আবু সাঈদের ফরেনসিক রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসকের নামে ভুয়া তথ্য প্রচার

গত ১৬ জুলাই বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে  বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। সম্প্রতি, আবু সাঈদের ফরেনসিক রিপোর্ট ছয়বার বদলাতে বাধ্য করতে চেয়েছিলেন সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান ও সাজ্জিদরা শীর্ষক দাবিতে একজন চিকিৎসকের বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সমন্বয়করা  আবু সাঈদের ফরেনসিক বা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছয়বার বদলাতে বাধ্য করতে চেয়েছিলেন দাবি করে আবু সাঈদের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করেননি। এছাড়া, মাহফুজুর রহমান এবং সাজ্জিদ নামেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আবু সাঈদের ফরেনসিক বা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বদলাতে প্রশাসনের নিকট থেকে চাপ আসার অভিযোগ সংক্রান্ত চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম এর বক্তব্যের ভিডিও প্রচার করে তাতে আলোচিত ভুয়া দাবিটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে বেসরকারি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম সময় টিভির ইউটিউব অ্যাকাউন্টে গত ৩১ অক্টোবর “শহীদ আবু সাঈদের ফরেনসিক রিপোের্ট ৬বার বদলাতে বাধ্য হয়েছিলেন চিকিৎসক” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটি থেকে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাল্টাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়ার কথা জানান আবু সাঈদের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. রাজিবুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “যখন রিপোর্ট ফাইনালি জমা দিতে যাই তখন আসলে বার বার, ছয় বার পরে তার পরেও শেষ পর্যন্ত মনপুত হয়নাই। ভাইস প্রিন্সিপাল স্যার ওই সময় মাহফুজার রহমান স্যার (রংপুর মেডিকেলের ভাইস প্রিন্সিপাল) চার্জে ছিল, উনি ছিল স্বাচিপের (স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ) নেতারা ছিল। আরও পুলিশ প্রশাসনের লোকজন ছিল। যাদের সামনে আমাকে বাধ্য হয়ে মানে রিপোর্ট দিতে হয়েছে। কিন্তু উনারা চেয়েছিল আমি হেড ইঞ্জুরি দিয়ে যেনো এটা নিউরোজেনিক শক দেখিয়ে দিই।”

তবে পুরো বক্তব্যে তিনি মাহফুজুর রহমান ও সাজ্জিদ নামক কোনো ব্যক্তির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেন নি।

বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে গত ৩১ অক্টোবর “আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ৬ বার বদলাতে হয়েছিল’” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

মাহফুজুর রহমান ও সাজ্জিদ নামক কেউ কি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বক ছিলেন?

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা 

মাহফুজ আলম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক হিসেবে থাকলেও মাহফুজুর রহমান কিংবা সাজ্জিদ নামে কোনো ব্যক্তি জুলাইয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত কমিটিতে ছিলেন না।

সুতরাং, সমন্বয়করা আবু সাঈদের ফরেনসিক বা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছয়বার বদলাতে বাধ্য করতে চেয়েছিলেন বলে আবু সাঈদের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম মন্তব্য করেছেন শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img