জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে অপসারণের তথ্যটি ভুয়া

সম্প্রতি, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দাবিটি সঠিক নয়। বরং, কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভুয়া এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুকের উক্ত দাবির কতিপয় পোস্টগুলোতে একটি ব্লগপোস্টের লিংক সূত্র হিসেবে দেওয়া হয়েছে। লিংকটিতে প্রবেশ করে ‘**শিরোনাম: সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান সরিয়ে ফেলা হলো, নতুন সেনাপ্রধান কে—চক্রান্তের কেন্দ্রবিন্দুতে ডঃ ইউনূস?**’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখা যায়। 

সাইটটির লোগো হিসেবে সময় টিভির লোগো ব্যবহার হলেও রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে কথিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা ‘somoytvv247’ নামের ব্লগস্পটের বিনামূল্যের ডোমেইনের এই সাইটটি একটি ভূঁইফোড় সাইট বলে প্রতীয়মান হয়। 

কথিত প্রতিবেদনটিতে তারিখ হিসেবে ১৪ মে ২০২৫ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে এক নজিরবিহীন রদবদল। ব্রেকিং নিউজ সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানকে গোপনে পদচ্যুত করা হয়েছে। রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে এই তথ্যটি নিশ্চিত হয় সরকারের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে। এই নাটকীয় পরিবর্তনের পেছনে যে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোরালো আলোচনা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মোহাম্মদ ইউনূস এই সেনা রদবদলের মূল পরিকল্পনাকারী।

দাবি করা হয়, জেনারেল ওয়াকার উজ জামানকে সম্প্রতি সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ব্যাপক জনপ্রিয় হিসেবে দেখা যাচ্ছিল। তিনি সামরিক বাহিনীর একটি বড় অংশের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা নিজের হাতে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এমন গুঞ্জনও ছড়ায়। কিন্তু আজ রাতে সেনানিবাসে হঠাৎ করে নিরাপত্তা জোরদার হয়, সেনাবাহিনীর মিডিয়া সেল বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং কিছু ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। এরপরই নিশ্চিত হয় ওয়াকার উজ জামান আর সেনাপ্রধান নন।

আরও দাবি করা হয়, নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে কয়েকটি নাম ঘুরছে মেজর জেনারেল (অব.) কামরুল হোসেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সালেহ চৌধুরী এবং বর্তমান ইন্টেলিজেন্স প্রধান ব্রিগেডিয়ার নাহিদ আফসার। বিশ্লেষকরা বলছেন, “যে-ই হন, তিনিই হবেন ইউনূস সরকারের ‘বিকল্প পরিকল্পনার অংশ’। এমন কাউকেই সেনাপ্রধান করা হবে যিনি নিঃশর্ত আনুগত্য দেখাবেন।”

বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষক এখন মনে করছেন দাবিতে উল্লেখ করা হয়, “ডঃ ইউনূস ধীরে ধীরে সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন। মিডিয়া, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা এবং এখন সেনাবাহিনী সবকিছুতেই তার সরাসরি প্রভাব প্রতিফলিত হচ্ছে।”

জাতীয় নাগরিক পার্টি এক বিবৃতিতে দাবি করেছে বলে উল্লেখ করা হয়, “ডঃ ইউনূস এই অপসারণের মাধ্যমে একটি একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটছেন। এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাসঘাতকতা।”

আন্তর্জাতিক মহল নীরব, কিন্তু পর্যবেক্ষণে দাবি করে উল্লেখ করা হয়, যদিও যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা জাতিসংঘ এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ঢাকায় নিযুক্ত দূতাবাসগুলো মধ্যরাতেই ‘রিপোর্ট টু হেডকোয়ার্টার’ মোডে চলে গেছে।

স্বাভাবিকভাবে সেনাপ্রধানকে সরিয়ে দেওয়া হলে কিংবা সেনাপ্রধানের পদে কোনো পরিবর্তন হলে তা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হবার কথা। কিন্তু গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্যসূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s Own Analysis

আরও পড়ুন

spot_img