সহিংস সংঘর্ষের জেরে আরও একবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারতের মণিপুরের পরিস্থিতি। গত বছরের মে থেকে মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল, তা গত বেশ কয়েকমাস ধরে একরকম বন্ধই ছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বরের গোড়া থেকে আবারও সহিংসতা শুরু হয়।এরই প্রেক্ষিতে, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি রাজ্যের থৈবাল জেলার ডেপুটি কমিশনার অফিস থেকে ভারতের জাতীয় পতাকা খুলে নিয়েছে বলে দাবি করা হয় গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে।
গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন প্রথম আলো, যুগান্তর, সময় টিভি, কালবেলা, আজকের পত্রিকা, চ্যানেল২৪, ইনডিপেনডেন্ট টিভি, ডিবিসি নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা পোস্ট, দৈনিক করতোয়া, সময়ের আলো, ভোরের কাগজ, আরটিভি, দেশ রূপান্তর, ইনকিলাব, ইত্তেফাক, চ্যানেল আই, মাছরাঙা টিভি, এটিএন নিউজ, নয়া দিগন্ত, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস, প্রতিদিনের সংবাদ, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, ঢাকা মেইল, দৈনিক আমাদের সময়, এনটিভি, প্রবাস টাইমস, বিজনেস বাংলাদেশ, নিউজজি২৪, বাংলা আউটলুক, খবর সংযোগ, ঢাকা টাইমস, শেয়ার নিউজ২৪, সোনালী নিউজ, মানবকণ্ঠ, সাম্প্রতিক দেশকাল, আমার বার্তা, বিজনেস আওয়ার২৪, দৈনিক সংগ্রাম, সময়ের কণ্ঠস্বর, যায়যায়দিন, এমটিনিউজ২৪, বাংলাদেশ জার্নাল, নয়া শতাব্দী, নতুন সময়, আজকালের খবর, আমাদের সময়, জুম বাংলা, জনবাণী৷
এছাড়া, ডেইলি বাংলাদেশ উক্ত দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করে পরবর্তীতে সরিয়ে নিয়েছে৷ উক্ত সংবাদের লিংক বা আর্কাইভ সংস্করণ পাওয়া যায়নি।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন দৈনিক ইত্তেফাক (ইউটিউব)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মণিপুরের থৈবাল জেলার ডেপুটি কমিশনার অফিস থেকে শিক্ষার্থীরা ভারতের জাতীয় পতাকা খুলে নেয়নি বরং তারা সালাই টারেট পতাকা খুলে নিয়েছিল যা মণিপুরের মেইতেই জাতির সাতটি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Jûñgly Bøy নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর স্থান ও পারিপার্শ্বিক বিষয়ের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, এটি ভারতের মণিপুরের থৈবাল জেলার ডেপুটি কমিশনার অফিসের সামনের দৃশ্য।
পরবর্তীতে ডেপুটি কমিশনার অফিসের ওপরে টাঙানো পতাকাটি পর্যবেক্ষণ করে পতাকায় সবুজ, লাল ও হলুদ রং থাকার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে ভারতের জাতীয় পতাকার কেন্দ্রস্থলে নীল রঙের অশোকচক্র সংবলিত গেরুয়া, সাদা ও সবুজ রঙ আছে।
Flag Comparison: Rumor Scanner
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে নর্থ ইস্ট এর ফেসবুক পেজে গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা সেদিন পুরোনো সালাই টারেটের পতাকা নামিয়ে একটি নতুন পতাকা প্রতিস্থাপন করেছিল।
উত্তর-পূর্ব ভারতের ডিজিটাল নিউজ প্লাটফর্ম ইস্ট মোজোর এক প্রতিবেদনে থৈবাল জেলার ডেপুটি কমিশনার এ সুভাষ সিংয়ের বরাত দিয়েও নিশ্চিত করা হয়, ভাইরাল ভিডিওতে ছাত্রদের যে পতাকাটি খুলতে দেখা যাচ্ছে, সেটি ভারতের জাতীয় পতাকা নয়। বরং সেটি সাত রঙ বিশিষ্ট সালাই টারেট পতাকা।
এছাড়া ৯ সেপ্টেম্বর ভারতের মণিপুর পুলিশের অফিশিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দিয়ে জানানো হয় যে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থী কর্তৃক ভারতের জাতীয় পতাকা নামানোর তথ্যটি মিথ্যা। মণিপুরের থৈবাল ডিস্ট্রিক্ট ডেপুটি কমিশনার অফিসের বাইরের গেটে একটি পুরানো এবং জীর্ণ সালাই টারেট পতাকা প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা করে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে গেট থেকে পতাকা দুটি সরিয়ে ফেলা হয়।
সালাই টারেট হচ্ছে মেইতেই জনগোষ্ঠীর ব্যবহার করা পতাকা। এই অঞ্চলটি একসময় সম্পূর্ণভাবে নাগা এবং মিজোর মতো পাহাড়ি উপজাতির মতো লোকদের দ্বারা অধ্যুষিত ছিল। ভারতের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান আজতক বাংলা জানাচ্ছে, সালাই টারেট পতাকা কাংলেইপাকের পতাকা নামেও পরিচিত। এটি সাত রঙের একটি আয়তাকার পতাকা যেটি মণিপুরের মেইতেই জনজাতির সাতটি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে।
অন্যদিকে কতিপয় গণমাধ্যমে সেভেন সিস্টার্সের পতাকা লাগানোর বিষয় সংক্রান্ত দাবি আসলেও আদতে এমন কোনো পতাকার অস্তিত্বই নেই। ভারতের ফ্যাক্টচেকাররা বিষয়টি রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
সুতরাং, ভারতের মণিপুরে সালাই টারেটের পতাকা প্রতিস্থাপনের দৃশ্যকে ভারতের পতাকা নামানোর দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Jûñgly Bøy – Facebook Video
- India Today NE – Facebook Post
- Manipur Police – X Post
- britannica.com – Meitei