জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে কিছু পত্রিকার ভূমিকা সংক্রান্ত উপদেষ্টা মাহফুজের বক্তব্যের খন্ডিত অংশ বিকৃতভাবে প্রচার

সম্প্রতি, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ইস্যুতে ‘২০০০ লোক শহীদ হয়নি, এখানে জাস্ট একটা চক্রান্ত হয়েছে হাসিনাকে সরানোর জন্য’ শীর্ষক মন্তব্য তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটিতে মাহফুজ আলমকে বলতে দেখা যায়, “যেখানে রিজিম চেঞ্জ হইছে রিজিম চেঞ্জ অপারেশন হইছে, এখানে ২০০০ লোক শহীদ হয় নাই, এখানে জাস্ট একটা চক্রান্ত হয়েছিল এবং হাসিনাকে উৎখাত করা হইছে।”

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এক্সে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা  মাহফুজ আলমের মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বিভ্রান্তিকর। প্রকৃতপক্ষে, গত ৫ মে রাজধানীর সার্কিট হাউস রোডে ডিএফপির সভাকক্ষে আয়োজিত ‌‌‌‘ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সাংবাদিক হত্যা-নিপীড়ন’ শীর্ষক এক সেমিনারে মো. মাহফুজ আলমের দেওয়া বক্তব্য থেকে একটি খণ্ডিত অংশ কাটছাঁট করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। মূলত ভাইরাল ভিডিও ক্লিপের অংশটিতে তিনি কয়েকটি পত্রিকা জুলাই অভ্যুত্থানকে ভারতীয় ন্যারেটিভের অংশ হিসেবে ‘রিজিম চেঞ্জ’ বা ক্ষমতার পটপরিবর্তন বলছে দাবি করে এর সমালোচনা করেন।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে বায়ান্ন টিভি এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৫ মে ‘আ. লীগের সময় লাইসেন্সপ্রাপ্ত গণমাধ্যমগুলোর তদন্ত করা হবে : তথ্য উপদেষ্টা | Information Adviser’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর ৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিট ২২ সেকেন্ড অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফুটেজটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে মাহফুজ আলম সরকারকে প্রশ্ন করা ইস্যুতে প্রশ্ন করা আর সাংবাদিকতাকে একটি দলের আদর্শের প্রোপাগাণ্ডা আকারে ব্যবহার করা অন্য জিনিস উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই সুযোগে বলতে চাই কয়েকটি পত্রিকা জুলাই অভ্যুত্থান লেখে না। তারা লিখে জুলাই আন্দোলন। তারা বলে না যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সরকার, তারা বলে পট পরিবর্তনের পরবর্তী সরকার। তারা বলে ক্ষমতার পট পরিবর্তন। এটার ইংলিশ জানেন! এটার ইংলিশ হচ্ছে রিজিম চেঞ্জ, রিজিম চেঞ্জ মানে হচ্ছে যেটা ইন্ডিয়ান ন্যারেটিভ যেখানে রিজিম চেঞ্জ হইছে রিজিম চেঞ্জ অপারেশন হইছে, এখানে ২০০০ লোক শহীদ হয় নাই, এখানে জাস্ট একটা চক্রান্ত হয়েছিল এবং হাসিনাকে উৎখাত করা হইছে। এটা কোন সংবাদ মাধ্যম এটা করতে পারে না। যদি তার ভিতরে একটু নৈতিক সাহস আমরা এই সংবাদ মাধ্যম কিন্তু দেখেন আমরা বন্ধ করি নাই। না ওই সম্পাদকরে আমি কল দিছি। না যারা লিখতেছে তাদেরকে আমরা কোন কিছু বলছি। এপ্রিহ্যান্ড করছি। আমরা করবো না। লেখেন জনগণ আপনাদেরকে দেখে নিবে। যারা শহীদ ফ্যামিলি তারা আপনাদেরকে দেখে নিবে। আপনাদের সাহস হয় কিভাবে? আপনারা আপনাদের চোখের সামনে ঘটেছে, এটা কয়েক বছর আগের ঘটনা না। কয়েক মাস আগের ঘটনা। আপনারা এই মানুষগুলো এই শহীদ ফ্যামিলিগুলো এখনো বিচার পায় নাই। সেই বাস্তবতা আমরা দেখি।”

অর্থাৎ, উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বক্তব্য থেকে “যেখানে রিজিম চেঞ্জ হইছে রেজিউম চেঞ্জ অপারেশন হইছে, এখানে ২০০০ লোক শহীদ হয় নাই, এখানে জাস্ট একটা চক্রান্ত হয়েছিল এবং হাসিনাকে উৎখাত করা হইছে” শীর্ষক ভিডিও ক্লিপটুকু কাট করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। যেখানে তিনি, কয়েকটি পত্রিকা জুলাই অভ্যুত্থানকে জুলাই অভ্যুত্থান লেখে না, এরা লেখে জুলাই আন্দোলন যা ইন্ডিয়ান ন্যারেটিভের অংশ বলে সমালোচনা করেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, গত ৫ মে রাজধানীর সার্কিট হাউস রোডে ডিএফপির সভাকক্ষে আয়োজিত ‌‌‌‘ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সাংবাদিক হত্যা-নিপীড়ন’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম গণমাধ্যমের রাজনৈতিকীকরণ এবং জুলাইয়ের ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের সমালোচনা করেছেন।

সুতরাং, গত ৫ মে ডিএফপির সভাকক্ষে আয়োজিত সেমিনারে মো. মাহফুজ আলম জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে কিছু গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করেন, তার সেই বক্তব্যের একটি অংশ কাটছাঁট করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img