গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালায় ইসরায়েল। এই হামলার জবাবে গত ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলে সরাসরি হামলা চালিয়েছে ইরান। ইরান হামলা চালানোর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিরিয়ার গ্রামের বৈদ্যুতিক তারে ইরানের ড্রোন আটকে আছে দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি ফাঁকা জমির উপর দিয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারের লাইনে একটি ড্রোন আটকে আছে।

এই ভিডিও এবং উক্ত দাবি সম্বলিত ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ভিন্ন ভাষায় প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সিরিয়ার গ্রামের বৈদ্যুতিক তারে ইরানি ড্রোন আটকে পড়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ইসরায়েলে ইরানের হামলার ভিডিও নয় বরং এই ভিডিওটি অন্তত গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যমান।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে, Vlogging NW Syria নামের এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের শিরোনামে বলা হয়, ’হাসাকাহ গ্রামাঞ্চলের কামার আল-দিন শহরে একটি অজ্ঞাত ড্রোন বৈদ্যুতিক তারে বিধ্বস্ত হয়।’
আরো অনুসন্ধান করে, Steele M নামের এক্স অ্যাকাউন্টে একইদিন (২১ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত আরেকটি পোস্ট (আর্কাইভ) পাওয়া যায়। উক্ত এক্স পোস্টে বলা হয়, ’উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় হাসাকাহ প্রদেশের আবু খাশব শহরের কাছে কামার আলদিন গ্রামে একটি আত্মঘাতী ড্রোন বৈদ্যুতিক ও যোগাযোগ লাইনে বিধ্বস্ত হয়েছে। বিস্ফোরকগুলির কোনও বিস্ফোরণ ছাড়াই ইউএভি সম্পূর্ণরূপে অক্ষত রয়েছে, এটি অপসারণ করা খুব বিপজ্জনক।’
QalaatM নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে এই বিষয়ে একই পোস্ট (আর্কাইভ) পাওয়া যায় যেখানে তিনি লেখেন, ‘হাসাকাহ প্রদেশে বৈদ্যুতিক তারে একটি অজ্ঞাত ড্রোন আটকে আছে।’

হাসাকা (আল-হাসাকা) সিরিয়ার একটি প্রদেশ। সিরিয়ার ১৪টি প্রদেশের মধ্যে এটি একটি। এই প্রদেশটি সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত।
তবে এই এক্স পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এটি ইসরায়েলে ইরানের হামলার দৃশ্য নয়।
মূলত, গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার জবাবে ১৩ এপ্রিল ইরান নিজেদের ভূখন্ড থেকে সরাসরি ইসরায়েলে ড্রোন ও মিসাইল দিয়ে হামলা চালায়। ইরানের এই হামলায় ব্যবহৃত একটি ড্রোন সিরিয়ার গ্রামে বৈদ্যুতিক তারে আটকে আছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, অন্তত গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ইন্টারনেটে এই ভিডিওটি পাওয়া যাচ্ছে।
সুতরাং, ইন্টারনেট থেকে পুরোনো একটি ভিডিও সংগ্রহ করে সিরিয়ার গ্রামের বৈদ্যুতিক তারে ইরানের ড্রোন আটকে পড়ার সাম্প্রতিক দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।