গত ২০ জানুয়ারি ৪৭ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথ গ্রহণের প্রথম দিনেই একশোর বেশি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প। এমনই এক নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশে মার্কিন সহায়তা স্থগিত করেছে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি দেখুন: আজতক, টিভি নাইন, এবিপি, ক্যালকাটা নিউজ, জি নিউজ, রিপাবলিক বাংলা এবং ওয়ার্ল্ড ইজ ওয়ান নিউজ।
রিপাবলিক বাংলার আলোচিত উপস্থাপক ময়ূখ রঞ্জনের ফেসবুক পেজ থেকেও একই দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়।
ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশের জন্য নেওয়া হয়নি। বরং, বিশ্বের প্রায় সকল দেশের জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের বিদেশি সাহায্য কার্যক্রম ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। তবে, ইসরায়েল ও মিশর সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রে এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য জীবন রক্ষাকারী খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা এই স্থগিতাদেশের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সে গত ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সব বিদেশি সাহায্য কার্যক্রম ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন। এর উদ্দেশ্য হলো এসব সাহায্য কার্যক্রম তার প্রশাসনের নীতিমালার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা পর্যালোচনা করা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই আদেশের ফলে কী পরিমাণ তহবিল স্থগিত হবে, তা স্পষ্ট নয়, কারণ অনেক প্রকল্প ইতোমধ্যেই কংগ্রেস দ্বারা অনুমোদিত এবং অর্থ ব্যয় করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, বিদেশি সাহায্য ব্যবস্থাপনা অনেক ক্ষেত্রে আমেরিকার স্বার্থের সঙ্গে বিরোধী এবং বৈশ্বিক শান্তির জন্য ক্ষতিকর।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও তার বক্তব্যে বলেন, প্রতিটি সাহায্য কর্মসূচি তিনটি প্রশ্নের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে: এটি কি আমেরিকাকে নিরাপদ রাখে? এটি কি আমেরিকাকে শক্তিশালী করে? এটি কি আমেরিকাকে আরও সমৃদ্ধ করে?
একই বিষয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট প্রায় সব বিদেশি সাহায্য কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে এবং নতুন সাহায্য কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে। তবে এই স্থগিতাদেশের বাইরে রাখা হয়েছে শুধু ইসরায়েল ও মিশরের জন্য সামরিক সহায়তা। বিবিসি জানায়, স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি অভ্যন্তরীণ মেমো ফাঁস হওয়ার পর এই তথ্য প্রকাশ্যে আসে।
অর্থাৎ, শুধুমাত্র ইসরায়েল ও মিশর সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রে এই স্থগিতাদেশের বাইরে রাখা হয়েছে। এর বাইরে প্রায় সকল দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের সব বিদেশি সাহায্য কার্যক্রম ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
তবে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি বিবৃতি থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য জীবন রক্ষাকারী খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য স্থগিতাদেশের বাইরে রাখা হয়েছে। ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মকর্তারা প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমানের সঙ্গে এক বৈঠকে গতকাল ২৬ জানুয়ারি এই ব্যতিক্রমের বিষয়ে তাকে অবহিত করেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এই মানবিক পদক্ষেপের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
অর্থাৎ, ইসরায়েল ও মিশর সামরিক সহায়তার মতোই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য জীবন রক্ষাকারী খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা এই স্থগিতাদেশের বাইরে রাখা হয়েছে।
সুতরাং, বিশ্বের প্রায় সকল দেশে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি এর সহযোগিতা কার্যক্রম স্থগিত করা হলেও শুধু বাংলাদেশে সহযোগিতা স্থগিত হওয়ার বিষয়ে প্রচারণা চালানোর বিষয়টি বিভ্রান্তকর।
তথ্যসূত্র
- AP News: Trump suspends US foreign assistance for 90 days pending reviews
- BBC: US orders immediate pause to foreign aid, leaked memo says
- Chief Adviser GOB: Facebook Post