সম্প্রতি,“যারা র্যাবে ছিলেন বা আছেন এবং ভবিষ্যতে যাবেন তারা কেউই আর জাতিসংঘের শান্তি মিশনে যেতে পারবেন না” শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে র্যাবকে নিষিদ্ধ করা হয়নি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র ছাড়াই দাবিটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে র্যাবের ওপর এমন কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে কিনা তা যাচাইয়ে জাতিসংঘের ওয়েবসাইট, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে এই অনুসন্ধানে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এর ওয়েবসাইটে গত ১২ জুন “UN Should Enhance Screening of Bangladesh Peacekeepers” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত বিবৃতি খুঁজে পাওয়া যায়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর এই বিবৃতিতে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকার–সংক্রান্ত বিষয় যাচাই–বাছাইয়ের আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, জাতিসংঘের উচিত কোনো বাংলাদেশি কর্মকর্তা র্যাবের সঙ্গে জড়িত থাকলে, তা প্রকাশ করা এবং বাহিনী–সংশ্লিষ্ট কাউকে শান্তি রক্ষা মিশনে যোগদানে বিরত রাখা। শুধু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নয়, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সব সদস্যের মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয় যাচাই–বাছাই করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশন বিভাগকে।

পরবর্তীতে উক্ত বিবৃতি নিয়ে দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন প্রথম আলো, যুগান্তর, বাংলা ভিশন ও দেশ রুপান্তর।
মূলত, গত ১২ জুন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয় যাচাই বাছাইয়ের আহবান জানায়। র্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের উচিত র্যাবের সঙ্গে জড়িত সদস্যদের শান্তিরক্ষী মিশনে নিষিদ্ধ করা। তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত জাতিসংঘ এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর বিবৃতিতে কেন্দ্র করে কোনপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই র্যাবকে জাতিসংঘে নিষিদ্ধ করা হয়েছে শীর্ষক একটি ভিত্তিহীনভাবে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব ও তার ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পরবর্তীতে গত বছরের জানুয়ারি মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ মোট ১২টি মানবাধিকার সংস্থা র্যাবকে শান্তি মিশন থেকে বাদ দেওয়ার আহবান জানিয়ে চিঠি দেয় জাতিসংঘকে। তবে সেসময় এ বিষয়ে জাতিসংঘের তরফ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
সুতরাং,র্যাবকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Prothomalo: বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিয়োগের আগে যাচাই-বাছাইয়ের আহ্বান
- BBC Bangla: জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে র্যাবকে বাদ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি মানবাধিকার সংস্থার
- BBC Bangla: র্যাব ও তার ছয় কর্মকর্তার ওপর মানবাধিকার লংঘনের দায়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ
- Jugantor: বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিয়োগে যাচাই-বাছাইয়ের আহ্বান
- Bangla Vision: শান্তিরক্ষী নিয়োগে জাতিসংঘকে আরও যাচাই-বাছাইয়ের আহ্বান
- Desh Rupantor: বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিয়োগে যাচাইয়ের আহ্বান
- United Nations Website: https://www.un.org/en/
- Human Rights Watch (HRW): UN Should Enhance Screening of Bangladesh Peacekeepers
- Rumor Scanner Analysis