সম্প্রতি, “ব্রেকিং নিউজ। আমেরিকায় হাসিনার শেষ পরিনতি। প্রধানমন্ত্রীর ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাতিসংঘ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি বরং সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির বক্তব্যের একটি ভিডিও ব্যবহার করে কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার এবং এটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে প্রধানমন্ত্রীর ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার দেওয়ার কথা বলা হলেও ভিডিওটির বিস্তারিত অংশে উক্ত তথ্যের ব্যাপারে কোনো কথাই উল্লেখ নেই।
১৪ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির শুরুতে কয়েকটি ভিন্ন ঘটনার ভিডিওর খণ্ডিত অংশ দেখানো হয়। পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটিতে চ্যানেলটির উপস্থাপক দর্শকদের উদ্দেশ্যে দুইটি ভিডিও দেখান।
ভিডিওটি দেখানোর পূর্বে চ্যানেলটির উপস্থাপক বলেন, “আমেরিকায় শেখ হাসিনার শেষ পরিণতি। অবশেষে ক্ষমতার অবসান কী সেইখানেই ঘটবে? নাকি তিনি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য জাতিসঙ্ঘ বা বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে আসবে?…”
ভিডিও যাচাই
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সাবেক সাংসদ গোলাম মাওলা রনির ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পোস্টকৃত একটি ভিডিও খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত ভিডিও বিশ্লেষণ করে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওর সাথে হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

তবে, উক্ত ভিডিওর কোথাও এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার সত্যতা প্রমাণ করে।
এছাড়াও কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবামাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রাসঙ্গিক কী ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, আন্তজার্তিক মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১২জুন “UN Should Enhance Screening of Bangladesh Peacekeepers” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি বিবৃতি খুঁজে পাওয়া যায়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর এই বিবৃতিতে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয় যাচাই বাছাইয়ের আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, জাতিসংঘের উচিত কোনো বাংলাদেশি কর্মকর্তা র্যাবের সঙ্গে জড়িত থাকলে, তা প্রকাশ করা এবং বাহিনী–সংশ্লিষ্ট কাউকে শান্তি রক্ষা মিশনে যোগদানে বিরত রাখা। শুধু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নয়, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সব সদস্যের মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয় যাচাই–বাছাই করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশন বিভাগকে।

পরবর্তীতে উক্ত বিবৃতি নিয়ে দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন প্রথম আলো, যুগান্তর।
পাশাপাশি, জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ৮ জুলাই “জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন ও মানবাধিকার হরণকারীদের নিষিদ্ধের দাবি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের সদস্যপদ স্থগিতে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ, শান্তিরক্ষা মিশনে র্যাবের মানবাধিকার হরণকারীদের নিষিদ্ধ এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ও পরিচালনায় নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস গ্রিনফিল্ডকে চিঠি দিয়েছেন ১৪ কংগ্রেসম্যান।

তাছাড়া, এ বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে ভাষণদান করেন।
মূলত, গত ১৭ সেপ্টেম্বর সাবেক সাংসদ গোলাম মাওলা রনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে পোস্টকৃত একটি ভিডিওতে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দিক নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। তার সেই ফেসবুক ভিডিওকেই পরবর্তীতে কোনোরকম তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই চটকদার থাম্বনেইলের মাধ্যমে জাতিসংঘ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও র্যাব সদস্যদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে নিষিদ্ধ করার মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, জাতিসংঘ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Human Rights Watch: “UN Should Enhance Screening of Bangladesh Peacekeepers
- দৈনিক ইত্তেফাক: “জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন ও মানবাধিকার হরণকারীদের নিষিদ্ধের দাবি
- দ্য ডেইলি ষ্টার: “জাতিসংঘ বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে
- PMO Website: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ ৭৮তম অধিবেশনে ভাষণ দেন