বৃহস্পতিবার, মার্চ 28, 2024
spot_img

ছবিটি ১৮৬৫ সালের মাথা ব্যথার চিকিৎসার নয়

১৮৬৫ সালে মাথা ব্যাথার চিকিৎসা” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ কয়েক বছর ধরে প্রচার হয়ে আসছে।

২০২২ সালে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এখানে

২০২১ সালে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানেএখানে


২০২০ সালে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানেএখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানেএখানে। 


২০১৯ সালে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানেএখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানেএখানে। 

যা দাবি করা হচ্ছে

মাথা ব্যথার চিকিৎসা দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে এক ব্যক্তির মাথা একটি হাড়ির ভেতর ঢুকিয়ে কাঠের একটি হাতুরি দিয়ে হাড়িতে আঘাত করা হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে এই পদ্ধতিতে ১৮৬৫ সালে মাথা ব্যথার চিকিৎসা করা হতো।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি ১৮৬৫ সালের মাথা ব্যথার চিকিৎসার নয় বরং মাথা ব্যথার চিকিৎসায় সে সময় ভাইব্রেশন থেরাপি নামে যে চিকিৎসা চলতো তার সাথে ছবিতে দেখানো আলোচিত পদ্ধতিটির মিল নেই।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে শুরুতে ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চে খুঁজে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। ছবিটি গেল কয়েক বছর ধরে অসংখ্যবার ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে শেয়ার করা হলেও ছবির মূল উৎস বা আন্তজার্তিক কোনো গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো ওয়েবসাইটে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে লিথুনিয়ান আর্ট, ডিজাইন এবং ফটোগ্রাফি কমিউনিটি ‘Bore Panda’ এর ওয়েবসাইটের এক প্রতিবেদনে উক্ত ছবিটিকে মাথাব্যথার চিকিৎসার ১৮৯০ এর দশকে ‘ভাইব্রেশন থেরাপি’ নামক একটি পদ্ধতি হিসেবে উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে উক্ত ছবি বা সংশ্লিষ্ট ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ নেই উক্ত প্রতিবেদনে। 

ভাইব্রেশন থেরাপি বিষয়ক সূত্র ধরে পরবর্তীতে অনুসন্ধান শুরু করে রিউমর স্ক্যানার টিম।  

কি-ওয়ার্ড সার্চে, লেখক Mary Lydia Hastings Arnold Snow রচিত “Mechanical vibration” নামক বইয়ে  ভাইব্রেশনাল থেরাপির সম্ভাব্য কিছু চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। 

বইটিতে ভাইব্রেটরকে হাতে ধরা যায় এমন ছোট একটি যন্ত্র হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। যন্ত্রটির বর্ণনায় আরও বলা হয়েছে, পেশী এবং স্নায়ুর স্থুল চর্বি, হৃদযন্ত্রের রোগ, ল্যারিঞ্জাইটিস এবং নিউমোনাইটিস, হজমের ব্যাধি, অঙ্গ, গ্রন্থি ফুলে যাওয়া ইত্যাদি রোগের প্রতিকারে এই যন্ত্রের ব্যবহার হয়।

পরবর্তীতে, ইংল্যান্ডের ফিজিশিয়ান জোসেফ মর্টিমার গ্র্যানভিলে’র লেখা বই “Nerve-vibration and Excitation as Agents in the Treatment of Functional Disorder and Organic Disease.” তে ভাইব্রেটর সম্পর্কে আরও ধারণা পাওয়া যায়।

গ্রানভিলে তার বইতে বলেছেন, এই যন্ত্রে একটি ব্রাশ সংযুক্ত ছিলো, যা খুব সন্তর্পনে মাথার ত্বকে ডানে-বামে ও উপর-নীচ করে ঐ স্থান সুশৃঙ্খল্ভাবে মর্দন করে দিতো।

এরপর Peter J. Koehler, Christopher J. Boes রচিত ‘Brain’ বইয়ের ১৩৩ নাম্বার ভলিউমে “A history of non-drug treatment in headache, particularly migrain” শীর্ষক শিরোনামে একটি পরিচ্ছেদ পাওয়া যায়। 

বইটি থেকে জানা যায়, ১৯ শতকের শেষে, জিন-মার্টিন চারকোট এবং পরে তাঁর ছাত্র জর্জেস গিলস দে লা ট্যুরেট পারকিনসন্স রোগের জন্য ভাইব্রেশন থেরাপি ব্যবহার করেছিলেন।পরবর্তীতে, এটি মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেনের চিকিৎসায়ও  প্রয়োগ করা হয়।

ব্রেইন নামক এই বইটিতেও ভাইব্রেশন থেরাপির চিত্র হিসেবে জোসেফ মার্টিমার গ্র্যানভিলের বইয়ে দেখানো চিত্রটি দেখানো হয়েছে।

Brain বইটি ১৯ শতকে মাথা ব্যথার চিকিৎসায় ভাইব্রেশন থেরাপি ছাড়া কাপিং(উষ্ণ একটি গ্লাস কপালে বা ঘাড়ে বসিয়ে দেওয়ার ফলে ওই স্থানের মাংস কিছুটা ফুলে ওথে যা সাময়িক আরাম দেয়), রক্তপাত (কপালের কোনো শিরা বা ধমণী কেটে রক্ত পাত ঘটানো হতো। ধারণা করা হতো রক্তপাতের ফলে মাথা ব্যথা কমে যাবে) এর মতো কিছু চিকিৎসার উল্লেখ থাকলেও হাড়ির ভেতর মাথা ঢুকিয়ে হাড়িতে আঘাত করার মতো কোনো চিকিৎসার তথ্য পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, আলোচিত ছবিটি ১৮৬৫ সালের মাথা ব্যথার চিকিৎসার নয়।

ছবিটি কীসের? 

আলোচিত ছবিটির মূল উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান ‘Snopes’ জানিয়েছে, ছবিটি ১৯ শতকের ভাইব্রেশন থেরাপির ছবি নয়। ছবিটির উৎস সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, ধারণা করা যায় যে, একাধিক ছবির মিশেলে এই ছবিটিকে তৈরী করা হয়েছে।

মূলত, ১৯ শতকে অর্থাৎ, ১৮০০ থেকে ১৯০০ সালে চিকিৎসা শাস্ত্র খুব একটা উন্নত না থাকায় স্থানীয় চিকিৎসকেরা নানা উপায়ে রোগমুক্তির প্রচেষ্টা করতেন। চিকিৎসা শাস্ত্রে ওষুধ আবিষ্কারের পূর্বে নানা ধরণের কর্তন-মর্দনের উপরই নির্ভরশীল থাকতে হতো মানুষকে। ভাইব্রেশন থেরাপি তেমনই একটি মর্দন থেরাপি যা মাথা ব্যথা উপশমে ব্যবহৃত হতো। তবে, ভাইব্রেশন থেরাপি ১৯ শতকে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পরের থেরাপি। যে যন্ত্রটি দ্বারা ভাইব্রেশন বা কম্পন তৈরী করা হতো তা একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র ছিলো। যা, অত্যন্ত সন্তর্পণে হালকাভাবে মাথার ত্বকে সুশৃঙ্খলভাবে মর্দন করে দিতো। সহজ করে বললে, ভাইব্রেশন থেরাপিতে প্রকৃতপক্ষে যন্ত্র দ্বারা রোগীর মাথা টিপে দেওয়া হতো। পরবর্তীতে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য ছাড়া হাড়ির ভেতর এক ব্যক্তির মাথা ঢোকানো অবস্থায় হাড়ির গায়ে আঘাত করার ছবিকে ১৮৬৫ সালে মাথা ব্যথার চিকিৎসার ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, এক ব্যক্তির মাথা একটি হাড়ির ভেতর ঢুকিয়ে কাঠের একটি হাতুরি দিয়ে হাড়িতে আঘাত করার একটি ছবিকে  ১৮৬৫ সালে মাথা ব্যথার চিকিৎসার ছবি দাবিতে ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img