২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেনি

গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসারের বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন দেখুন যুগান্তর, নয়া শতাব্দী, শেয়ার নিউজ২৪, বাংলা ইনসাইডার, নিউজজি২৪, বিডি২৪রিপোর্ট (ফেসবুক)।

বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুন

এছাড়া যমুনা টিভি, সময় টিভি এবং চ্যানেল২৪ এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে পরে সরিয়ে নিয়েছে। তবে প্রতিবেদনের আর্কাইভ পাওয়া যায়নি।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ২২ সেপ্টেম্বর কোনো আগুন লাগার ঘটনা ঘটেনি বরং ব্যাংকের চলমান সংস্কার কাজের ধোঁয়া ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠার ঘটনাকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে মূল ধারার সংবাদমাধ্যম ঢাকা ট্রিবিউন এর ওয়েবসাইটে গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকার মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুনের অ্যালার্ম বেজে ওঠার সংবাদ পেয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল চারটি ইউনিট। তবে সেটি ফলস অ্যালার্ম ছিল বলে জানা গেছে। 

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিডিয়া শাজাহান শিকদারের বরাত দিয়ে ঢাকা ট্রিবিউন লিখেছে, সেদিন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ফায়ার সার্ভিসের জরুরি নম্বরে একটি ফোন আসে। আগুন লেগেছে এমন একটি সংবাদ দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে তারা একটি ইউনিট পাঠালে সেখানে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিস জানতে পারে, কে বা কারা ভুল করে সতর্কতামূলক অ্যালার্ম বাজিয়েছে।

একই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হকের বক্তব্যও রয়েছে। জনাব হক বলেছেন, “আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি বাংলাদেশ ব্যাংকে আজ (২২ সেপ্টেম্বর) কোনো আগুন লাগার ঘটনা ঘটেনি। তবে কী কারণে ফায়ার সার্ভিসের চাকরি ইউনিট এসেছিল তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। হয়তো কারও ভুল ইনফরমেশনের কারণে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট এসেছিল।” 

Screenshot: Dhaka Tribune 

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে জাতীয় দৈনিক ‘আমার সংবাদ’ এর ওয়েবসাইটে একই ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্যাংকের চলমান সংস্কার কাজের ধোঁয়া ভেতরে প্রবেশ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যালার্ম বেজে ওঠে।

‘আমার সংবাদ’ বলছে, বেলা আড়াইটার দিকে সংস্কার কাজ থেকে কিছুটা ধোঁয়ার  সৃষ্টি হয়। সেই ধোঁয়া ভেতরে প্রবেশ করলে জোরেশোরে ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠে। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে থাকা স্ট্যান্ডবাই ফায়ার ইউনিট ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় নিরাপত্তা বিভাগ থেকে ফায়ার সার্ভিসের জরুরি নম্বরে কল করা হলে আরও তিনটি ইউনিট ছুটে আসে।

 Screenshot: Amar Sangbad

একই ঘটনার বিষয়ে সময় টিভি’র একটি ভিডিও প্রতিবেদনে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, “একটি ভুল তথ্য দিয়েছে। একটি মিসকল চলে গেছে। মিসকল যাওয়ায় উনি বলবে যে মিসকল গিয়েছে, তা না বলে উনি ভুলে বলে ফেলেছে যে আগুন লেগেছে।”

এই প্রতিবেদনেও ব্যাংকের চলমান সংস্কার কাজের ধোঁয়া ভেতরে প্রবেশ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যালার্ম বেজে ওঠে বলে জানানো হয়েছে। 

মূলত, গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আগুন লেগেছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ব্যাংকের চলমান সংস্কার কাজের ধোঁয়া ভেতরে প্রবেশ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠলে উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনো আগুন লাগার ঘটনার অস্তিত্ব পায়নি৷ 

সুতরাং, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চলমান সংস্কার কাজের ধোঁয়া ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠার ঘটনাকে ব্যাংকে আগুন লাগার ঘটনা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে: যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img