যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ ঘোষণা করে দেশটির নতুন আমদানি শুল্ক নীতির ঘোষণা দেন। এই নীতির আওতায় ৫ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা সব ধরনের আমদানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে ভিত্তিমূল্য শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রায় ৯০টি দেশের জন্য চালু হচ্ছে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে, তাদের পণ্যের ওপর সেই শুল্কের অর্ধেক হারে আমদানি শুল্ক বসাবে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন এই পারস্পরিক শুল্কহার ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এ ব্যবস্থায় বাংলাদেশের ওপরও ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত হয়।
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর আরোপিত ৩৭ শতাংশ শুল্কহার কমিয়ে ১০ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দিয়েছে দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম এসএ টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত এক পোস্টে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র পুরো বিশ্বের জন্য তিন মাসের শুল্ক স্থগিত করেছে।

ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ‘পারস্পরিক শুল্কহার’ কমানোর সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশের জন্য নেওয়া হয়নি। বরং, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৭৫টিরও বেশি দেশের জন্য ৯০ দিনের জন্য এই শুল্কহার কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে চীনের ক্ষেত্রে উলটো শুল্কহার বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের অনুরোধে সারা বিশ্বের জন্য শুল্ক স্থগিত করার দাবিটিও সত্য নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ৭৫টিরও বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ দেখিয়েছে বলেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ট্রুথ সোশ্যাল প্রোফাইলে গতকাল ৯ এপ্রিল প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন:
“বিশ্ববাজারের প্রতি চীন যে অসম্মানজনক আচরণ দেখিয়ে আসছে, তা বিবেচনায় নিয়ে আজ থেকে যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যের ওপর শুল্কহার ১২৫ শতাংশে উন্নীত করছে। এই সিদ্ধান্ত সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হবে। আশা করছি চীন খুব শিগগিরই বুঝবে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশকে ঠকানোর দিন আর চলবে না।
অন্যদিকে, ৭৫টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য, অর্থ ও শুল্ক প্রতিনিধি দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাণিজ্য, শুল্ক, মুদ্রানীতিমালা ও অন্যান্য অমৌলিক বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনার আগ্রহ দেখিয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আমার সুপারিশ অনুযায়ী এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। এই প্রেক্ষাপটে আমি ৯০ দিনের জন্য ‘পারস্পরিক শুল্কহার’ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং এই সময়ের জন্য সেটিকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হচ্ছে।”
অর্থাৎ, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ঘোষণায় চীনের ওপর শুল্ক ১২৫ শতাংশে বাড়ানো হলেও, অন্য দেশগুলোর জন্য ৯০ দিনের জন্য তা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
গতকাল (৯ এপ্রিল) সিএনএনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, ওই দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘পারস্পরিক শুল্কহার’ ৯০ দিনের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন। এই সময়ে অধিকাংশ দেশের জন্য শুল্কহার কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও, চীনের ক্ষেত্রে শুল্কহার বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়।
প্রতিবেদনটিতে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আরও বলা হয়, মেক্সিকো ও কানাডার ক্ষেত্রেও এই ১০ শতাংশ শুল্কহার প্রযোজ্য হবে না। বরং, এই দুই দেশের প্রায় সব পণ্যের ওপর আগের মতোই ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে।
এছাড়া রয়টার্স, বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনেও ‘পারস্পরিক শুল্কহার’ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার ট্রাম্পের ঘোষণার বিষয়ে একই তথ্য উঠে এসেছে।
অর্থাৎ, শুধু বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্র ৭৫টিরও বেশি দেশের জন্য নতুন শুল্কহার ৯০ দিনের জন্য কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।
সুতরাং, ‘শুধু বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কহার ১০ শতাংশ করা হয়েছে’ এবং ‘বাংলাদেশের অনুরোধে পুরো বিশ্বের শুল্কহার কমানো হয়েছে’ শীর্ষক দুইটি দাবিই বিভ্রান্তিকর।