সাংবাদিকতা একটি প্রযুক্তি নির্ভর শিল্প। প্রযুক্তির প্রসারেই প্রথমে সংবাদপত্র, পরে ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং বর্তমানে অনলাইন সাংবাদিকতার প্রচলন শুরু হয়েছিল। অনলাইন গণমাধ্যম মানেই অবাধ ও দ্রুততার সাথে তথ্য প্রবাহ করা। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে প্রেস মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন মিডিয়া প্লাটফর্ম। অনলাইন সাংবাদিকতায় একই সাথে অডিও, ভিডিও, ছবি এবং তথ্য উপস্থাপন করা হয়। আধুনিক ইন্টারনেট প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে মুহুর্তেই সারা বিশ্বে তথ্য ছড়িয়ে দিতে সক্ষম এ অনলাইন মিডিয়া।

অনলাইন সাংবাদিকতার জনপ্রিয়তার কারণে প্রিন্ট মিডিয়ার জাতীয় দৈনিকগুলোও এখন অনলাইন সংস্করণ বের করছে। যেমন: প্রথম আলো, ইত্তেফাক, যুগান্তর, কালের কণ্ঠ, সমকাল, ডেইলি স্টার, ইনডিপেনডেন্ট প্রভৃতিসহ বেশিরভাগ পত্রিকারই অনলাইন সংস্করণ আছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোও অনলাইন পোর্টাল ব্যবহার করছে তাদের পরিপূরক হিসেবে। এটিএন বাংলা, চ্যানেল আই, একুশে টিভি, আর টিভি, এন টিভি, বাংলা ভিশন, বৈশাখী টিভি, দেশ টিভি, মাই টিভি, মোহনা টিভি সহ প্রায় সবগুলো টেলিভিশন চ্যানেলেরই অনলাইন সংস্করণ আছে।
অনলাইন সাংবাদিকতার এতো প্রচলন ও জনপ্রিয়তার ভীড়ে যে বিষয়টি শঙ্কার হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হলো ভুয়া অনলাইন পোর্টালগুলোর আধিক্য বেড়ে যাওয়া। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে অনিবন্ধিত অথবা বেনামি অনেক অনলাইন পোর্টাল সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে। প্রচলিত মিডিয়াগুলোর নাম একটু এদিক সেদিক করে পাঠকের চোখকে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতাও লক্ষ্যনীয়। জনপ্রিয় কোনো গণমাধ্যমের নামের আগে বা পরে একটু পরিবর্তন এনেই এসব ভুয়া অনলাইন পোর্টালগুলো ব্যবসা করে যাচ্ছে।
ভূঁইফোড় অনলাইন পোর্টাল চিহ্নিতকরণ
চ্যানেল ২৪.কম( টেলিভিশন অনলাইন), নিউজ ২৪. কম ( টেলিভিশন অনলাইন), বিডিনিউজ ২৪.কম, বাংলা নিউজ ২৪. কম, জাগো নিউজ ২৪.কম, বিডি ২৪ লাইভ.কম, গোনিউজ ২৪.কম, নিউজ বাংলা ২৪. কম, বাংলার খবর ২৪.কম,শীর্ষ নিউজ ২৪.কম, বিডি ২৪ রিপোর্ট. কম, বিডি ভিউ ২৪.কম, বার্তা ২৪. কম, এমটি নিউজ ২৪.কম, শেয়ার নিউজ ২৪. কম, বাংলা ২৪.কম, সংবাদ প্রতিদিন ২৪. কম, ইত্যাদি হলো কয়েকটি নিবন্ধিত অনলাইন পোর্টাল যেগুলোতে ‘২৪ ডট কম’ উল্লেখ আছে। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে এ নিউজ পোর্টালগুলো বেশ পরিচিতও হয়ে উঠতে পেরেছে।
এসব পোর্টাল গুলোকেই একটু পরিবর্তন করে ভূঁইফোড় পোর্টালগুলো পরিচালিত হতো। যেমনঃ এননিউজ২৪.কম, আজনিউজ ২৪.কম, চিত্রা নিউজ ২৪.কম, বিজয় নিউজ ২৪.কম, অপরাধ চোখ ২৪. কম,সেরা নিউজ ২৪.কম, বিডিভিউ ২৪.কম, জাগরণবার্তা ২৪. কম, বাংলা মেইল ২৪.কম ইত্যাদি। ২০২১ সালের অক্টোবরে এ পোর্টালগুলোকে অনিবন্ধিত হওয়ার দায়ে বন্ধ করে দিয়েছিলো।
বাংলানিউজ২৪.কমের ডোমেইনের সাথে মিল রেখে আরো অন্তত ১০টি ডোমেইন খোলা হয়েছে এবং বেশির ভাগই নিউজ পোর্টালের। এ পোর্টালগুলো সংবাদ বা তথ্য অন্য পোর্টাল থেকে কপি পেস্ট করে নিয়ে আসে এবং জনপ্রিয় মিডিয়ার নাম বেচে ব্যবসা চালায়।
আরো পড়ুনঃ কোকা-কোলার সিক্রেট রেসিপি কি শুধুমাত্র দুইজন ব্যক্তি জানেন?
এছাড়াও প্রথম আলো, সমকাল, কালের কন্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, একুশে ই টিভি, একাত্তর সহ বেশ কয়েকটি মূলধারার গণমাধ্যম যেগুলো খুবই জনপ্রিয় সেগুলোর নামেও হালকা পরিবর্তন এনে অনলাইন পোর্টাল খোলা হয়েছে। যেমনঃ ডিনিউজ৭১.কম, খবর প্রতিদিন ২৪.কম, সমকাল ২৪. কম ইত্যাদি পোর্টালগুলোও ২০২১ সালের অক্টোবরে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ডোমেইন নাম অনেকটা কাছাকাছি হওয়ায় পাঠকের চোখ ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করা সহজ হচ্ছে ভূঁইফোড় পোর্টালগুলোর। এমন ব্রিবতকর পরিস্থিতিতে একদিকে বাড়ছে ভুয়া সংবাদ প্রচারের আশঙ্কা অপরদিকে শীর্ষ স্থানীয় নিউজ পোর্টালগুলো তাদের ডোমেইন নাম নিয়ে ব্রিবত অবস্থার মধ্যে রয়েছে। পাঠক জনপ্রিয়তার কারনে সে বিশাল পাঠকগোষ্ঠীকে সহজেই কম পরিশ্রমে নিজের মিডিয়ার আওতায় আনাই এমন ডোমেইন নাম কাছাকাছি রাখার কারণ। এক শ্রেনীর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান শীর্ষ স্থানীয় ডোমেইনের নামের সাথে মিল রেখে ডোমেইন রেজিষ্ট্রেশন এবং ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে সংবাদ প্রকাশনা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে মূল পোর্টালগুলোকে বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হয়।
উদাহরণস্বরূপ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর.কমের সাথে মিল রেখে ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে প্রায় ২০টির বেশি। আবার, বিডি টোয়েন্টিফোর লাইভ ডট কম রয়েছে সবচেয়ে বেশি বিব্রতকর অস্থায়। বিডি টোয়েন্টিফোর লাইভ. কমের সাথে মিল রেখে খোলা হয়েছে বিডিলাইভ টোয়েন্টিফোর. কম। যা আমাদের পাঠকদের প্রচন্ডভাবে বিব্রত করেছে। আগে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে bd24live অথবা bdlive24 লিখে সার্চ দিয়ে বিডি টোয়েন্টিফোর লাইভ ডট কমই চলে আসত।
ফেক ওয়েবসাইট চিহ্নিত করার উপায়
১. বিবিসি নিউজ বাংলার ওয়েবসাইট bbcbangla.com বা https://www.bbc.com/bengali হলে নামে পরিচিত। ইন্টারনেট জগতে এক নামে দুই পোর্টাল বানানো সম্ভব নয়, তাই হালকা পরিবর্তন এনে যে ভুয়া ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছিল তা হলো bbc-bangla.com। মাঝখানে একটা হাইফেন সংযুক্ত করে পাঠক চোখকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এদিকগুলোতে পাঠকের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
২. আবার, প্রথম আলোর প্রকৃত ওয়েবসাইট হলো prothomalo.com । জনপ্রিয় এ পত্রিকাটির নামে যে ভুয়া ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে তাতে শুধু একটি অতিরিক্ত a যোগ করা হয়েছে, যেমন prothomaalo.com। তাই পাঠককে ভালোভাবে পোর্টালের নামের বানানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বিশ্বের যেকোনো ওয়েবসাইটের পরিচিতি ও ঠিকানার বিষয়াদি দেখাশোনা করে থাকে ইন্টারনেট কর্পোরেশন ফর এসাইন্ড নেইমস এন্ড নাম্বারস (আইক্যান)। কোন ওয়েবসাইট নিয়ে যদি পাঠকের সন্দেহ হয়, তাহলে আইক্যানের ডোমেইন অনুসন্ধান পাতায় গিয়ে তাদের ওয়েবসাইট ঠিকানাটি লিখে দিন বা পেস্ট করলেই সত্যতা নিশ্চিত হবে।
https://whois.icann.org/en এই পাতায় গিয়ে দেখা যাবে ওয়েবসাইটটি কবে তৈরি হয়েছিলো এবং কে তৈরি করেছিলো।
যেমন: বিবিসি নিউজ বাংলার আসল ওয়েবসাইটটি তৈরি হয়েছে ২০০৫ সালে। কিন্তু ফেক ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে তার অনেক পরে। এসব দিকগুলোতে পাঠক নজর দিলে আর প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবেনা।
ইন্টারনেটে যেহেতু একনামে দুইটি ওয়েবসাইট হওয়ার সম্ভাবনা নেই তাই আসল ওয়েবসাইটের সঙ্গে নামের বা ইউআরএল (ইউনিফর্ম রিসোর্স লোকেটর) পার্থক্য অবশ্যই থাকবে। পাঠক তার বিশ্বস্ত সংবাদ পোর্টালটির ইউআরএল বা নামটি মনে রাখলে অথবা ওয়েব ব্রাউজারে বুকমার্কিং করে রাখলেও এ সমস্যা থেকে বের হতে পারবে।
তথ্যসূত্র
- BBC News: বিবিসি, প্রথম আলোসহ নামকরা প্রতিষ্ঠানের নকল ওয়েবসাইটে ভুয়া খবর : বন্ধ করার দায়িত্ব কার – BBC News বাংলা
- Dhaka Tribune: ভুয়া ওয়েবসাইট কীভাবে চিনবেন? | Dhaka Tribune Bangla
- Jugantor: ভুয়া ওয়েবসাইট আর খবর চেনার উপায়
- Prothom Alo: ভুয়া ওয়েবসাইট: আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে প্রথম আলো
- Samakal: ভুয়া ওয়েবসাইট চেনার উপায়