সম্প্রতি,“প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের চিঠি দিলো যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের চিঠি দেয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে দাবিটি প্রচার করা হয়। গত ১৪ জুন রুমিন ফারহানা ২.০ নামক একটি ফেসবুক পেজে “প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করার জন্য চিঠি দিলো যুক্তরাষ্ট্র। তত্ত্বাবধায়ক দেওয়ার চিঠি দিলো ইইউ ২৭ দেশ। BNP” শীর্ষক ক্যাপশনে ৮ মিনিট ৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। ভিডিওটি কয়েকজন বক্তার বক্তব্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং বক্তারা একাধিকবার একটি চিঠির উল্লেখ করেছেন।
ভিডিওটির ১ মিনিট ২ সেকেন্ডে একজন বক্তা নতুন একটি চিঠির করা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন একটি চিঠি যেটার জন্য আওয়ামী শিবিরে ঘুম নেই। আপনারা জানেন যে ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্টকে ইইউর ছয় এমপির চিঠি। নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বাংলাদেশের নির্বাচন। অবাধ, স্বচ্ছ ও পক্ষপাতহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ভূমিকা রাখতে ইইউর কাছে আহবান ৬ এমপির।
সম্পূর্ণ ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৬ এমপির চিঠির কথা উল্লেখ করা হয়েছে একাধিকবার।
এই সূত্র ধরে ইইউর এমপিদের চিঠির ব্যাপারে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে, গত ১৩ জুন দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে “বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইইউতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৬ সদস্যের চিঠি” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলকে বাংলাদেশের বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তারা জোসেপ বোরেলকে বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে অবদান রাখতে অনুরোধ করছি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান ঘটাতে হবে।
এছাড়া, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ (বিএনপি) অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ত করে চলমান সংকটের টেকসই ও গণতান্ত্রিক সমাধান খুঁজে বের করতে আহ্বান জানানো হয়।

পরবর্তীতে, ১৪ জুন বিবিসি বাংলা “মার্কিন কংগ্রেসম্যান বা ইইউ এমপিদের মিঠি সরকারের জন্য কতটা উদ্বেগের?” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে এরকম কোনো সংবাদ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজেও এরকম কোনো নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজেও এবিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের চিঠি দিলো যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষক একটি দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়।তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও খণ্ড খণ্ড ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। কোনোপ্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্য প্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে,যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এমন কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি নতুন ভিসানীতি চালু করা হয়। যা যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে এই নতুন ভিসানীতি চালু করা হয় বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে, ওই ভিসানীতির আগে বা পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি এবং কোনো চিঠির ব্যাপারে উল্লেখও করা হয়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছড়িয়ে পড়া গুজবের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদন পড়ুন এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের চিঠি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- দৈনিক যুগান্তর: “বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইইউতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৬ সদস্যের চিঠি“
- বিবিসি বাংলা: “মার্কিন কংগ্রেসম্যান বা ইইউ এমপিদের মিঠি সরকারের জন্য কতটা উদ্বেগের?”
- স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে
- ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র অ্যাম্বাসি ওয়েবসাইট
- ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র অ্যাম্বাসি ফেসবুক পেজ
- ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট ওয়েবসাইট
- ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট ফেসবুক পেজ
- রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধান