লাঠি খেলার ভিডিওটি রংপুরের নয়, ভারতের মণিপুরের

সম্প্রতি, “রংপুর অঞ্চলের ঐতিহ্যেবাহী লাঠিখেলা।কি দক্ষ ছেলে দুইজন” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি রংপুর অঞ্চলের দুইজনের লাঠি খেলার নয় বরং এটি ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মণিপুরের দুইজনের লাঠিখেলার ভিডিও।

অনুসন্ধানে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রঙিন চিত্র নামের একটি ফেসবুক পেজ এ ২০২০ সালের ২৫ আগষ্ট “মণিপুরের এই তরুণ মার্শাল আর্টিস্টরা অসাধারণ! তারা বিশ্ব বিখ্যাত মণিপুরী ঐতিহ্যবাহী মার্শাল আর্ট ‘থাং-টা’ অনুশীলন করছে। (অনুবাদিত)” [আর্কাইভ] শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও (৪৮ সেকেন্ড থেকে) খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওর বিস্তারিত ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, ‘তারা উত্তর-পূর্ব ভারতের বিখ্যাত মণিপুরী ঐতিহ্যবাহী মার্শাল আর্ট ‘থাং-টা’ অনুশীলন করছে। এর শিক্ষকঃ ইনাওবি সাপাম, স্থানঃ চিনারোল মন্দির, মনিপুর।

পাশাপাশি, ভারতের ডিজিটাল মিডিয়া ও পজিটিভ স্টোরিটেলিং সাইট thebetterindia এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ২৭শে মার্চ “মণিপুরের তরুণ মার্শাল আর্টিস্টরা মণিপুরের চেনারোল সিন্দামশাং (মন্দির) এ প্রাচীন মণিপুরী মার্শাল আর্ট ‘থাং-টা’ অনুশীলন করছে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একই ভিডিওটি (৪৮ সেকেন্ড সময় হতে) পাওয়া যায়।

এছাড়াও, OK! North East নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ১৪ মে “ মণিপুর, উত্তর পূর্ব ভারতের সবচেয়ে কঠিন মার্শাল আর্ট শিক্ষক, ইনাওবি সাপাম চিনারোল মন্দিরে (অনুবাদিত)”  শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আলোচিত ভিডিওটি (১.২০ মিনিট সময় হতে) পাওয়া যায়।

একইসাথে, OK! North East এর ভিডিওতে উল্লিখিত ইনাওবি সাপাম এর ফেসবুক প্রোফাইলে আলোচিত ভিডিওর স্থানের মিল পাওয়া যায় এবং একই স্থানে সমজাতীয় খেলার অনেকগুলো ভিডিও পাওয়া যায়।

মূলত, ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মণিপুরের দুইজন ছেলের লাঠি দিয়ে কসরত (যা স্থানীয়ভাবে থাং-টা বলা হয়) ভিডিও বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চলের দুইজন পারদর্শী লাঠিয়ালের লাঠিখেলার ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, থাং-টা একটি প্রাচীন মণিপুরী মার্শাল আর্ট যা মণিপুরের যুদ্ধ পরিবেশ থেকে বিকশিত এবং মেইতেই দ্বারা তৈরি। থাং-টা হুয়েন লালং নামেও পরিচিত ছিল যার অর্থ ‘তরবারি এবং বর্শার শিল্প’।

প্রসঙ্গত, একটা সময় ছিল রংপুরের বিভিন্ন অঞ্চলসহ বাংলার প্রায় প্রতিটা গ্রামেই লাঠিখেলার উৎসব আয়োজিত হত। ঢোল-বাজনার সাথে চলতো লাঠির কসরত। গ্রাম-বাংলার সেই চিরচেনা ঐতিহ্য লাঠিখেলা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে এখনো কোথাও কোথাও খেলাটি কোনোমতে টিকে আছে।

সুতরাং, ভারতের মণিপুর রাজ্যের দুইজন ছেলের লাঠি দিয়ে কসরতের ভিডিও বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চলের দুইজন পারদর্শী লাঠিয়ালের লাঠিখেলার ভিডিও দাবি করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img