সম্প্রতি, “অবৈধ নির্বাচনের দায় হাসিনার,ফাঁস করলো সিইসি ও রাষ্ট্রপতি” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অবৈধ নির্বাচনের দায় শেখ হাসিনার শীর্ষক কোনো মন্তব্য সিইসি ও রাষ্ট্রপতি করেননি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যেখানে দাবিটি প্রসঙ্গে চ্যানেল ২৪ এর একটি ভিডিও প্রতিবেদন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এর ভয়েজ বাংলার একটি সাক্ষাৎকার এর ভিডিও দেখানো হয়।
ভিডিও যাচাই
অনুসন্ধানে শুরুতে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা চ্যানেল ২৪ এর ভিডিও প্রতিবেদনটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২০ ডিসেম্বর “নির্বাচন গ্রহনযোগ্য না হলে একা দায় নেবে না ইসি:সিইসি।CEC।Kazi Habibul Awal। VOA। Channel 24” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের প্রথম কয়েক সেকেন্ডের অংশটুকু আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
উক্ত প্রতিবেদনে ভয়েজ অব আমেরিকায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের বিষয়ে বলা হয়। উক্ত সাক্ষাৎকারে নির্বাচন গ্রহনযোগ্য না হলে একা দায় নেবে না ইসি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো পরবর্তী ভিডিও ক্লিপটিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে দেখানো হয়। উক্ত ভিডিও ক্লিপটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভয়েজ অব আমেরিকা বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ ডিসেম্বর ‘হাবিবুল আউয়াল : তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কোন মন্তব্য করা এ পর্যায়ে সমীচীন হবে না’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির ২৩ মিনিট ২২ সেকেন্ড সময় থেকে পরবর্তী এক মিনিট সময় পর্যন্ত অংশটুকু আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
উক্ত ভিডিওটিতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে ভয়েজ অব আমেরিকা বাংলায় এক সাক্ষাৎকার দেন তিনি। উক্ত সাক্ষাৎকারে তিনি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
অর্থাৎ প্রচারিত ভিডিওটিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার যে ভিডিও ক্লিপগুলো যুক্ত করা হয়েছে সেগুলোতে অবৈধ নির্বাচনের দায় শেখ হাসিনার শীর্ষক কোনো মন্তব্য সিইসি ও রাষ্ট্রপতি করেছেন এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া বিষয়গুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইন্টানেটে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইন্টারনেটে “অবৈধ নির্বাচনের দায় হাসিনার,ফাঁস করলো সিইসি ও রাষ্ট্রপতি” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং,অবৈধ নির্বাচনের দায় শেখ হাসিনার শীর্ষক মন্তব্য সিইসি ও রাষ্ট্রপতি করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।