সম্প্রতি, “ইসরায়েলি সৈন্যরা জোর করে ইসরায়েলি সৈন্যকে যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সে কাঁদছে আর বলছে- না, আমি মরতে চাই না!” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইসরায়েলি সৈন্যকে জোর করে যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের নয় বরং ভিডিওটি ২০০৫ সালের ভিন্ন একটি ঘটনার পুরানো ভিডিও।
ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘ציוני פטריוטי ישראלי’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৪ সালের ৬ আগস্ট ‘התנתקות 2005 – ד”ר סודי נמיר צדק – מחילה סליחה וכפרה (হিব্রু ভাষা)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে দাবিটি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান মিসবারে গত ৯ অক্টোবর ‘The video is old and does not show an Israeli officer refusing to go to fight in the Gaza Strip‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিটির নাম সোদি নামির, যিনি একজন ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী। ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা উপত্যকা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের সময় তাকে জোরপূর্বক গুশ কাতিফ বসতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, সোদি নামিরকে গুশ কাতিফ বসতি থেকে সামরিক পোশাক পরিহিত দুইজন ব্যক্তি যাত্রীবাহী বাসের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সোদি নামির চিৎকার করে বসতি ছেড়ে চলে যেতে অস্বীকার করছিলেন এবং বলছিলেন, হত্যাকারীরা ইসরায়েলে প্রবেশ করবে এবং তাদের রকেট অ্যাশকেলনে (ইসরায়েলের একটি শহর) আঘাত করবে।
পাশাপাশি ২০২১ সালের ১২ মে ‘מרים כהן’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত ভিডিও থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
মূলত, ২০০৫ সালে ডিসএনগেজমেন্ট প্ল্যান নামে একটি চুক্তির আওতায় ইসরায়েল গাজা উপত্যকা থেকে ৮ দিনে ২৫ টি বসতি প্রত্যাহার করে নেয়। এই ২৫ টি বসতির একটি ছিল গুশ কাতিফ। এই গুশ কাতিফের সোদি নামির নামক একজন বসতি স্থাপনকারীকে সামরিক পোশাক পরিহিত দুইজন ব্যক্তি নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি চিৎকার করে যেতে অস্বীকার করেন। সে সময়ের ধারণকৃত একটি ভিডিওকেই সম্প্রতি ইসরায়েল-ফিলিস্তন সংঘাতকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলি সৈন্যরা জোর করে আরেক ইসরায়েলি সৈন্যকে যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়। চলমান এই সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, ২০০৫ সালে গাজা থেকে একজন ইহুদি বসতি স্থাপনকারীকে সরিয়ে নেওয়ার একটি ভিডিওকে সম্প্রতি ইসরায়েলি সৈন্যরা জোর করে আরেক ইসরায়েলি সৈন্যকে যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- ציוני פטריוטי ישראל – Youtube Video
- ‘מרים כהן – Facebook Post
- Misbar: The video is old and does not show an Israeli officer refusing to go to fight in the Gaza Strip