক সুরক্ষার অধিকারী কিনা তা একটি ভিন্ন প্রশ্ন।

সুতরাং, অভিবাসী কিংবা শরনার্থীদের প্রসঙ্গে মানব পাচারকারীদের “ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়া সত্যিই সহজ, এবং এতে মাত্র দুই ঘন্টা লাগে” শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। এছাড়াও, তাদের “ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি চাকরির স্বর্গ, সেখানে প্রচুর কাজের ক্ষেত্র রয়েছে” বা “ইইউতে ভাল বেতনের চাকরি পাওয়া সহজ এবং দ্রুতই তা পাওয়া যায়” শীর্ষক দাবি দুইটি বিভ্রান্তিকর। কেননা, অভিবাসী কিংবা শরনার্থীদের ক্ষেত্রে “ইউরোপে ভাল বেতনের চাকরি পাওয়া এত সহজ নয়”।পাশাপাশি, “গর্ভবতী বা নাবালক হলে আশ্রয়ের নিশ্চয়তা দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন” কিংবা “ইইউ দেশে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই দেশের জাতীয়তা বা নাগরিকত্ব পাবে” শীর্ষক দাবি দুটি-ও নির্ধারিতভাবে সত্য নয়।
[ উল্লেখ্য, এই প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে’র “Myths human traffickers tell refugees and migrants” ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিবেদন (ভিডিও) থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। ]
তথ্যসূত্র
- Refugeesmigrants.un.org- Definitions | Refugees and Migrants