সম্প্রতি, ‘থার্মাল ক্যামেরা যাতে কিনা অদৃশ্যও দেখা যায় সেই ক্যামেরায় রের্কড করা হয়েছে এই ভিডিওটি! দেখা দেখা গিয়েছে পাদও!!’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), এবং পোস্ট (আর্কাইভ)।
যা দাবি করা হচ্ছে
প্রচারিত ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, থার্মাল বা ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করে মানুষের বাতকর্মের বা পাদের ছবি ধারণ করা সম্ভব।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, থার্মাল বা ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করে মানুষের বাতকর্মের ছবি ধারণ করা সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে, Banana Factory নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল ২০১৬ সালে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় থার্মাল ক্যামেরায় ধারণ করা কয়েকটি ফুটেজে বিনোদনের উদ্দেশ্যে বাতকর্মের ইফেক্ট যুক্ত করে ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করে। বর্তমানে উক্ত ভিডিওটির কিছু অংশ কেটে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
আলোচিত ভিডিওটির মূল সূত্র অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Banana Factory নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি ‘People farting on thermal camera in public!’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওতে দেখানো থার্মাল ক্যামেরায় ধারণ করা অংশগুলোর সাথে হুবহু মিল রয়েছে।
ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, এই চ্যানেলটির সদস্যরা থার্মাল ক্যামেরার সহায়তায় মানুষের বাতকর্মের ছবি ধারণ করা যায় কি না এটি জানার কৌতুহল থেকে ক্যামেরাটি ব্যবহার করে পাবলিক প্লেসে কিছু ভিডিও ধারণ করেন। কিন্তু দেখা যায়, ক্যামেরাটি তা ধারণ করতে ব্যর্থ হয়। তাই তারা মানুষদের হাসানোর উদ্দেশ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিওটি সম্পাদনা করে তাতে বাতকর্মের ইফেক্ট ব্যবহার করে ভিডিওটি তৈরি করে প্রচার করেন।
এছাড়া বিবরণীতে থার্মাল ক্যামেরা প্রসঙ্গে বলা হয়, থার্মাল ক্যামেরা হল এমন এক ধরনের ক্যামেরা, যা মূলত ইনফ্রারেড রেডিয়েশনের সহায়তায় ছবি তৈরি বা ধারণ করে। সাধারণ ক্যামেরা যে প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান আলোর সহায়তায় ছবি ধারণ করে অনেকটা সেই প্রক্রিয়ায় এটি কাজ করে । তবে সাধারণ ক্যামেরা যেখানে দৃশ্যমান আলোর ৪০০-৭০০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্য পর্যন্ত সংবেদনশীল, সেখানে থার্মাল ক্যামেরা ১০০০-১৪০০০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্য পর্যন্ত সংবেদনশীল। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে এবং অনুসন্ধানে এর ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়াও বৈদ্যুতিক তার সংযোগের সাথে যুক্ত প্রকৌশলীরা সম্ভাব্য ত্রুটি অনুসন্ধানে এটি ব্যবহার করেন।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে উক্ত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ডিজিটাল আধেয় বা কন্টেন্ট প্রকাশক LAD Bible এর ওয়েবসাইটে গত ২৫ আগস্ট ‘Experts expose truth behind ‘fart’ shown in viral infrared footage’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাই করতে Mythbusters নামের বৈজ্ঞানিকদের একটি দল Fart-o-matic নামের একটি যন্ত্র তৈরি করে। যা মানুষের শরীর থেকে নির্গন্ত বায়ুর তাপমাত্রার অনুকরণে বায়ু নির্গমন করতে সক্ষম। তাদের পরীক্ষায় দেখা যায়,উক্ত যন্ত্র থেকে নির্গত বায়ু থার্মাল ক্যামেরায় ধরা পড়ে না। থার্মাল ক্যামেরায় কোনো গ্যাসের ছবি ধরা পড়ার জন্যে সেই গ্যাসের তাপমাত্রা পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রার চেয়ে ঠান্ডা অথবা গরম হতে হবে। এটি দেখানোর জন্যে তারা একটি কম্প্রেস্ড গ্যাসের স্প্রে বোতল থেকে স্প্রে করে পরীক্ষা করেন। তখন দেখা যায়, তুলনামূলক ঠান্ডা এই গ্যাস থার্মাল ক্যামেরায় স্পষ্টভাবে দৃ্শ্যমান হয়।
অপরদিকে অনুসন্ধানে দেখা যায়, মানুষের বাতকর্ম তৈরি হওয়ার সময় তাপমাত্রা থাকে ৯৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা সাধারণত পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা।
এছাড়া Thermal Warrior নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল ‘Can Infrared See Your Farts?’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটি থেকে জানা যায়, গ্যাসের চিত্র ধারণ করার জন্যে এক ধরনের বিশেষ থার্মাল ক্যামেরার প্রয়োজন হয়। সাধারণ থার্মাল ক্যামেরার সহায়তার গ্যাস দেখতে পাওয়া যায় না। গ্যাসের চিত্র ধারণ করার জন্য জনপ্রিয় থার্মাল ক্যামেরা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান FLIR একটি বিশেষ থার্মাল ক্যামেরা তৈরি করেছে। মূলত গ্যাস লিকেজের হাত থেকে পরিবেশের সুরক্ষার স্বার্থে এই বিশেষ ধরনের ক্যামেরা তৈরি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এই থার্মাল ক্যামেরাগুলোতে একটি বিশেষ তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্ধারণ করেছে, যাতে করে গ্যাসের রেডিয়েশনের চিত্র ধারণ করা সম্ভব হয়।
পাশাপাশি উক্ত ভিডিওতে আরও দেখানো হয়, , থার্মাল ক্যামেরার সহায়তায় মানুষের বাতকর্মের চিত্র ধারণ করা সম্ভব নয়।
মূলত, ২০১৬ সালে Banana Factory নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের সদস্যরা থার্মাল ক্যামেরা ব্যবহার করে মানুষের বাতকর্মের ছবি ধারণ করা সম্ভব কি না সেটি জানতে একটি পরীক্ষামূলক ভিডিও ধারণ করে। কিন্তু তাতে বাতকর্মের ছবি ধারণ করা সম্ভব না হলে তারা ডিজিটাল প্রযুক্তি সহায়তায় তাতে বাতকর্মের ইফেক্ট যুক্ত করে বিনোদনের উদ্দেশ্যে তাদের ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রচার করে। সম্প্রতি সেই ভিডিওটিরই কিছু অংশ কেটে নিয়ে থার্মাল ক্যামেরার মাধ্যমে মানুষের বাতকর্মের চিত্র ধারণ করা সম্ভব দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, থার্মাল বা ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করে মানুষের বাতকর্মের ছবি ধারণ যায় দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Banana Factory Youtube Channel: (26) People farting on thermal camera in public! – YouTube
- LAD Bible Website: Mythbusters expose truth about farts being visible from thermal imaging (ladbible.com)
- Thermal Warrior Youtube Channel: Can Infrared See Your Farts? – YouTube
- NBC News: Passing time by passing gas, plus fun fart facts!