সম্প্রতি, “পৃথিবীর সর্বপ্রথম ক্যামেরা” শীর্ষক শিরোনামে একটি বিশালাকার ক্যামেরার ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এরূপ পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ছবিটি পৃথিবীর সর্বপ্রথম ক্যামেরার নয় এবং ১৮১৪ সালেও তোলা নয় বরং এটি ১৯০০ সালে শিকাগোর জে.এ. এন্ডারসনের তৈরি করা তৎকালীন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ক্যামেরার ছবি।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ফটোস্টক প্লাটফর্ম alamy এর ওয়েবসাইটে “Mammoth camera 2” শীর্ষক শিরোনামের একটি ওয়েব পেজে , আলোচ্য ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ছবির সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Vintage Everyday এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর “Back in 1900, This Giant ‘Mammoth’ Camera Was the World’s Largest Camera” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ১৮৯৯ সালে শিকাগোর ‘দ্য এল্টন লিমিটেড’ নামের রেলগাড়ি নির্মাণকারী কোম্পানি প্রতিসম নকশার একটি রেলগাড়ি নির্মাণ করে। অদ্বিতীয় নকশার এই ট্রেনের একটি প্যানোরমিক ছবি তোলার উদ্দেশ্যেই ট্রেনের নির্মাতারা একটি বিশেষ ক্যামেরার প্রয়োজন অনুভব করেন। ১৯০০ সালে শিকাগোর বিখ্যাত ক্যামেরা নির্মাতা জে.এ. হেন্ডারসন উক্ত ক্যামেরাটির নির্মাণ সম্পন্ন করেন। মাম্মুথ নামক এই ক্যামেরাটিই ছিল তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আকারের ক্যামেরা। পরবর্তীতে চিত্রগ্রাহক জর্জ আর. লরেন্স উক্ত ক্যামেরাটি ব্যবহার করে এল্টন কোম্পানির নির্মিত রেলগাড়ির সম্পূর্ণ প্যানোরোমা ছবি ধারণ করেন।
উক্ত নিবন্ধের সাথে মাম্মুথ নামক বিশেষ এই ক্যামেরা তৈরির সময়কার ছবিও খুঁজে পাওয়া যায়।

মাম্মুথ ক্যামেরা তৈরির সময় ধারণকৃত এই ছবি থেকে এটি স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, মাম্মুথ তৈরি হওয়ার পূর্বেই পৃথিবীতে ক্যামেরা আবিষ্কৃত হয়েছিল।
পরবর্তীতে, পৃথিবীর সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত ক্যামেরার বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, Nashville Film Institute এর ওয়েবসাইটে “When Was The Camera Invented? Everything You Need To Know” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ইতিহাসবিদদের মতে ১৮১৬ সালের পৃথিবীর সর্বপ্রথম ফটোগ্রাফিক ক্যামেরা উদ্ভাবন করেন ফরাসি উদ্ভাবক জোসেফ নিসেফর নিয়েপ্স। এই ক্যামেরা ব্যবহার করে ১৮২৬ সালের কাছাকাছি কোনো সময়ে তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো ফটোগ্রাফটি ধারণ করেন।
এছাড়াও, উক্ত ফটোগ্রাফটি টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত আছে বলে জানা যায় নিবন্ধটিতে।

উক্ত নিবন্ধের সূত্র ধরে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যারি র্যানসম রিসার্চ সেন্টারের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ফরাসি উদ্ভাবক জোসেফ নিসেফর নিয়েপ্স ১৮১৬ সালে উদ্ভাবিত ক্যামেরা দিয়ে ১৮২৭ সালে তার দ্বিতল গবেষণাগারের জানালা দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো ছবিটি ধারণ করেন।

মূলত, ১৮৯৯ সালে রেলগাড়ি নির্মাণকারী কোম্পানি ‘দ্য এল্টন লিমিটেড’ প্রতিসম নকশার একটি বিশেষ রেলগাড়ি নির্মাণ করে। এই রেলগাড়ির সম্পূর্ণ প্যানোরোমিক ছবি ধারণের উদ্দেশ্যে ১৯০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের ক্যামেরা নির্মাতা জে.এ. হেন্ডারসন তৎকালীন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ক্যামেরা নির্মাণ করেন। জে.এ. হেন্ডারসনের নির্মিত মাম্মুথ নামক সেই ক্যামেরার একটি ছবিকেই সম্প্রতি পৃথিবীর সর্বপ্রথম ক্যামেরা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বে থার্মাল ক্যামেরায় মানুষের বাতকর্মের দৃশ্য ধারণের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, পৃথিবীর সর্বপ্রথম ক্যামেরার ছবি দাবিতে ১৯০০ সালে তৈরিকৃত মাম্মুথ ক্যামেরার একটি ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে: যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Alamy: “Mammoth camera 2”
- Vintage Everyday: “Back in 1900, This Giant ‘Mammoth’ Camera Was the World’s Largest Camera”
- Nashville Film Institute: “When Was The Camera Invented? Everything You Need To Know”
- University of Texas: Harry Ransom Center