সম্প্রতি, গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে মিরপুরে জলাবদ্ধ রাস্তা থেকে উদ্ধারকৃত এক শিশুর ছবি প্রচার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে এই শিশুটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা, মিরপুরে জলাবদ্ধ রাস্তা থেকে উদ্ধার হওয়া ছবির এই শিশুটি মারা যায়নি বরং হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বর্তমানে শিশুটি তার আত্মীর কাছে রয়েছে এবং সুস্থ আছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে কি ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক সমকালে গত ২২ সেপ্টেম্বর “জলাবদ্ধতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মা-বাবা-বোনহারা শিশুটি বেঁচে আছে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শিশু হুসাইন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন স্থানীয় আমিনাসহ কয়েকজন। ২২ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) সকাল ১০টার দিকে পুলিশ শিশু হোসাইনকে আমিনার জিম্মায় হস্তান্তর করে।
একই দিনে অনলাইন সংবাদমাধ্যম জাগোনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে “অলৌকিকভাবে বেঁচে আছে মিরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট শিশু হোসাইন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে এই শিশুর নানার মন্তব্য পাওয়া যায়। নিহত মুক্তার বাবা সানোয়ার শেখ জাগো নিউজকে বলেন, “শিশু হোসাইনকে উদ্ধার করে প্রথমে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাতে সেখানেই তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে চিকিৎসক এসে বলেন, হোসাইন মোটামুটি সুস্থ, তাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন। পরে আমরা তাকে বাসায় নিয়ে এসেছি।”
এছাড়া, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল Rtv এর ইউটিউব চ্যানেলে “বৃহস্পতিবার বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়া সাত মাসের শিশু হুসাইন বেঁচে আছে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
১ মিনিট ২০ সেকেন্ডের সংবাদ ভিডিওতে দেখা যায়, শিশু হুসাইন একজন নারীর কোলে শুয়ে আছে।
এছাড়া, একই বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও শিশুটির বেঁচে থাকার বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন প্রথম আলো, যুগান্তর এবং ইত্তেফাক।
মূলত, গত ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা কমার্স কলেজ সংলগ্ন সড়কে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সেসময় জলাবদ্ধ ঐ সড়ক থেকে আহত অবস্থায় সাত মাস বয়সী হোসাইন নামের এক শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। উক্ত ঘটনা পরবর্তী সময়ে ঐ শিশুর মারা যাওয়ার দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে, অনুসন্ধানে জানা যায়, শিশু হুসাইন মারা যায়নি। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে শিশু হোসাইনকে তার আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শিশুটি বর্তমানে সুস্থ আছে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দিনের বিভিন্ন সময় বৃষ্টির পর সন্ধ্যা থেকে একটানা ৬ ঘন্টা বৃষ্টি হয়। এতে তেজগাঁও, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, বনানী এলাকার সড়ক পানিতে ডুবে যায়।
উল্লেখ্য, একই ঘটনায় ৯ জন মারা যাওয়ার দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তা বিভ্রান্তিকর হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, মিরপুরে জলাবদ্ধ রাস্তা থেকে উদ্ধার হওয়া বিদ্যুৎস্পৃষ্ট সাত মাস বয়সী শিশু হুসাইন মারা যাওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Samakal- জলাবদ্ধতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মা-বাবা-বোনহারা শিশুটি বেঁচে আছে
- Jagonews24- অলৌকিকভাবে বেঁচে আছে মিরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট শিশু হোসাইন
- Desh Rupantor- মিরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট সেই শিশুটি বেঁচে আছে
- Rtv- বৃহস্পতিবার বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়া সাত মাসের শিশু হুসাইন বেঁচে আছে
- Prothomalo- ৭ মাস বয়সেই মা-বাবা ও বোনকে হারাল শিশুটি
- Rumor Scanner’s Own Analysis