গত জুলাই মাসের শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া রাজপথের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের আন্দোলনে রুপ নেয়। গণআন্দোলনের মুখে গত ০৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত ০৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এরই পরেক্ষিতে, রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সহ সকল উপদেষ্টাকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন এবং সকল উপদেষ্টাকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনি বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নির্দেশ প্রদান করেছেন দাবিতে একটি আদেশপত্রের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়া, রাষ্ট্রপতির তথাকথিত এই আদেশপত্রে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা, কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিল, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল সমন্বয়কগণকে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল উপদেষ্টাকে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞার কথাও উল্লেখ করা হয়।
উক্ত দাবিতে প্রচারিত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সহ সকল উপদেষ্টাকে অবৈধ ঘোষণা করে সকলকে দ্রুত গ্রেফতার করার বিষয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নির্দেশ প্রদান করেন নি বরং উক্ত বিষয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশ দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত আদেশপত্রটি ভুয়া।
অনুসন্ধানে ‘ব্রিটিশ আওয়ামীলীগ সাপোর্ট টিম’ নামক ফেসবুক গ্রুপে Akas Rahman Farabi নামক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৮ টা ১০ মিনেটে প্রকাশিত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি (আর্কাইভ) পাওয়া যায়।
তথাকথিত আদেশপত্রের ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে প্রকাশের তারিখ গত ২৩ সেপ্টেম্বর তারিখ লক্ষ্য করা যায়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রাষ্ট্রপ্রতির কার্যালয়ের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে এমন কোনো আদেশপত্রের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
এদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার ভোরে বিদেশি একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিউইয়র্কের যানপ্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এবং সফর শেষে গত ২৯ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরেন।
অর্থাৎ গত ২৩ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত রাষ্ট্রপতির তথাকথিত আদেশপত্রের তারিখেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হন। যদি এটি রাষ্ট্রপতির আদেশপত্র পত্র হতো তাহলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিউইয়র্ক সফরে নিরাপত্তাকর্মী দেওয়া হতো না বরং সফরের পূর্বেই তাকে বাধা দেওয়া হত এবং গ্রেপ্তার করা হতো।
এছাড়া, গত ২৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পৌছান। এরপর তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অংশগ্রণের জন্য জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যান। সেখানে বিশ্ব নেতারা ড. ইউনূসকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং ইউনূস বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তব্য প্রদান করেন। তার মানে রাষ্ট্রপতির তথাকথিত আদেশপত্রটি সত্য হলে বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অংশগ্রণের বিষয়টি অকল্পনীয় হত।
পাশাপাশি অন্তর্বর্তকালীন সরকারের প্রায় সকল উপদেষ্টাই (১, ২, ৩) এখন দেশে অবস্থান করছেন। রাষ্ট্রপতির তথাকথিত আদেশপত্রটি সত্য হলে তারা এখন গ্রেফতার হতেন।
এছাড়া, রাষ্ট্রপতির তথাকথিত আদেশপত্রটি সত্য হলে উক্ত আদেশপত্রটি সত্য হলে এ বিষয়েদেশীয় এবং আন্তর্জাতিক কোন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হতো। তবে বিভিন্ন ভাবে অনুসন্ধান করেও আমরা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাইনি।
সুতরাং, অন্তর্বর্তকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের অবৈধ ঘোষণা করে প্রধান উপদেষ্টাসহ সকলকে দ্রুত গ্রেফতার করতে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নির্দেশ প্রদান করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত আদেশপত্রটি বানোয়াট ও ভুয়া।
তথ্যসূত্র
- bangabhaban.gov.bd – Website
- Dhaka Post – ঢাকা থেকে নিউইয়র্কের পথে ড. মুহাম্মদ ইউনূস
- The Daily Star – ছবিতে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ড. ইউনূস
- Prothom Alo – প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস দেশে ফিরেছেন
- Rumor Scanner’s own analysis