ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ০৫ আগস্ট ক্ষমতা হারায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। তারপর গত ০৮ আগস্ট তারিখে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা বানিয়ে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাবৃন্দদেরকে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু শপথ পড়ান। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা হারানোর এক মাসেরও অধিক সময় হয়ে গেলেও এখনও শেখ হাসিনার পুনরায় ক্ষমতায় ফেরা এবং রাষ্ট্রপতিকে জড়িয়ে অনলাইনে ক্রমাগত ছড়াচ্ছে অপতথ্য। ইউটিউবে তাজা নিউজ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল এসব অপতথ্য ছড়ানোতে আছে বেশ সক্রিয় ভূমিকায়। নানা অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও ফুটেজ, পুরোনো দৃশ্যসহ একাধিক অপ্রাসঙ্গিক মিথ্যা বা সম্পাদিত ছবি ও ভিডিও দিয়ে তৈরি এসব অপতথ্য সমৃদ্ধ ভিডিও পৌঁছাচ্ছে লক্ষ মানুষের দুয়ারে। এই প্রতিবেদনে রয়েছে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে জড়িয়ে সাম্প্রতিক সময়ে তাজা নিউজের ছড়ানো এমন ৭ টি অপতথ্য বা গুজব।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি প্রচারিত উক্ত ৭ টি ভিডিও সব মিলিয়ে ৫ লক্ষ বার দেখা হয়েছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর তাজা নিউজ তাদের ইউটিউব চ্যানেলে “রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর ষড়যন্ত্রে আবারও দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ” শিরোনামে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। ভিডিওটিতে একাধিক ভিন্ন ভিন্ন ফুটেজ ব্যবহার করে দাবি করা হয়, রাষ্ট্রপতির ষড়যন্ত্রে দেশে ফিরছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিটি ভুয়া এবং এই দাবির সপক্ষে ব্যবহৃত ভিডিও ফুটেজগুলোও পুরোনো এবং অপ্রাসঙ্গিক।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে, রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি বা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এর আর্কাইভ ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৫ সালের ২১ জুলাই প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। প্রচারিত ভিডিওটির বেশ কয়েকটি দৃশ্যের সাথে উক্ত ভিডিওটির বেশকিছু অংশ মিলে যায়। উক্ত ভিডিওর বরাতে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি মূলত ২০০৭ সালের ২২ এপ্রিল শেখ হাসিনাকে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার ফ্লাইটে উঠতে বাধা দেওয়ার সময়কার ভিডিও।
পরবর্তীতে, কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধান করে ২০২১ সালের ০৭ মে মূলধারার গণমাধ্যম চ্যানেল আই অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ‘৭ই মে: শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে প্রচারিত ভিডিওতে শেখ হাসিনার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার দৃশ্য হুবহু মিলে যায়। উক্ত ভিডিওর বরাতে জানা যায়, এটি ২০০৭ সালের ০৭ মে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিগত সফর শেষে ৫২ দিন পর দেশে ফেরার দৃশ্য।
তাছাড়া, এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, প্রচারিত ফুটেজগুলো যে সময়কার, তখনও মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হননি।
অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতির ষড়যন্ত্রে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর তারিখে তাজা নিউজ রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে জড়িয়ে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটিতে বিমান থেকে অবতরণের সময়কালীন শেখ হাসিনার বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে দাবি প্রচার করা হয়, রাতেই রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ও সেনাপ্রধানের সহায়তায় দেশে ফিরেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভিডিওটিতে ব্যবহৃত বিমান থেকে শেখ হাসিনার অবতরণের এমন একটি ফুটেজ রিউমর স্ক্যানার টিম যাচাই করে দেখে, ফুটেজটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং গত জুন মাসের। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টে গত ২১ জুন তারিখে প্রকাশিত একটি ভিডিও এর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া যায়। ভিডিওটির বর্ণনা পড়ে জানা যায়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে গেলে ভারতের দিল্লীতে অবতরণের সময়কালীন ফুটেজ এটি।
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উক্ত প্রতিবেদনের প্রথমদিকে ব্যবহৃত আরেকটি ফুটেজেরও মূল উৎস জানা যায়৷ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম WION এ ২০১৭ সালের ০৭ এপ্রিল তারিখে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উক্ত ফুটেজটি ০৪ দিনের এক সফরে ভারতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবতরণের দৃশ্য।
তাছাড়া, আলোচিত দাবিতে তাজা নিউজের প্রচারিত উক্ত প্রতিবেদনের থাম্বনেলে দেখা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ফুল দিয়ে অভ্যার্থনা জানাচ্ছেন।
এ বিষয়েও অনুসন্ধান করলে জানা যায়, উক্ত ছবিটি আসল নয়৷ বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট বা সম্পাদনা করা হয়েছে। মূলধারার সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ প্রতিদিনে ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি ছবি পাওয়া যায় যা ২০১৭ সালে ভারতে শেখ হাসিনার সফরের সংবাদে সংযুক্ত করা হয়। উক্ত ছবির সাথে মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মুখমন্ডল ব্যতীত প্রায় সবকিছুর হুবহু মিল পাওয়া যায়। তাছাড়া, সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মুখমণ্ডলের অবস্থানও অস্বাভাবিক দেখা যায়। অর্থাৎ, শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির পুরোনো একটি ছবিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর তারিখে তাজা নিউজে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে জড়িয়ে আরেকটি প্রতিবেদন প্রচার করা হয়৷ দাবি করা হয়, পদত্যাগ করে সিঙ্গাপুর গিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। এক্ষেত্রে একাধিক সংবাদমাধ্যমের ফুটেজও ব্যবহার করা হয়।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করলে এক্ষেত্রে ব্যবহৃত সংবাদমাধ্যমের সংবাদ পাঠের মূল ফুটেজ পাওয়া যায়৷ বাংলাদেশি গণমাধ্যম দেশ টিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর তারিখে “সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন রাষ্ট্রপতি” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে ব্যবহৃত ফুটেজের হুবহু মিল পাওয়া যায়। দেশ টিভির উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় চিকিৎসার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছিলেন। কিন্তু তাজা নিউজ ফুটেজটি ব্যবহারের সময় চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রপতির সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা বাদ দিয়ে দেয়। তাছাড়া, মূল সংবাদটি প্রায় এক বছর পুরোনো।
তাজা নিউজের উক্ত প্রতিবেদনে আরেকটি ফুটেজও ব্যবহার করা হয়। রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে সে ফুটেজটিরও মূল ভিডিও পাওয়া যায়৷ ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর তারিখে মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে “সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়লেন রাষ্ট্রপতি” শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনের সাথে তাজা নিউজের ব্যবহৃত ফুটেজটির হুবহু মিল পাওয়া যায়। যমুনা টিভির উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, চিকিৎসার জন্য গত অক্টোবর মাসে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু, ফুটেজটি ব্যবহার করার সময় চিকিৎসার বিষয়টি বাদ দিয়ে দেয় তাজা নিউজ।
তাছাড়া, পদত্যাগ করে সিঙ্গাপুরে রাষ্ট্রপতির যাওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, ভিন্ন, পুরোনো এবং অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও এর ফুটেজ কেটে তথ্য বিকৃত করে ভুয়া এই সংবাদ প্রতিবেদনটি প্রচার করা হয়৷
গত ১১ সেপ্টেম্বর তারিখে তাজা নিউজ সংবাদ প্রচার করে, রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর গোপন ভিডিও ফাঁস হয়েছে। বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে রাষ্ট্রপতি অশ্লীল বা অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতেন এবং এরই ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রপতিকে বঙ্গভবন থেকে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করেছে।
তবে, উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কোনো সংবাদমাধ্যম বা বিশ্বস্ত প্রেস কনফারেন্সের কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ উল্লেখ করা হয়নি। তবে, ভিডিওটিতে এক পর্যায়ে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর বেষ্টনী সদৃশ একাধিক গাড়ীর একটি ফুটেজ প্রচার করা হয়। ফুটেজটি থেকে একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে জানা যায়, মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির বরাতে জানা যায় উক্ত ফুটেজটি ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সপরিবারে বঙ্গভবনে উঠাকালীন সময়ের দৃশ্য।
অর্থাৎ, প্রচারিত উক্ত দাবির ক্ষেত্রে ফুটেজটি অপ্রাসঙ্গিক। তাছাড়া, থাম্বনেইলে চুপ্পুর মুখের ছবিসহ একজন নারীর সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়। উক্ত ছবিটির সপক্ষেও কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে জড়িয়ে আরেকটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রচার করে তাজা নিউজ যেখানে দাবি করা হয়, রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর পদত্যাগে নতুন রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ওয়াহাব মিয়া। উক্ত প্রতিবেদনে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে কোনো একটি কাগজে স্বাক্ষর দেওয়ার সময়ের একটি ছবিকে ব্যবহার করে দাবি করা হয়, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু পদত্যাগ করেছেন।
তবে, রিউমর স্ক্যানার টিম যাচাই করে দেখে, পুলিশ নিউজের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ছবিটি ২০২৩ সালের এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে স্বাক্ষর করাকালীন দৃশ্যের।
এছাড়া, উক্ত প্রতিবেদনে উক্ত দাবির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি এবং গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রেও সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর পদত্যাগ কিংবা ওয়াহাব মিয়ার নিয়োগের বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তার আগেরদিন গত ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে তাজা নিউজ রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে জড়িয়ে আরেকটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে দাবি করা হয়, পদত্যাগের সাথে সাথেই বঙ্গভবন থেকে গ্রেফতার হলেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। এক্ষেত্রে গাড়িতে করে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর যাওয়ার একটি ফুটেজও ব্যবহার করা হয়।
উক্ত ফুটেজটি থেকে একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম চ্যানেল আই এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি ভিডিও এর ফুটেজের সাথে মিল পাওয়া যায়৷ ভিডিওটির বর্ণনা পড়ে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি পদে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মনোনয়নপত্র দাখিলের পরবর্তী সময়ের ফুটেজ এটি। অর্থাৎ, উক্ত ভিডিওটিও পুরোনো এবং অপ্রাসঙ্গিক।
এছাড়া, উক্ত প্রতিবেদনে আলোচিত দাবির সপক্ষে বিশ্বস্ত কোনো তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। তবে, থাম্বনেলে সেনাবাহিনীর হাতে সাহাবুদ্দিনের মুখের একজনকে গ্রেফতার সদৃশ অবস্থায় দেখা যায়। উক্ত ছবির বিষয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ইউটিউব চ্যানেলে গত ১২ আগস্ট তারিখে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিতে তাজা নিউজের থাম্বনেলে ব্যবহৃত গ্রেফতারসদৃশ ব্যক্তির আসল ছবি/ভিডিও পাওয়া যায়।
বিএনপির কর্তৃক প্রকাশিত ভিডিওটির দাবি অনুসারে, ঐ ব্যক্তি একজন আওয়ামী লীগ সমর্থক। তবে, তিনি যে-ই রাজনৈতিক আদর্শেরই হোন না কেন, উক্ত ব্যক্তির ছবিটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট বা সম্পাদনা করে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু গ্রেফতার হয়েছেন মর্মে তাজা নিউজ প্রচার করেছে।
তাছাড়া, গত ০৮ সেপ্টেম্বর তারিখে তাজা নিউজ রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে জড়িয়ে আরেকটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রচার করে। প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, সেনাবাহিনীর চাপে পদত্যাগ করলেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। এক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের একটি ফুটেজও ব্যবহার করা হয় যেখানে সংবাদ পাঠককে বলতে শোনা যায়, “নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে পদত্যাগপত্র পাঠালেন প্রেসিডেন্ট। সিঙ্গাপুরে পৌঁছেই ইমেইলে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি।”
এরই প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করলে মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১৪ জুলাই তারিখে প্রকাশিত মূল সংবাদ ফুটেজটি পাওয়া যায়৷ মূল সংবাদ ফুটেজটিতে বলা হয়, “নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে পদত্যাগ পত্র পাঠালেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। সিঙ্গাপুর পৌছে ইমেইলে স্পীকারের কার্যালয়ে পদত্যাগ পত্র পাঠান তিনি।” অর্থাৎ, ব্যবহৃত মূল ফুটেজটি প্রায় ২ বছরেরও অধিক সময়ের পুরোনো এবং মূল সংবাদটি ছিল শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্টের প্রসঙ্গে। উক্ত ভিডিও ফুটেজটি মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর সাথে পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক।
তাজা নিউজের উক্ত প্রতিবেদনে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর একটি বক্তব্যও সংযুক্ত করতে দেখা যায় যেখানে মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে বলতে শোনা যায়, “আমি রাজপথ থেকে বঙ্গভবনে এসেছি। আমি হঠাৎ করে টপকে পড়ি নাই বঙ্গভবনে।” প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ এবং একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে উক্ত বক্তব্যের প্রসঙ্গের অনুসন্ধান করলে ২০২৩ সালের ১৬ মে তারিখে মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে “আমি বঙ্গভবনের টপকে পড়িনি, পাবনার রাজপথ থেকে এসেছি” শিরোনামে প্রকাশিত একটি সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যের ভিডিও এর সাথে হুবহু মিল পাওয়া যায় যা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করে উক্ত ফুটেজটিও পুরোনো।
এরই সূত্র ধরে অধিকতর অনুসন্ধান করলে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৬ মে পাবনা সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত নাগরিক কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। অর্থাৎ, উক্ত ফুটেজটিও পুরোনো এবং আলোচিত দাবিটির ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক।
তাছাড়া, গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রেও তাজা নিউজ কর্তৃক প্রকাশিত উল্লিখিত প্রতিবেদনগুলোর দাবির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।