সম্প্রতি, ‘ভিক্ষুকের মতো ভিক্ষা চাচ্ছি– আমার মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন’ দাবিতে একটি শিশুর কয়েকটি ছবি যুক্ত করে একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
দাবি করা হচ্ছে– শিশুটির নাম সুমাইয়া। বাড়ি সদরদী, ভাংগা ফরিদপুর। মায়ের নাম তাসলিমা বেগম। শিশুটির লিভার ড্যামেজ, হার্ট ছিদ্র এবং লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে। এর জন্য সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে প্রচারিত সবচেয়ে ভাইরাল পোস্টটিতে ২ লাখ ১২ হাজারের ওপরে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ও ১৮০ টি মন্তব্য করেছেন এবং পোস্টটি প্রায় ৬ হাজারবার শেয়ার করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাহায্য চেয়ে প্রচারিত ছবিগুলোতে থাকা শিশুর নাম সুমাইয়া নয় এবং উক্ত তাঁর বাড়ি ফরিদপুর বা মাদারীপুরে নয়। ছবিতে থাকা শিশুটির নাম হামজা ও তাঁর বাড়ি নেত্রকোনা জেলায় এবং সে বর্তমানে সুস্থ আছেন। মূলত প্রতারণার উদ্দেশ্যে ভিন্ন নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে আলোচিত পোস্টগুলো করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে Qari Abu Rayhan নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গত বছরের ১৮ আগস্ট প্রচারিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত পোস্টে থাকা শিশুর ছবির সাথে আলোচিত পোস্টগুলোতে থাকা ছবির শিশুর সাথে মিল রয়েছে।
উক্ত পোস্ট থেকে জানা যায়, অসুস্থ শিশুটির নাম হামজা। বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জে। শিশুটির ফুসফুসের একাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সহযোগিতা চাওয়া হয়।
Abdus Salam Azad নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে একই বছরের ২০ আগস্ট প্রচারিত একটি পোস্টে হামজার বাবার হাতে সহযোগিতার টাকা তুলে দেওয়ার একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত পোস্টে যুক্ত হামজার বাবার নাম্বার পাওয়া যায়। পরবর্তীতে উক্ত নাম্বারে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
হামজার পরিবার থেকে জানানো হয়, ছবিগুলো হামজার। গতবছর হামজা অসুস্থ ছিলো। এখন সে সুস্থ আছে।
পরিবার থেকে আরও জানানো হয়, সম্প্রতি হামজার অসুস্থতার সময়কার ছবি ব্যবহার করে নতুন করে টাকা চাওয়ার বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করবে।
পরবর্তীতে সম্প্রতি প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পোস্টগুলোতে ঠিকানা হিসেবে কোথাও ফরিদপুর এবং কোথাও মাদারীপুর উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া, প্রচারিত পোস্টগুলোতে বিকাশ নাম্বার হিসেবে 01889682596, 01819344855 এবং 01631883903 নাম্বারগুলো উল্লেখ রয়েছে। তবে, এই নাম্বারগুলোর সাথে হামজার পরিবারের কোনো যোগসূত্র নেই।
সুতরাং, আর্থিক সহায়তার নামে প্রতারণার উদ্দেশ্যে ভিন্ন শিশু হামজার ছবি শিশু সুমাইয়া দাবি করে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Qari Abu Rayhan- Facebook Post
- Abdus Salam Azad- Facebook Post
- Hamsa’s Family Statement
- Rumor Scanner’s Own Analysis