আমেরিকার চাপে নির্বাচন বন্ধ হওয়া এবং সিইসির ক্ষমা চাওয়ার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, আমেরিকার চাপে নির্বাচন বন্ধ, ক্ষমা চাইলো সিইসি শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

নির্বাচন বন্ধ

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আমেরিকার চাপে নির্বাচন বন্ধ হয়নি এবং সিইসি  ক্ষমা চায়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই ০১

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় ৮ মিনিট ২ সেকেন্ডের ভিডিওটির শুরুতে VOA Bangla এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের একটি সাক্ষাতকার লক্ষ্য করা যায়। 

Screenshot: Facebook

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া VOA Bangla এর ওয়েবসাইটে গত ১৯ ডিসেম্বর “হাবিবুল আউয়াল: তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কোন মন্তব্য করা এ পর্যায়ে সমীচীন হবে না” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল VOA Bangla এ বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে সাক্ষাতকার দেন।

সাক্ষাতকারের ৮ মিনিট ০৩ সেকেন্ডে উপস্থাপিকা জনাব হাবিবুল আউয়ালকে জিজ্ঞাসা করেন, এবারের নির্বাচনের কেন্দ্র গুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে কিনা। জবাবে তিনি বলেন, “না এবারের নির্বাচনে থাকছে না”।

পরবর্তীতে উপস্থাপিকা সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাইবান্ধায় যখন নির্বাচন হয়েছিলো তখন আমাদের ৫ থেকে ১০ হাজার সিসিটিভি দরকার ছিলো। এখন ২ লক্ষ ৬০ হাজার বুথে নির্বাচন হবে। আমাদের সিসিটিভি ক্যামেরা লাগবে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ। এখন সাড়ে ৩ লক্ষ সিসিটিভি ক্যামেরা মনিটরিং করা আমাদের পক্ষে এই কেন্দ্রে বসে, সম্ভব হবে না। বিষয়টা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছিলাম। তবে বস্তুগত ভাবেই এটা সম্ভব হবে না বলেই আমরা সেই পরিকল্পনাটা পরিত্যাগ করেছি।

উপস্থাপিকা সিসিটিভি ক্যমেরা বাতিলের সিদ্ধান্ত কে নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “এটা আমাদেরই সিদ্ধান্ত”।

ভিডিও যাচাই ০২

আলোচিত ভিডিওতে রাষ্ট্রপতির দেওয়া বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভি এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৮ ডিসেম্বর “সুপ্রিম কোর্ট দিবস অনুষ্ঠানে যে কারণে ক্ষমা চাইলেন রাষ্ট্রপতি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের একটি অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, গত ১৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন সুপ্রিম কোর্টের ইনার কোর্ট ইয়ার্ডে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দেওয়ার শুরুতে বলেন, “আমি রাষ্ট্রপতি হিসেবে কি বক্তব্য দিবো জানিনা। কোথায় কোনো ভুল হয়ে গেলে ক্ষমা করে দিবেন। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী”।

মূলত, গত ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল VOA Bangla এ বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে সাক্ষাতকার দেন। উক্ত সাক্ষাতকারে নির্বাচনের কেন্দ্র গুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে কিনা এমন প্রশবের জবাবে তিনি বলেন, “না এবারের নির্বাচনে থাকছে না”। উপস্থাপিকা নাথাকার কারণ জিজ্ঞাস করলে হাবিবুল আউয়াল বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাড়ে ৩ লক্ষ সিসিটিভি ক্যামেরা প্রয়োজন। এই সাড়ে ৩ লক্ষ মনিটরিং করা আমাদের পক্ষে এই কেন্দ্রে বসে, সম্ভব হবে না। বিষয়টা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছিলাম। তবে বস্তুগত ভাবেই এটা সম্ভব হবে না বলেই আমরা সেই পরিকল্পনাটা পরিত্যাগ করেছি।” এছাড়া গত ১৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন সুপ্রিম কোর্টের ইনার কোর্ট ইয়ার্ডে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দেওয়ার শুরুতে বলেন, “আমি রাষ্ট্রপতি হিসেবে কি বক্তব্য দিবো জানিনা। কোথায় কোনো ভুল হয়ে গেলে ক্ষমা করে দিবেন। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী”। সম্প্রতি এসব প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন উক্ত বক্তব্য সংগ্রহ করে একই ভিডিওতে যুক্ত করে আমেরিকার চাপে নির্বাচন বন্ধ এবং সিইসি ক্ষমা চেয়েছে দাবিতে ভিডিওটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, আমেরিকার চাপে নির্বাচন বন্ধ এবং সিইসি এর ক্ষমা চাওয়ার দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img