সম্প্রতি, “চার বাংলাদেশী নারী মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ সালে তাদের তোলা ছবিটি পুননির্মাণ করেছেন” শীর্ষক শিরোনামে দুটি ছবির কোলাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে বন্দুক ও গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল ধরে একটি গাড়িতে বসা চার নারীর দুটি ছবির একটি কোলাজ ছবির চার নারীকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করা হয়েছে।
![](https://rumorscanner.com/wp-content/uploads/2023/04/image-321-1024x1024.png)
ফেসবুকে প্রচারিত এমন দাবির কিছু সাম্প্রতিক পোস্ট এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
আর্কাইভ এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
একই দাবিতে ২০২১ সালে প্রচারিত কিছু পোস্ট এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গাড়ীতে বসা চার নারীর ভাইরাল কোলাজ ছবিতে থাকা নারীরা মুক্তিযোদ্ধা নন এবং কোলাজ ছবিতে থাকা সাদাকালো ছবিটি ১৯৭১ এবং রঙিন ছবিটি ২০২১ সালে তোলা নয় বরং সাদাকালো ছবিটি ১৯৬১ এবং ওই ছবির অনুরুপভাবে রঙিন ছবিটি ২০১৭ সালে তোলা।
সাদাকালো প্রথম ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করার মাধ্যমে Bangladesh Old Photo Archive নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০১৩ সালের ১৯ জুলাই দেওয়া একটি পোস্টে অনুরূপ ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে ছবিটির ক্যাপশন দেয়া হয়, “Women are posing with gun in a village trip. Bangladesh (1965). Photo courtesy- Renan Ahmed.”
![](https://rumorscanner.com/wp-content/uploads/2023/04/image-322.png)
উপরোক্ত পোস্টে থাকা ফটো কর্টেসির ব্যক্তি রেনান আহমেদ এর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট অনুসন্ধানে ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট দেওয়া একটি ফেসবুক পোস্টেও ঐ ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটির ক্যাপশনে সময়কাল ১৯৬১ দেখা যায়।
![](https://rumorscanner.com/wp-content/uploads/2023/04/image-323-1024x655.png)
২০২০ সালের ২৫ আগস্ট ছবিতে থাকা রোকেয়া আহমেদ নামের নারীর মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের সাথে উক্ত পোস্টে বেশকিছু ছবি যুক্ত করা হয়, যার মধ্যে ভাইরাল কোলাজ ছবির সাদাকালো ছবিটি ‘১৯৬১’ ক্যাপশনে রয়েছে।
উক্ত ছবির কমেন্ট বক্সে করা এক ব্যক্তির কমেন্টের রিপ্লাইয়ে রেনান আহমেদ এর একটি কমেন্ট পাওয়া যায়। যেখানে তিনি লিখেছেন, সাদকালো ছবিটি ১৯৬১ সালের এবং ছবিটি তোলেন তার দাদা।
![](https://rumorscanner.com/wp-content/uploads/2023/04/image-324-569x1024.png)
রেনান আহমেদ এর উপরোক্ত কমেন্ট এবং অন্য আরেকটি কমেন্ট থেকে জানা যায় ১৯৬১ সালে তোলা ঐ ছবিটি ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে রেনান আহমেদ এর পিতা আমিন উদ্দিন আহমেদ পুননির্মাণ করেন।
![](https://rumorscanner.com/wp-content/uploads/2023/04/image-325.png)
অর্থাৎ, কোলাজ ছবিটির মধ্যে সাদাকালো ছবিটি ১৯৬১ সালে তোলা হয় এবং ২০১৭ সালে সেই ছবির অনুরূপ রঙিন ছবিটি তোলা হয়
অনুসন্ধানে দেখা যায় ২০২১ সালে প্রথম ভাইরাল এ কোলাজ ছবির চার নারীকে মুক্তিযোদ্ধা এবং ছবি দুটির সময়কাল ১৯৭১ এবং ২০২১ দাবি করা হয়।
![](https://rumorscanner.com/wp-content/uploads/2023/04/image-326-1024x895.png)
তাদের মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে প্রচারিত কোলাজ ছবিটি ভাইরাল হলে ছবির নারীদের পরিবারের সদস্যরা তা মিথ্যা হিসেবে উল্লেখ করে পোস্ট করেন।
অনুসন্ধানে Afrina Haque নামের একটি ফেসবুক আইডিতে ২০২১ সালের ২৪ মার্চ দেওয়া তেমনি একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে আফরিনা হক ছবির তিন নারীকে তার চাচী এবং একজনকে ফুফু উল্লেখ করে তাদের ছবিকে চার নারী মুক্তিযোদ্ধার ছবি দাবি করার বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে উল্লেখ করে পোস্টটি করেছেন।
![](https://rumorscanner.com/wp-content/uploads/2023/04/image-328-924x1024.png)
বিষয়টি নিয়ে সেসময় ২০২১ সালের ৩১ মার্চ প্রথম আলোতে “ভাইরাল দুই ছবি, নেপথ্যে ভিন্ন গল্প” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
![](https://rumorscanner.com/wp-content/uploads/2023/04/image-329-1024x895.png)
উক্ত প্রতিবেদন থেকে রেনান আহমেদ এর পিতা আমিন উদ্দিন আহমেদ এর বক্তব্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মা-চাচিদের ছবি ফেসবুকে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিব্রত ব্যবসায়ী আমিন উদ্দিন বলেন,
“কোনোভাবেই এটি মুক্তিযুদ্ধের ছবি নয়। পারিবারিক একটি ছবি। প্রথম ছবির মতো করে দ্বিতীয়বার ছবি তুলতে গিয়ে বন্দুক নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। আমার লাইসেন্স করা বন্দুক একজনের হাতে দিই। আর একজনের হাতে একটি স্টিক ধরিয়ে দিই।”
উক্ত প্রতিবেদনে একই গাড়ীতে বসা আমিন উদ্দিন আহমেদ এর একটি ছবিও পাওয়া যায়।
![](https://rumorscanner.com/wp-content/uploads/2023/04/image-330.png)
এছাড়াও আমিন উদ্দিন আহমেদ এর স্ত্রী রিফাত আহমেদ এর হাতে ষাটের দশকে তোলা চার নারীর সেই ছবির বাঁধাই করা একটি ছবিও প্রতিবেদন থেকে পাওয়া যায়।
![](https://rumorscanner.com/wp-content/uploads/2023/04/image-331.png)
প্রতিবেদনে রিফাত আহমেদ এর বক্তব্যও পাওয়া যায়। যেখানে তিনি বলেছেন,
“ফেসবুকে ছবিটি নিয়ে ঝড় বইছে তা দেখছি। প্রতিবাদও করছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কেউ ইচ্ছে করে ছবিটি নিয়ে বিতর্ক করছেন তা নয়, তবে এর পেছনে অশিক্ষা অবশ্যই বড় কারণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি শেয়ার করার আগে কেউ তার সঠিক ইতিহাস জানার চেষ্টা করছে না। আর আমার দাদাশ্বশুর ছিলেন সেই সময়ের ধনাঢ্য ব্যক্তি। তাঁর পরিবার মুক্তিযুদ্ধের সময় নানাভাবে সহায়তাও করেছে। তবে ছবির এই চারজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নন।”
প্রথম আলোর এই প্রতিবেদনের ভিডিও সংস্করণও রয়েছে। ভিডিও সংস্করণ দেখুন এখানে।
![](https://rumorscanner.com/wp-content/uploads/2023/04/image-332.png)
একই দাবিটি ২০২১ সালে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় দাবিটিকে মিথ্যা হিসেবে সনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো।
মূলত, ষাটের দশকে একটি পরিবারের চার নারীর গাড়ীতে বসে তোলা একটি ছবি এবং ২০১৭ সালে ঐ ছবির অনুরূপভাবে তোলা ছবি কোলাজ করে ঐ চার নারীকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে ছবি দুটি তোলার সময়কাল ১৯৭১ এবং ২০২১ বলে দাবি করে প্রচার করা হয়। তবে ঐ ছবিতে থাকা নারীদের পরিবার তাদের মুক্তিযোদ্ধা দাবির বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে নিশ্চিত করেছেন।
সুতরাং, ষাটের দশকে তোলা চার নারীর একটি ছবিকে ১৯৭১ সালে তোলা নারী মুক্তিযোদ্ধার ছবি দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।