পাঠ্যবইয়ে ভুল: ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের বিষয়ে পৃথিবীর সকল বিজ্ঞানী কোনো জরিপে অংশ নেননি

বাংলাদেশের পাঠ্যবইগুলোতে ভুলের প্রবণতার বিষয়টি বেশ কয়েক বছর ধরেই সমালোচিত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে একটি তথ্যগত ভুল দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। 

যে ভুল নিয়ে আলোচনা 

মাধ্যমিকের নবম-দশম শ্রেণীর ‘বিজ্ঞান’ পাঠ্যবইয়ের চতুর্থ অধ্যায়ে (১১২ পৃষ্ঠা) “বিবর্তন বা অভিব্যক্তির উপর বিভিন্ন মতবাদ” নামক প্যারায় বলা হয়েছে, “চার্লস ডারউইনকে জৈব বিবর্তনের জনক বলা হলেও তার মতবাদের ওপর এখনো কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে। তার মতবাদের যে বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, তার উত্তরের খোঁজে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে যাচ্ছেন। পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীকে নিয়ে একবার একটা জরিপ নেওয়া হয়েছিল, জরিপের বিষয়বস্তু ছিল, পৃথিবীর নানা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ কোনটি। বিজ্ঞানীরা রায় দিয়ে বলেছিলেন, বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ তত্ত্ব হচ্ছে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব।”

পাঠ্যবইয়ে ভুল
Screenshot source: Class 9-10 Science Text Book 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীকে নিয়ে হওয়া জরিপে বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ তত্ত্ব হিসেবে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব নির্বাচিত হওয়া শীর্ষক পাঠ্যবইয়ের দাবিটি সঠিক নয় বরং ২০১২ সালে মার্কিন ব্লগ সাইট এজ কর্তৃক বিভিন্ন ক্ষেত্র বা পেশার ১৯২ জনের কাছে তাদের সবচেয়ে প্রিয় গভীর, মার্জিত বা চমৎকার ব্যাখ্যা কোনটি হবে সে বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়ার প্রেক্ষিতে একেকজন একেক বিষয়ে মতামত জানান, যার মধ্যে ছয় জন ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য কিছু মতামতেও ডারউইন প্রসঙ্গ এসেছে। এই ঘটনাকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে পাঠ্যবইয়ে। প্রকৃতপক্ষে, এটি কোনো জরিপ ছিল না এবং তার প্রেক্ষিতে কোনো তালিকা বা ফলাফলও প্রকাশ করা হয়নি। 

আলোচিত এই বিষয়টি নিয়ে চলতি বছরের (২০২৩) ফেব্রুয়ারি থেকে অনুসন্ধান শুরু করে রিউমর স্ক্যানার টিম। প্রাথমিক পর্যায়ের অনুসন্ধানে ইউটিউবের একটি চ্যানেলের ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি ভিডিওতে বিবর্তনবাদ বিষয়ে কথা সাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি বক্তব্য খুঁজে পাই আমরা। জাফর ইকবাল তার বক্তব্যে (আর্কাইভ) বলেন (৫০ মিনিট সময় থেকে), “..একবার পৃথিবীর সমস্ত সায়েন্টিস্টরা মিলে একটা জরিপ করলেন, এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে যত সায়েন্টিফিক থিউরী আছে, তার ভিতরে সবচেয়ে ভালো সায়েন্টিফিক থিউরী কোনটি। আমি মনে মনে আশা করেছিলাম, যে পৃথিবীর  সায়েন্টিস্টরা বলবেন, আইনস্টাইনের জেনারেল থিউরী অফ রিলেটিভিটি। কিন্তু দেখা গেল, পৃথিবীর সমস্ত সায়েন্টিস্ট মিলে ঠিক করেছেন, যে ডারউইনর বিবর্তনের যে থিউরী সেটা পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সায়েন্টিফিক থিউরী।”

এখানে, উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বইটির সংযোজন, পরিবর্ধন, পুনর্লিখন ও সম্পাদনা দলে আছেন। এই বইটি সর্বশেষ ২০১৩ সালে সম্পাদনা করা হয়েছিল। বিবর্তন বিষয়ক জরিপের বিষয়ে বইটির দাবি এবং জাফর ইকবালের ২০১৯ সালের বক্তব্যের সাথেও মিল পাওয়া যাচ্ছে। 

পরবর্তীতে ২০১৩ সাল পূর্ব সময়ে এমন কোনো জরিপ হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে ২০১২ সালের ১৭ জানুয়ারি “বিজ্ঞানের ‘সবচেয়ে সুন্দর যে তত্ত্ব’” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিশ্বের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব ‘সবচেয়ে সুন্দর তত্ত্ব’ হিসেবে বিজ্ঞানীদের একটি তালিকায় স্থান পেয়েছে। আর এর পরই রয়েছে আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ। তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদদের মতামতের ভিত্তিতে। বিজ্ঞানীদের তৈরি এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব—‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে দৈবক্রমে’। বিজ্ঞানীদের অনলাইনভিত্তিক সংস্থা এজ ডট ও আর জি-এর সভাপতি জন ব্রকম্যান প্রতিবছরের জানুয়ারি মাসে বিজ্ঞানী, কম্পিউটার-শিল্প ও অনলাইন কমিউনিটির অভিজাত ব্যক্তি এবং বিজ্ঞ পণ্ডিত ও বিদ্বান ব্যক্তিদের কাছে একটি প্রশ্নের উত্তর চেয়ে থাকেন। আগের বছরগুলোতে যেসব প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: ‘ইন্টারনেট কীভাবে আপনার চিন্তার ধরনই বদলে দিচ্ছে?’ ও ‘বিগত দুই হাজার বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার কোনটি?’ তবে চলতি বছর তিনি একটি খোলা প্রশ্ন করেন। সেটি ছিল: ‘আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয় গভীর, মার্জিত বা চমৎকার ব্যাখ্যা কোনটি?’। 

প্রথম আলো লিখেছে, এই প্রশ্নের ওপর প্রায় ২০০ জন বিদ্বান ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে যে তত্ত্বগুলো নির্বাচন করা হয়েছে, তা গত রোববার রাতে প্রকাশ করা হয়। মতামত প্রদানকারীদের মধ্যে রয়েছেন: জোতির্বিদ রয়্যাল মার্টিন, পদার্থবিদ ফ্রিম্যান ডাইসন ও বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডাকিনসের মতো ব্যক্তিরাও। ওই ২০০ জনের মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তিই বিজ্ঞানের সবচেয়ে শক্তিশালী দুটি তত্ত্বের পক্ষে মত দিয়েছেন। তত্ত্ব দুটি হচ্ছে: ডারউইনের বিবর্তনবাদ ও আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ।  

Screenshot source: Prothom Alo 

প্রথম আলো তাদের প্রতিবেদনের সূত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের নাম। 

এই সংবাদটির বিষয়েই বিজ্ঞান পাঠ্য বই বা জাফর ইকবালের বক্তব্যে এসেছে কিনা এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাথে যোগাযোগ করেছিল। 

তিনি আমাদের জানান, এটিই সেই জরিপের সংবাদ। 

কিন্তু বিজ্ঞান বইয়ে বিবর্তন বিষয়ে হওয়া কথিত এই জরিপের ফলাফলে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বকে ‘বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ তত্ত্ব’ হিসেবে দাবি করা হয়েছে। অথচ, প্রথম আলোর সংবাদে এটিকে বলা হচ্ছে, ‘সবচেয়ে সুন্দর তত্ত্ব’।

‘সবচেয়ে সুন্দর’ এবং ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ এই দুইয়ে স্পষ্ট পার্থক্য প্রতীয়মান হলেও ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল রিউমর স্ক্যানারের কাছে দাবি করেছেন, “সায়েন্স ফিল্ডে আমি কোনো পার্থক্য দেখি না। আপনি যেভাবে চান তা ব্যাখ্যা করতে পারেন।”

প্রথম আলোর সূত্র ধরে পরবর্তীতে রয়টার্সের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম।  

Screenshot source: Reuters 

১৬ জানুয়ারি (২০১২) প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের শিরোনামেও ‘বিজ্ঞানের সবচেয়ে সুন্দর তত্ত্ব’ শীর্ষক বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। রয়টার্সের পুরো প্রতিবেদনটি আমরা পড়ে দেখেছি। প্রতিবেদনের কোথাও তালিকার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। স্বাভাবিকভাবেই তালিকার শীর্ষস্থান নিয়েও কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। রয়টার্সের প্রতিবেদনে উক্ত প্রায় ২০০ জনের মতামতকে ‘প্রতিক্রিয়া’ বা ‘রেসপন্স’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, এখানে কোনো জরিপ হয়নি। বিজ্ঞানীসহ একাধিক ক্ষেত্র বা পেশার মানুষের মতামত জানতে চাওয়ার ক্ষেত্রে তারা তাদের মতামত দিয়েছেন। রয়টার্স এমনই কিছু মতামত রেখেছে তাদের প্রতিবেদনে। 

একই বিষয়ে সেসময় অন্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন দ্য গার্ডিয়ান, এনবিসি নিউজ। 

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে এই মতামত প্রকাশের সাইট Edge এ ২০১২ সালে প্রকাশিত আলোচিত বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট পাতা খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot source: Edge

এই পাতা থেকে জানা যাচ্ছে, সে বছর (২০১২) ১৯৪ জনের কাছে একটি বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। বিষয়টি হচ্ছে, “WHAT IS YOUR FAVORITE DEEP, ELEGANT, OR BEAUTIFUL EXPLANATION?” বাংলায় অনুবাদে যা দাঁড়ায়, “‘আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয় গভীর, মার্জিত বা চমৎকার ব্যাখ্যা কোনটি?” 

এই প্রশ্নটি নির্বাচন করেছেন স্টিভেন পিঙ্কার নামে এক ব্যক্তি। ১৯৪ জনের কাছে মতামত চাওয়া হলেও মতামত দিয়েছেন ১৯২ জন। এই ১৯২ জনের নাম উল্লেখ আছে একই পাতায়। আলাদা একটি পাতায় এদের নাম এবং পরিচয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। 

রিউমর স্ক্যানার টিম নামের তালিকাটি বিশ্লেষণ করে দেখেছে, এই তালিকার সকলে বিজ্ঞানী নয়। ১৯২ জনের মধ্যে আমরা ৮৪ জন বিজ্ঞানী পেয়েছি। (বি:দ্র: তালিকায় যেসব ব্যক্তির একাধিক পরিচয় রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী পরিচয় থাকলে সেটি ধরেই হিসেব করা হয়েছে) এদের মধ্যে অবশ্য সকলে বিবর্তন বিষয়ে অভিজ্ঞও নয়। কারণ, এদের মধ্যে কম্পিউটার বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী, পদার্থ বিজ্ঞানী, স্নায়ুবিজ্ঞানীও রয়েছেন। বিজ্ঞানী ছাড়াও তালিকায় ৫২ জন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের নাম পাওয়া গেছে। এছাড়া, একই তালিকায় নাট্যকার/লেখক, অর্থনীতিবিদ, গণিতবিদ, ইতিহাসবিদ, উদ্যোক্তা, আর্টিস্ট, টিভি ডকুমেন্টারি প্রডিউসার, স্থপতি, সম্পাদক, দার্শনিক, নৃতত্ত্ববিদ, সাংবাদিক এবং প্রত্নতত্ত্ববিদের উপস্থিতি রয়েছে। 

১৯২ জনের মতামত এজ এর সাইটে উল্লেখ রয়েছে। রিউমর স্ক্যানার টিম সকলের মতামতই পড়ে দেখেছে। যেহেতু এটি কোনো জরিপ ছিল না, তাই ১৯২ জনের সকলে তাদের নিজস্ব মতামত দিয়েছেন এজ’কে। এই মতামত জানাতে গিয়ে কেউ কবিতা লিখেছেন, কেউ শুধু এক বাক্যেই বলে দিয়েছেন মত, কেউ-বা গণিতের বিষয়ে মতামতে গাণিতিক বিশ্লেষণও দেখিয়েছেন। তবে অধিকাংশই তাদের মতামত দিয়েছেন অনুচ্ছেদ আকারে। 

রিউমর স্ক্যানার টিম মতামতগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১৯২ জনের মধ্যে মাত্র ছয়জন সরাসরি ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বের পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন। এরাসহ অন্যান্য কিছু মতামতেও ডারউইন প্রসঙ্গ এসেছে।  

ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব ছাড়া সবচেয়ে বেশি মতামত এসেছে ওয়াটসন ও ক্রিকের ডিএনএ মডেল (৫), কোয়ান্টামতত্ত্ব (৩), আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব (২) বিষয়ে। এর বাইরে প্রায় সকলেই বিভিন্ন বিষয়েই মতামত জানিয়েছেন। সবাই যে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের বিষয়েই মতামত দিয়েছেন এমনও নয়। কেউ সামাজিক সমস্যা নিয়ে লিখেছেন, কারো ভাবনা এসেছে অর্থনৈতিক নানান বিষয়ে, কেউ কেউ মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে লিখেছেন। 

অর্থাৎ, এজ এর ২০১২ সালের একটি প্রশ্নের উত্তরে ১৯২ জন বিভিন্ন পেশার ব্যক্তি তাদের নিজস্ব মতামত জানিয়েছেন, যেখানে অন্যান্য বিষয় বা তত্ত্বের পাশাপাশি ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বের বিষয়েও মতামত এসেছিল। তবে এটি কোনো অর্থেই জরিপ ছিল না।

রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে তালিকার ১৯২ জন ব্যক্তির মধ্যে একাধিক ব্যক্তির সাথেই যোগাযোগের চেষ্টা করেছে, কথা বলার চেষ্টা করেছে এজ এর সম্পাদকের সাথেও। তবে বিষয়টি প্রায় সাড়ে ১১ বছরের পুরোনো হওয়ায় অনেকেই এ বিষয়টি পুরোপুরি মনে করতে পারছেন না বলে মত দিয়েছেন। তাছাড়া, তালিকায় থাকা একাধিক ব্যক্তি মারাও গিয়েছেন। 

তালিকায় থাকা মার্কিন মনোবিদ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (MIT) এর শিক্ষক শেরি তার্কলের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, “এটি কোনো বৈজ্ঞানিক জরিপ ছিল না। সম্পাদক তার কাছের মানুষদের কাছে মতামত জানতে চেয়েছিলেন।” 

মূলত, নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান পাঠ্য বইয়ে দাবি করা হয়েছে, পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীকে নিয়ে হওয়া জরিপে বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ তত্ত্ব হিসেবে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেখা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। ২০১২ সালে মার্কিন ব্লগ সাইট এজ এর সম্পাদক বিভিন্ন ক্ষেত্র বা পেশায় থাকা তার কাছের ১৯২ জন ব্যক্তির কাছে তাদের সবচেয়ে প্রিয় গভীর, মার্জিত বা চমৎকার ব্যাখ্যা কোনটি হবে সে বিষয়ে মতামত জানতে চেয়েছিলেন। এর প্রেক্ষিতে একেকজন একেক বিষয়ে মতামত জানান, যার মধ্যে ছয় জন সরাসরি ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন। এছাড়া উক্ত ছয় জন ব্যতিত অন্যান্য কিছু ব্যক্তির মতামতেও ডারউইন প্রসঙ্গ এসেছে। উক্ত ঘটনাকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে পাঠ্যবইয়ে। প্রকৃতপক্ষে, এটি কোনো জরিপ ছিল না এবং তার প্রেক্ষিতে কোনো তালিকা বা ফলাফলও প্রকাশ করা হয়নি।

প্রসঙ্গত, পাঠ্যবইয়ে থাকা ভুলের বিষয়ে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, ২০১২ সালে ১৯২ জন ব্যক্তির বিভিন্ন বিষয়ে জানানো মতামতকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীর জরিপে বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ তত্ত্ব হিসেবে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব নির্বাচিত হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান পাঠ্য বইয়ে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img