বিএনপির প্রতি ক্ষোভ থেকে ফেস্টুন ছেঁড়ার ভিডিও দাবিতে ছাত্রদলের পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ব্যানার-ফেস্টুন সরানোর ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক, বিজ্ঞাপনীসহ সকল ধরণের ব্যানার সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। উক্ত ভিডিওটি প্রচার পোস্টের ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, “বিএনপির পোস্টার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছে! কিছু জায়গায় বিএনপির পার্টি অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে! সারাদেশে বিএনপির বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিক্ষোভ জামাত শিবিরের বিক্ষোভ!”

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত ভিডিওটি ২০ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটিতে বিএনপির প্রতি ক্ষোভ থেকে ব্যানার ছেঁড়া হয়নি বরং, গত ২২ জুন সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে বিএনপির সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির অংশ হিসেবে নিজেরাই  ব্যানারগুলো সরিয়েছেন। যেখানে দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক সবরকম ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সিলেট ভিত্তিক স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘লোকাল টাইমস’ এর ফেসবুক পেজে “ছাত্রদলের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে বদলে যাচ্ছে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসের চিত্র” শীর্ষক ক্যাপশনে গত ২৪ জুনে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির নানা দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। 

Comparison : Rumor Scanner

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ শাখার উদ্যোগে ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখসহ আশেপাশের দেয়াল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। অপসারণ করা হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এবং বিজ্ঞাপনী ব্যানার-ফেস্টুন। এছাড়া, রাস্তার সামনের ফুটপাতের অংশে যারা হকার বসতেন তাদেরকে অপসারণ করা হয়েছে।… রোববার (২২ জুন) দুপুরে ছাত্রদলের কলেজ শাখার নেতৃবৃন্দ এই পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেন।” উল্লেখ্য যে, প্রচারিত ভিডিওটিতে কারো কারো পরনে ছাত্রদলের টি-শার্টও দেখা যায়।

পাশাপাশি অনুসন্ধানে বিয়ানীবাজার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘স্কাই২৪ টিভি’ এর ফেসবুক পেজেও গত ২৩ জুনে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হতে দেখা যায়। 

এছাড়াও, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি রাহিম হোসেনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনটি ছবির সংযুক্তিসহ গত ২২ জুনে এ বিষয়ে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে তিনি বলেন, “আজকে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে কলেজ প্রাঙ্গনের ব্যানার, ফেস্টুন অপসারণ করা হয়। আসুন সচেতনতার পরিচয় দিয়ে আমরা সকলেই কলেজ প্রাঙ্গনে রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যাবসায়িক ব্যানার, ফেস্টুন টাঙানো থেকে বিরত থাকি।” 

রাহিম হোসেনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের পরিচ্ছন্নতা অভিযানের একটি ভিডিওও পোস্ট গত ১২ জুলাইয়ে প্রচার হতে দেখা যায়। পোস্টটিতে তিনি বলেন, “বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে কলেজ প্রাঙ্গনের ব্যানার অপসারণ করা হয়। তারিখ ২২ জুন ২০২৫ ইংঃ। এখানে দলমত নির্বিশেষে সকল ধরনের রাজনৈতিক, ব্যাবসায়িক ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করা হয়। এই কাজটি করার প্রধান উদ্দেশ্য ও লক্ষ হচ্ছে কলেজ প্রাঙ্গনের পরিষ্কার – পরিচ্ছন্নতা। বর্তমানে লক্ষ করছি এই কাজের কৃতিত্ব নানা সংগঠন নিতে চাচ্ছে। নানাভাবে ভিন্ন ভিন্ন পেইজ থেকে আইডি থেকে ভিডিও সংগ্রহ করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তাই আমি সবাইকে অনুরোধ করবো কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।”

পরবর্তীতে, ভিডিওটি সম্পর্কে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি রাহিম হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি ভিডিওটি সম্পর্কে বলেন, “বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে কলেজ প্রাঙ্গনের ব্যানার অপসারণ করা হয়। তারিখ ২২ জুন ২০২৫ ইংঃ।  এখানে দলমত নির্বিশেষে সকল ধরনের রাজনৈতিক, ব্যাবসায়িক ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করা হয়। ব্যানার অপসারণের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে কলেজ প্রাঙ্গন পরিষ্কার – পরিচ্ছন্ন করা। এখানে বিএনপি, জামাত, গনঅধিকার পরিষদ ইত্যাদি নানা সংগঠনের ব্যানার ছিল। এবং নানা কোচিং সেন্টার, ব্যাবসায়িক ব্যানার ইত্যাদি। বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রদল এগুলো নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার করে।”

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি গত ২২ জুনের এবং ভিডিওটিতে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে হওয়া পরিচ্ছন্নতা অভিযানের দৃশ্য প্রদর্শিত হয়েছে।

সুতরাং, গত ২২ জুন সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে হওয়া পরিচ্ছন্নতা অভিযানের ভিডিওকে বিএনপির প্রতি ক্ষোভ থেকে ফেস্টুন ছেঁড়ার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img