রাষ্ট্রপতি ও সিইসির ক্ষমা চাওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে নির্বাচন বন্ধের গুজব   

সম্প্রতি, ক্ষমা চাইলো রাষ্ট্রপতি ও সিইসি, যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে নির্বাচন বন্ধ– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

রাষ্ট্রপতি

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি ও সিইসি ক্ষমা চায়নি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে নির্বাচনও বন্ধ হয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি একটি ভিডিও। এছাড়া, ভিডিওটিতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকেও বক্তব্য দিতে দেখা যায়। 

ভিডিও যাচাই- ১

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে MANCHITRO নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “নির্বাচনের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহে খোদ সিইসির” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

ভিডিওটিতে মঞ্জুরুল আলম পান্না নামের একজনকে বক্তব্য দিতে শোনা যায়। ৬ মিনিট ১১ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে তিনি গণমাধ্যমে প্রচারিত কয়েকটি সংবাদ নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করেছেন। 

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও যাচাই- ২

আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এছাড়া, ভিডিওটিতে বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভি’র লোগো লক্ষ্য করা যায়। 

সেই লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে সময় টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে “সুপ্রীম কোর্ট দিবস অনুষ্ঠানে যে কারণে ক্ষমা চাইলেন রাষ্ট্রপতি!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ১৮ ডিসেম্বর “সুপ্রীম কোর্ট দিবস” অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও এটি। 

Video Comparison: Rumor Scanner

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা খণ্ডিত ভিডিওগুলো মূলত ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার। 

এছাড়া, আলোচিত দাবিগুলো যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ক্ষমা চাইলো রাষ্ট্রপতি ও সিইসি, যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে নির্বাচন বন্ধ’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি। ইতোমধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের প্রতীকও বরাদ্দ দেওয়া  হয়েছে।

সুতরাং, রাষ্ট্রপতি ও সিইসির ক্ষমা চাওয়া এবং  যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে নির্বাচন বন্ধ দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img