গত ০৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে উক্ত নির্বাচনে ২২২ আসনে বিজয়ী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। তবে গত ২৪ জানুয়ারি Sabaj Shikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘রাতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলে অনুমোদন দিলো রাষ্ট্রপতি, সেনাবাহিনীর অধিনে পুনরায় নির্বাচন সিএসসি (সিইসি)’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘রাতেই সেনাবাহিনীর একশন শুরু, তত্ত্বাবধায়ক বিলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
পরবর্তীতে আরও একটি ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়। সেটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Sabai Sikhi ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি’র লিংক শেয়ার করে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথিত বিলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিলই রাষ্ট্রপতির নিকট উত্থাপন করা হয়নি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্তৃক সেনাবাহিনীর অধীনে পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের দাবিটিও সঠিক নয়।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার পুরোনো ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও।
আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত দাবিগুলোর সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়নি। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে কোথাও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলে অনুমোদন কিংবা সিইসি কর্তৃক সেনাবাহিনীর অধীনে পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের বিষয়ে কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও রাষ্ট্রপতি কিংবা সিইসি সম্পর্কিত কোনো ভিডিওটি ক্লিপও দেখা যায়নি। অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম ও থাম্বনেইলে উল্লেখিত তথ্যের সাথে এর বিস্তারিত অংশের অমিল রয়েছে।
অনুসন্ধানের এপর্যায়ে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিও যাচাই- ০১
আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘ইনডিপেনডেন্ট টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ২১ মার্চ ‘ভোটার উপস্থিতির সম্ভাবনা যেহেতু কম, আপনারা ভোট করলে করতে পারেন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ভিডিওটি’র একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত শুরুর দিকের একটি ভিডিও ক্লিপের মিল পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটিতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সচিব ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরকে ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনের উপ-নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
ভিডিও যাচাই- ০২
আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ‘সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কতদূর’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ভিডিওটি’র একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো অধ্যাপক আসিফ নজরুলের বক্তব্যের অংশের মিল পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটিতে ডয়েচে ভেলের সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত টকশোতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলকে নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলতে দেখা যায়।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
মূলত, ০৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত ২৯৮ আসনের ফলাফলে ২২২ টি আসন লাভ করে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। তবে গত ২৪ জানুয়ারি Sabaj Shikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘রাতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলে অনুমোদন দিলো রাষ্ট্রপতি, সেনাবাহিনীর অধিনে পুনরায় নির্বাচন সিএসসি (সিইসি)’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘রাতেই সেনাবাহিনীর একশন শুরু, তত্ত্বাবধায়ক বিলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে, উক্ত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ভিন্ন প্রেক্ষাপটের পুরোনো কয়েকটি ভিডিও’র সাথে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি, সিইসি এবং সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে বিভিন্ন ভুয়া প্রচারের প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথিত বিলে অনুমোদন ও সিইসি কর্তৃক সেনাবাহিনীর অধীনে পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের ঘোষণা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Independent TV YouTube: ভোটার উপস্থিতির সম্ভাবনা যেহেতু কম, আপনারা ভোট করলে করতে পারেন
- DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায় YouTube: সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কতদূর
- DW: নতুন ও অভিজ্ঞদের মিশ্রণে মন্ত্রিসভা গঠন
- Rumor Scanner’s Own Analysis