তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে ইনকিলাবকে উদ্ধৃত করে ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার

সম্প্রতি,“তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণার সাথে সাথে প্রায় ৭০-৮০ লক্ষ প্রবাসী দেশে আসতে প্রস্তুত” শীর্ষক একটি তথ্য দেশীয় সংবাদমাধ্যম দৈনিক ইনকিলাবের সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইনকিলাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণার সাথে সাথে প্রায় ৭০-৮০ লক্ষ প্রবাসী দেশে আসার বিষয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি বরং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে ইনকিলাবের সূত্রে এ দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

দেশীয় গণমাধ্যম ইনকিলাবের বরাতে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণার পর ৭০-৮০ লক্ষ প্রবাসী দেশে আসতে প্রস্তুত’ শীর্ষক দাবিটি প্রচার করা হয়। ইনকিলাব এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করেছে কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার।

অনুসন্ধানে ইনকিলাবের ওয়েবসাইট এবং অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে আলোচিত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কি-ওয়ার্ড সার্চ করার মাধ্যমে দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে ইনকিলাব ছাড়াও অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমেও আলোচিত দাবিটি নিয়ে প্রকাশিত কোনো সংবাদ খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।

এছাড়াও, গত কয়েকদিনে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। পর্যবেক্ষণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কিত সংবাদগুলিতে আলোচিত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

তবে মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে গত ১৪ আগস্ট ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না, প্রধানমন্ত্রীও পদত্যাগ করবেন না: ওবায়দুল কাদের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

সেখানে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের মেসেজ একটাই। কেয়ারটেকার ইজ নো মোর। নো কেয়ারটেকার।  প্রাইম মিনিস্টার রেজিগনেশন নো। এগুলো পরিবর্তনের সুযোগ নেই।’

পরবর্তীতে গত ২০ আগস্ট মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ‘যুক্তরাষ্ট্র, ভারত বা ইইউ কেউই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বলেনি’ শীর্ষক শিরোনামে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

সেখানে ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেউই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচন কমিশন নিয়ে কথা বলেনি।

তাছাড়া, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সর্ম্পকিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পূর্ণবহাল করা হয়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, দেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যম দৈনিক ইনকিলাব তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণার সাথে সাথে প্রায় ৭০-৮০ লক্ষ প্রবাসী দেশে আসার বিষয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি।

মূলত, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচার হতে দেখা যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণার পর ৭০-৮০ লক্ষ প্রবাসী দেশে আসার বিষয়ে একটি তথ্য দেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যম দৈনিক ইনকিলাবের সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে ইনকিলাব কিংবা অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমে এমন কোনো সংবাদ বা এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

প্রসঙ্গত, গত আট মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ফটোকার্ড ব্যবহার করে অপপ্রচারের বিষয়ে বিস্তারিত ফ্যাক্ট ফাইল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

উল্লেখ্য, পূর্বেও কালবেলাকে সূত্র উল্লেখ করে একই দাবি প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণার সাথে সাথে প্রায় ৭০-৮০ লক্ষ প্রবাসী দেশে আসতে প্রস্তুত’ শীর্ষক তথ্যকে দৈনিক ইনকিলাবের সংবাদ দাবিতে প্রচারের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img